নিউজিল্যান্ডের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবারি ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি ভবনের নিচতলায় গত শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএইউসি) আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ আলোচনা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের ভাষাশহীদদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে করা হয় এ আয়োজন। অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত সদস্য এবং ক্যান্টারবারি ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্বর্ণালী অতসী তিসি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন, যা শ্রোতাদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রশংসা পেয়েছে। এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি বহুসাংস্কৃতিক ও অবিচ্ছেদ্য সমাজ গঠনের। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন বিএসএইউসির সম্মানিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাফি বিশ্বাস।
১৯৫২ সালের ভাষাশহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাতের জন্য বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কর্মসূচির প্রথম অংশে অমর একুশে সম্পর্কে তথ্যবহুল স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসএইউসির সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বক্তব্যে দিনটির ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনার মাধ্যমে বাঙালিদের জীবনে দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, ব্রাসেলস, বেলজিয়ামে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি (সাবেক) মো. মাসুদুল কবির এবং তাঁর স্ত্রী শামসুন নাহার রুবি।
অনুষ্ঠানটিতে বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো মোড়ক উন্মোচন করা হয় শামসুন নাহার রুবির কবিতার বই ‘ফিনিক্স, আমি সেই দীপান্বিতা’।
আলোচনাপর্বের শেষে, বিশেষভাবে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত ছিল দেশাত্মবোধক গান, দলীয় সংগীত, ভাষার গান, একক এবং দ্বৈত সংগীত। সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মো. আওরঙ্গজেবের শ্রুতিমধুর কণ্ঠে গাওয়া, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করলি রে বাঙালি’ গানটি শ্রোতাদের মধ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও গান পরিবেশন এবং কবিতা আবৃতি করেন স্বর্ণালী অতসী তিসি, টোপ্পা, মোনালি আলম, শম্পা পালমা, রাফি বিশ্বাস, ইসফাকুর সিদ্দিকী সৌরভ ও রামিসা আলম। ক্যান্টারবারি ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবু সালাউদ্দিনের দরাজ কণ্ঠে শোভা পায় সৃজন সেন রচিত ‘মাতৃভূমির জন্য’ কবিতাটি।
অনুষ্ঠানটিতে বাংলাভাষী ছাড়াও অন্য ভাষার মানুষ ও অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক অতিথিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের বেশ কয়েকটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমণ্ডিত করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দানি ফারাজী এবং পিটার-এর ফারসি কবিতা আবৃতি, ফিলিপিনো বংশোদ্ভূত ওয়েনেট বালাতবাতের নিজ ভাষায় কবিতা আবৃতি এবং মোহিত সিং থাগুন্না-এর নেপালি ভাষার উপস্থাপন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন রিকারটন হাইস্কুল, ক্রাইস্টচার্চের সম্মানিত শিক্ষিকারা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তাঁরা সংখ্যালঘুদের মাতৃভাষা ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্বের ওপর আলোকপাতের সময় টোঙ্গা এবং কুক দ্বীপের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
শেষে বিএসএইউসির পক্ষে, সংগঠনের সভাপতি ও সিনিয়র প্রভাষক মেসবাহউদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও পরিকল্পনা করার জন্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাফি বিশ্বাসসহ আয়োজক কমিটির সব সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জানান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সব অংশগ্রহণকারী এবং অতিথিবৃন্দ বিএসএইউসি কর্তৃক আয়োজিত রাতের খাবার উপভোগ করেন। বিজ্ঞপ্তি