নীরবতার নারী: বিদায়বেলা লও সালাম
খালেদা জিয়া—
তুমি অনলবর্ষী কোনো বক্তা নও,
তোমার বাগ্মিতায় আকাশভাঙা বজ্রধ্বনি নেই,
দর্শনশাস্ত্রের গুপ্ত বাগানে তুমি হাঁটোনি কখনো—
তুমি না ছিলে চাতুর্যের মায়াবিলাসে
রাজনীতির দাবাবোর্ডের রানি,
না ছিলে সামান্য কোনো কলঙ্কেরও কলঙ্কিনী।
তবু অদ্ভুতভাবে—
তোমার সেই নীরবতা,
সেই অলৌকিক সরলতা,
দেশ বলতে বুকের ভেতর যে নিখাদ ব্যথা কম্পিত হতো,
এসব মিলিয়ে তুমি সহজেই ছুঁয়ে দিতে অগণিত মানুষের
হৃদয়—দল-মত-ধর্মের সব দেয়াল পেরিয়ে।
তোমাকে দেখে মনে হতো—
এক নারী হেঁটে আসছে আমাদের দিকে,
সন্ধ্যার ম্লান আলোয় উদ্ভাসিত মুখ,
আর যাঁর উপস্থিতিই যেন
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
এক ভাবগম্ভীর সম্মোহনী অনুভব। দোষে-গুণে মানুষ—
তুমি ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলে না, ভুল করে ভুল করলেও
শুধরে নিতে জানতে। তুমি ছিলে এক
ক্যারিশমার অপূর্ব আধার—
যার প্রকাশ শব্দ দিয়ে নয়,
স্বপ্নপুরের নিঃশব্দ দৃঢ়তায় গড়া;
যে জাদুমন্ত্র চোখে দেখা যায় না,
কিন্তু বুকের ভেতর অনবরত ঢেউ তোলে
উথালপাতাল।
তুমি ছিলে অনমনীয়—
অটল, দুর্দমনীয়, অবিচল,
গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে—
দেহ-মন সমর্পণ করা প্রথম কাতারের
এক অকুতোভয় সৈনিক।
মানবাধিকারের পক্ষে
যেন এক শীতল অদম্য শিখা,
যা কখনো নিভে যেতে জানে না।
আর দেশের সার্বভৌমত্ব?
তোমার কাছে সেটি ছিল
মায়ের ঋণ,পবিত্র আমানত—
যার জন্য তুমি কখনও মাথা নত করোনি।
প্রতিটি প্রহর, প্রতিটি শ্বাসে
তুমি আগলে রেখেছিলে এই দেশটাকে
যেন নিজের সন্তানের মতো,
নিঃশর্ত, নির্জন, তীব্র ভালোবাসায়।
এতিমের অতি দরদিরা তোমাকে
নিয়ে কত উপহাস করল,
তুমি ধীর, স্থির, নির্বাক, নিরুত্তর।
শুধু একটি হৃদয়গ্রাহী কথা বলেছিলে,
‘আপনাদের খালেদা জিয়া
কোনো অপরাধ করেনি।’
একটি মাত্র শব্দ, ‘আপনাদের’ বলে তুমি দেশবাসীর
কাছে কত আপন হয়ে উঠলে, নিজেই হয়তো টের পাওনি।
তুমি জাদুর এমন মায়াজালে কোটি কোটি প্রাণের অন্তরে
সোনার আসন পাতলে।
বাহ, এই তো তুমি,
এই তো তোমার ক্যারিশমা!
আমরা যারা দূর থেকে দেখেছি—
জেনেছি, তুমি সেই নারী, যার কথার
ফুলঝুরিতে আগুন ছিল না,
যে পাণ্ডিত্যের ভাষায় আলোকপাতও করত না—
সেই তুমি আবার ছিলে
এক নীরব বজ্রপাত, এক অদ্ভুত আলোকমন্ত্র।
স্বচ্ছতায় উজ্জ্বল ছিল তোমার অন্তরের অন্তর,
যাঁর কাছে অগণনীয় মানুষ ভক্তিভরে শ্রদ্ধা
জানায় নিত্য নিরন্তর।