বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুরবস্থা: একটি বিশ্লেষণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির প্রতিবাদে সমাবেশ করেন সংস্কৃতিকর্মীরাছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে দুর্নীতি, ভোট জালিয়াতি ও প্রশাসনিক অপব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো দেশটির সার্বিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ও প্রশাসনের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের বর্তমান দুরবস্থার মূল কারণগুলো বিশ্লেষণের চেষ্টা এবং একটি সমাধান প্রস্তাব থাকবে।

১. ভোট ও প্রশাসনের ভূমিকা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের হুমকি ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগে দুষ্ট। সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকে নাড়া দিয়েছে।

২. রাজনৈতিক ক্ষমতার পারিবারিকীকরণ

বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদগুলো পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। এর ফলে সুশাসনের পরিবর্তে স্বজনপ্রীতি, নৈতিক অবক্ষয় ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৩. বিদেশি কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া সীমিত। কিছু বিদেশি কূটনীতিক ও সংস্থা নৈতিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় বারবার। এ নিষ্ক্রিয়তা সরকারকে আরও বেপরোয়া করে তোলে।

৪. দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অকার্যকারিতা

দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর একটি স্থায়ী সমস্যা। বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি শুধু আর্থিক ক্ষতি করে না, এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে।

৫. সাধারণ জনগণের অসহায়ত্ব

দেশের সাধারণ জনগণ ভোটে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরব হলেও কার্যকর প্রতিকার পাচ্ছে না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে নষ্ট করছে।

৬. কোটা আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা

কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বিশাল নৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। শিক্ষার্থীরা দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ আন্দোলন জাতির সামনে একটি নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।

৭. পরিণাম ও করণীয়

বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে—

-গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন: স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন।

-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

-আন্তর্জাতিক সমর্থন ও নজরদারি: বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা।

-শিক্ষার্থীদের নৈতিক চেতনাকে সমর্থন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে এবং তাঁদের দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুরবস্থার পেছনে বহুমুখী কারণ রয়েছে। এর সমাধানে সুশাসন, গণতন্ত্র ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রতি প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জনগণের শক্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের জন্য একটি উত্তম ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব। এ পথে নারী-পুরুষ সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে।

*লেখক: রহমান মৃধা, সুইডেন

**দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন প্রবাসের পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com