অভিনব বিয়ে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বহু বছর আগে আজব এক বিয়েতে যাওয়ার ভাগ্য আমার হয়েছিল। এক পরিবারের দুই পুত্রের এক সঙ্গে বিয়ে। বরযাত্রী হিসেবে বড় পুত্রের সঙ্গে গিয়েছিলাম আমি। ছবিতে আমাকে বড় পুত্র এবং তার নববধূর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। কন্যার নাম মরিয়ম কিংবা কুলসুম ছিল। কিন্তু বিয়ের কার্ডে লেখা হয়েছিলো চাঁদনি। ঐ সময় শাবনাজ নাঈমের চাঁদনি ছবি মুক্তি পেয়েছে এবং তা সুপার ডুপার হিট! বড় পুত্রের প্রেমের বিয়ে, তাই আহ্লাদ করে কার্ডে ছেপেছে কনের নাম চাঁদনি। এখন বোমা মারলেও নিশ্চয়ই সেই ছেলে বউকে চাঁদনি নামে ডাকতে রাজি হবে না!

ছোট পুত্রের বয়স তখন ছিল ১৮–১৯ আর কনের বয়স ছিল ১০ বছর! ঠিকই পড়েছেন, কনের বয়স ছিল ১০ বছর! আসলে ১০ বছর বয়সের বালিকা ঠিক কতটুকু এই ধারণা আমার ঐ বয়সে ছিল না। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলের বউ দেখে দীর্ঘসময় আমার হতভম্ব ভাব কাটে নি। মেয়েটিকে যখন মা–বাবা ছেলের হাতে তুলে দেয়, ছোট্ট সেই মেয়েটি থরথর করে কাঁপছিল। আমি বহুদিন ঐ দৃশ্য আমার চোখের সামনে থেকে সরাতে পারিনি। মেয়েটি কোনোভাবেই শ্বশুরবাড়ি আসবে না। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ার সুবাদে মেয়ের মা সেদিন মেয়ের সঙ্গে এসে থেকেছিল। পরের দিন সকালে দেখলাম বালিকা বধূ তার বান্ধবীদের সঙ্গে খেলতে গেল। বরপক্ষ সেই খেলতে যাওয়ায় বাধা দেয়নি দেখে আমার ভালো লেগেছিল।

আমি ছোট পুত্রকে এই বিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সে অবলীলায় বলল ছোট মেয়ে বিয়ে করাই ভালো! সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া যায়। আমার বড় বড় চোখ দেখে সে তাড়াতাড়ি বলল, মানে সংসারের দায় দায়িত্ব ছোট থেকেই বুঝতে শিখবে। যে দিন চলে আসব, সে দিন ছোট পুত্র বিশ্রী করে চোখ টিপে বলল, ভাই ছয় মাস পর এসে পরিবর্তন দেখে যাইয়েন। আমি আর কিছু বললাম না। রুচি তে বাধলো! জীবনের মানে একেক জনের কাছে একেক রকম।

বাংলাদেশের বহু মেয়ের মা–বাবা কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের কন্যাদায়গ্রস্ত মনে করে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। এ বড় নির্মম। যদিও এখন সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে যথেষ্ট কঠোর কিন্তু আমার কথা হলো মেয়ের মা–বাবার মন থেকে ওরকম বিশ্রী ধারণা তো কেউ আইন করে দূর করতে পারবেন না। মূলত মানুষকে শিক্ষিত করার কাজটা ভালোভাবে করার দায়িত্ব শুধু সরকারের না। সমাজের অংশ হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে।

**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]