একটুখানি অবসর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার ছুটি লাগবে,
দুটো দিন দাও—
মেরে কেটে আটচল্লিশটা ঘণ্টা,
দেখতে দেখতেই চলে যাবে।
আমার ছুটি লাগবে!
আমি সারা দিন শুয়ে-বসে কাটাব,
সময় নিয়ে গোসল করব,
কোনো তাড়া থাকবে না!
নিজের জন্য রাঁধব—
সবার পছন্দসই করতে গিয়ে
ভুলেই গেছি,
আমারও তো পছন্দ আছে!
না, না, রাঁধবও না,
বাইরে গিয়ে খেয়ে আসব—
রেঁধে সময় কেন অপচয়?
এই দুদিন
বাচ্চার ডায়াপার বদলাব না,
হাতে প্লেট নিয়ে ছোটাছুটি করব না,
একদিন থাক না
অগোছালো পুরো ঘর—
কিচেন, বিছানা, সব!
চুলটা আজ সুন্দর করে বাঁধব,
অনেক মাস-বর্ষ পরে মুখে উপটান দেব,
চোখে কাজল—
একটাই সাজ জানি দেড় যুগ ধরে!
এই ছুটির দিনে সাজব,
মনমতো সাজব—
সেই কৈশোরের মতো,
শাবনূর-মৌসুমীর চেয়েও
সুন্দরী হওয়ার চেষ্টা!
কেউ বলবে না,
কী মেখেছ ছাইপাঁশ!
ছুটিতে আছি আজ,
আমি আমার মতো
আমার রাজ।
এই দুই রাত আমি
সন্ধ্যা হতেই শুয়ে পড়ব,
ঘুমাব আর ঘুমাব—
এত বছরের অপূর্ণ ঘুম
পুষিয়ে নেব।
করতে হবে না, রাত বারোটা অবধি
কারও আসার অপেক্ষা।
একজন কেঁদে বলবে না—
‘মা, দুধু...’
আরেকজন হাতের স্পর্শে
জানতে চাইবে না, ‘ঘুম?’
জেগে উঠতেই প্রার্থনা সেরে
হাতে নেব—
গল্পের বই আর কালো চা...
ডুবে যাব, ভুলে যাব
আশপাশ; হয়ে যাব রুপা
কিংবা মিরা।
ইশ! কেমন দিন ছিল...
শেষ করতাম হুমায়ূন, সুনীল—
দিনে দুই-তিনটা!
নাওয়া নেই, খাওয়া নেই,
শুরু হতো মাথাব্যথা।
দুই দিন, থেমে থেমে
বেজে উঠবে না
মোবাইল অ্যালার্ম...
ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট,
বাচ্চার স্কুলে ছোটাছুটি।
কোনো দুশ্চিন্তা নেই—
সকালের মেনু,
দুপুরের, রাতের মেনু হবে কি?
আজ মাংস, তো কাল মাছ,
পরশু মুরগি!
বাজার শেষ, মনে করে করে
লিস্টটা লেখা,
এরপরও দু-একটা আইটেম
ভুলে যাওয়া।
শুনতে হবে না,
এই আর কেমন কাজ
কেমন ব্যস্ততা?
সারা দিনই তো ঘরের ভেতর
অবসরে থাকা!
ছুটির দরখাস্ত লিখি—
পেশ করব কাকে?
দুই দিন নয়,
দুই ঘণ্টা কি থাকতে পারব
হৃদয়টা দূরে রেখে?

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]