সবুজের সমারোহে ফুল প্রজাপ্রতি
এবার আমাদের মিসিসিপির আবহাওয়া বৃষ্টি, রোদ সব মিলিয়ে প্রকৃতি বুস্টআপ হয়েছে। ফুলে ফুলে ভীতিহীন প্রজাপতি, মৌমাছি ঘুড়ে বেড়ায়। আহ্ হা এমনটাই চেয়েছিলাম। হোক না বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ট্রাম্প সরকার! আমাদের মিসিসিপিতে রিপাবলিকান ক্ষমতায়! তাতে কি? আমি তো আর অ্যাকটিভিস্ট নই যদিও রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুজি।
চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর, বেশির ভাগ আমেরিকানরা ভ্রমণে মনোনিবেশ করে থাকে। ১৯৭৯ থেকে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় জীবন যাপন করে পরিশেষে যুক্তরাষ্ট্রে স্থিত হয়ে আমিও আমেরিকান ধ্যান–ধারণায় জীবনের এক্সটেনশনে সময়টা কাটাচ্ছি। বেশভূষায় মার্কিনী হইনি, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে আমেরিকান বলা যেতে পারে। খাদ্যাবাসে সর্বভূক। যেখানে রাত সেখানেই কাত আরকি।
৫ দশক শিক্ষকতার ফলশ্রুতিতে প্রফেসার এমিরিটাস বানিয়ে দিল আমার বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এতে আর্থিক কিছু নেই, দায় দায়িত্বও কিছু নেই। সন্মানটাই মুখ্য।
মানুষ মাত্রই বসন্তে দুঃখবোধ থাকে। অবাক হলেও সত্যি আমার কোনো দুঃখবোধ নেই। অজপাড়া গাঁয়ের ছেলেটি এসএসসিতে স্ট্যান্ড করে ফেলল। এমএসসি পাস করার আগেই শিক্ষকতার চাকরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়ে গেল। আবার পিএইচডি করার জন্য স্কলার্শিপ-অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেয়ে গেলাম। এমনকি ঢাকা টু কানাডা বিমান ভাড়াও জোগার হয়ে গেল। বাংলায় জৈব রসায়ন টেক্সট বইয়ের স্বত্ব বিক্রি করে দিয়ে টিকিট কিনে নিলাম। সেই থেকে দুটি বিদেশ আমার এবং আমাদের ন্যাচারালাইজড দেশ হয়ে গেল।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
তখন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালে জেনারেল ম্যানেজার। আমার চাকরিজীবনে বড় চাকরি, অর্থের দিক থেকে। ফার্নিশড বাসা সেই সঙ্গে গাড়ি। অবাক হলেও সত্যি, ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতার চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক হয়ে গেলাম। সেই যে এলাম আর পেছনে তাকাইনি। তিন তিনটি মেয়ে চাকরিতে প্রতিষ্ঠিত। এখন আমাদের বিমানের টিকিট কিনে দেয়। অবসর গ্রহণের পর দুই সপ্তাহের জন্য ডিসিতে মেজ মেয়ের ওখানে থেকে এলাম। আবার যাচ্ছি লাসভেগাস–গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। প্রথম আলোর দূর প্রবাসে সেই বিবরণ অচিরেই দেখতে পাবেন।
আবার ফিরে আসি আমাদের এই মিসিসিপির আস্থানায়। আমাদের এই বাড়ি বিশাল অট্টালিকা নয় কিন্তু যেই ভিজিট করতে আসে, তারাই উচ্চসিত প্রশংসায় আমাদের মুগ্ধ করে। আমারা এখনো বাংলাদেশ মাটির গন্ধ নিয়ে সুখেই আছি। তবে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতে মনটা খারাপ থাকে। আমাকে তো বাংলাদেশই তৈরি করেছে। আমি শুধু মানুষের ভালোটাই চাইতে পারি কিন্তু করার ক্ষমতা ততটা নেই।
একবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাকের চেয়ারপারসন হয়েছিলাম। কিন্তু ৬ মাস পরেই ছেড়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস, আমি যদি মানুষের ভালো করতে না পারলাম, ক্ষমতা দিয়ে কী হবে। আমি যদি এক শত টাকা ঘুষ নিই, তাহলে কত রাত আমাকে ঘুমহীন থাকতে হবে!
কেমিস্টিতে আমরা পড়িয়ে থাকি, ফ্রিরেডিক্যাল রিঅ্যাকশনে ইনিশিয়েশন, প্রোগ্রেশন এবং টরমিনেশন—এই ৩টি স্টেপ থাকে। আমাদের জীবনেও তা–ই। টারমিনেশ আসবেই। তাহলে কেন এত দুর্নীতি বাংলাদেশে, কেন এত লোভ লালসা?
আমি রাজনীতি বুজলেও রাজনীতি কখনো করিনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা জামাতে ইসলামী অথবা বর্তমানে আরও নতুন দল—যেই হোক না কেন আপামর মানুষের ভালো করতে না পারলে কী লাভ। টারমিনেশন তো আসবেই।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, প্রকৃতিকে উপভোগ করুন।