শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই

লেখকছবি: লেখকের পাঠানো

কিছু শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের দাবি আমাকে শঙ্কিত করেছে। প্রকৃত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে দেশে যাঁরা পড়বেন, তাঁরা বিভিন্ন কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন, যাঁরা চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবেন, তাঁরাও এই পরীক্ষা পাসের ফাউন্ডেশন নিয়ে পরবর্তী জীবনে পড়াশোনা শেষ করে সফলতার মুখ দেখবেন। যেসব শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা করবেন, অটো পাস তাঁদের সর্বনাশ করবে। ছাত্রছাত্রীরা অনেক কষ্ট করে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এ অন্তর্বর্তী সরকার এনেছেন। তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে তৈরি হতে গেলে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। উচিত অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ন্যায্য অটো পাস রেখে বাকি সবার পরীক্ষা পিছিয়ে সময় দিয়ে হলেও শেষ করা। প্রতিযোগিতার গ্লোবাল ভিলেজ। সময় বা নদীর স্রোত কারও জন্য বসে থাকবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারকে ঋণের বোঝাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম প্রতিকূলতার মাধ্যমে কাজ করে যেতে হচ্ছে। সবকিছুতে মিছিল–ঘেরাও করলে কিছু দাবি হয়তো পূরণ হবে, যেটা সবার দাবি না–ও হতে পারে। কিন্তু মোটাদাগে দেশের উন্নতি হবে কি? এখন একটু ভেবে দেখার সময় চলে এসেছে।

সঠিক শিক্ষা ছাড়া ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। কারণ, এটা মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করার প্রফেশন। অজ্ঞতা একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ দেশে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছি ১৮ বছরের বেশি। প্রতি দুই বছরে অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট কোর্স রিনিউ করা, প্রতি ১০ বছরে বোর্ড সার্টিফিকেশন রিনিউ করা (৭ ঘণ্টার পরীক্ষা) এ ছাড়া ডায়াবেটিসের ওষুধের ওপর কোর্স, স্ট্রোক পেশেন্টের চিকিৎসার কোর্স, হৃদ্‌রোগের ওষুধের কোর্সসহ প্রায় সারা বছর কিছু না কিছু রিনিউ করতে হয়। এত বছরের সাধনা এক বছরে শিখিয়ে ফেলা যাবে? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস কারোই হওয়া উচিত নয়। শিক্ষার কোনো শেষ নেই, তবে প্রতিদিন যে হারে পুরোনো থিওরি বদলে নুতন থিওরি আসছে, ডেক্সকম বা ফ্রি সাইল লিব্রির মতো মেশিন এসে সেন্সরের মাধ্যমে ব্লাড সুগার জানিয়ে দিচ্ছে, রক্তপাত ছাড়াই, সে সময়ে কঠিন পাঁচ বছর, এ দেশে চার বছর ডাক্তারি পড়ে, ট্রেনিং শেষ করে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সাহস করা উচিত। কোয়াকদের হাতে আপনার প্রিয়জন মারা গেলে সে দায় বহন করতে পারবেন তো?

একটা স্থাপনা একজন স্থপতি যদি সঠিকভাবে তৈরি না করতে পারেন, তাহলে আগুন লাগলে জানা যাবে, এস্কেপ রুট নেই, আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও শিক্ষার অভাবে কেউ ব্যবহার করতে পারছেন না এবং ফলাফল আগুনে পুড়ে মূল্যবান জীবন নষ্ট, দেশের অর্থনীতিতে আরও ঋণের বোঝা।

ছাত্রদের কাছে আমাদের অনেক দেনা। তাঁরা কোটা আন্দোলন না করলে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারতাম না একটা উন্নত দেশ হওয়ার, সৎ, সভ্য, সম–অধিকারমূলক দেশ হওয়ার। তবে এখন সময় এসেছে এ সরকারকে সাহায্য করে এবং নিজেরা পড়াশোনার জগতে ফিরে যাওয়ার।

*লেখক: ফারহানা আহমেদ লিসা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

*দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]