জার্মান প্রবাসে মহামিলন

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে ‘ঐতিহাসিক মহামিলন’ অনুষ্ঠানের শুরুছবি: লেখক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর অন্যতম বাণিজ্যিক এবং ব্যাংক নগরী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সাবেক পশ্চিম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট আর পাশের অফেনবাগ শহরেই শুরু হয়েছিল দেশ থেকে আসা প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস। ক্রমেই এই অঞ্চলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আধিক্য বেড়েছে।

এই মুহূর্তে জার্মানিজুড়ে ৩৫ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করলেও, ফ্রাঙ্কফুর্ট আর অফেনবাগ শহরে অতীত ঐতিহ্যের মতো সর্বাধিক বাংলাদেশি বসবাস করেন। আর তাই এই অঞ্চলে প্রবাসী বাঙালিরা গড়ে তুলেছেন নানা রকম সামজিক প্রতিষ্ঠান। বাংলা শেখার স্কুল থেকে শুরু করে রয়েছে নানা ব্যবসা, আঞ্চলিক আর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এই অঞ্চলের প্রায় ২০টির মতো নানা আঞ্চলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গত শনিবার (২৬ জুলাই) আয়োজন করেছিল এক মহতী মিলনমেলা।

আয়োজকেরা তাদের আমন্ত্রণপত্রে লিখেছে, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গ্রীষ্মের আগমনে সব প্রবাসীর একত্রে এক মহামিলন অনুষ্ঠানের সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সব বাঙালির মনে। তাই ২৬ জুলাই ফ্রাঙ্কফুর্টের ওস্ট পার্কে বেলা ১১টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এক ‘ঐতিহাসিক মহামিলন’। মহামিলনের উদ্যোক্তাদের সেই মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছিল।

ফ্রাঙ্কফুর্ট ওস্টপার্কে মেলা প্রাঙ্গণ
ছবি: লেখক

ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের পূর্বাঞ্চলে ৩২ হেক্টর এলাকাজুড়ে অবস্থিত গাছগাছালিতে ভরা ওস্টপার্কে বিশাল সবুজ অঙ্গন আলোকিত হয়েছিল বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা আর বাঙালিদের আনন্দমুখর পদচারণেই। চমৎকার রোদ আর মেঘের আলোছায়াই দেখা গেল, ফ্রাঙ্কফুর্টসহ আশপাশের এমনকি দূরবর্তী শহর থেকে আসা হাজারখানেক বাঙালির বিশাল মেলা। জার্মানিতে আসা প্রথম প্রজন্মের বাঙালিরা ছাড়াও দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিদের আনন্দমুখর উপস্থিতি সবার মধ্যে মহামিলনর সুর এনে দিয়েছিল। জার্মান প্রবাসে এ যেন এক বিরল অনুষ্ঠান।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বসিত ঐতিহাসিক মহামিলন
ছবি: লেখক

মিলনমেলা অনুষ্ঠানের বিশাল অঙ্গনজুড়ে, নানা প্যাভিলিয়ন থেকে পরিবেশিত হচ্ছে চা, কফি, দুপুরের খাবার বিরিয়ানি, পানমসলা, লাচ্চি, মুড়ি চানাচুর আর আইসক্রিম। ছিল বই, শাড়ি ও রূপসজ্জার সামগ্রী। এত মানুষের জন্য এই আয়োজন চাট্টিখানি কথা নয়। পাশাপাশি চলেছে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেদের ফুটবল টুর্নামেন্টসহ নানা খেলাধুলা। বাড়তি পাওনা ছিল সারা সময়জুড়ে চমৎকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূরদূরান্ত থেকে এসেছিল বাঙালি শিল্পীরা। জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয়ে, রাত ১০টা অবধি চলেছিল মনোজ্ঞ সেই অনুষ্ঠান। মাঝে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানের আয়োজকদের। দিনজুড়ে উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘ঐতিহাসিক মহামিলন’ আসলেই সফল হয়েছে। এত মানুষের আয়োজনে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, কারও কোনো অভিযোগ নেই। আগত সবাই মহামিলনের অম্লান অস্বাদ নিয়ে ঘরে ফিরেছিল।