নরওয়েতে সমুদ্রের তলদেশে ৯৪২ ফুট টানেলে ঘোরাঘুরি
নরওয়ের স্টাভাঙ্গার ভ্রমণে দর্শনীয় স্থান দর্শন তালিকায় এইকসুন্দ টানেল দেখার কথা ছিল না। টানেলটি যে পৃথিবীর গভীরতম টানেল, সে বিষয়েও জানা ছিল না। কিন্তু বিষয়টি জানালেন স্টাভাঙ্গার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জায়েদ সম্রাট ও তাঁর পত্নী মুকসেদা হাসান। জানার পরই ইচ্ছা জাগে সমুদ্রের গভীরতম তলদেশ ভ্রমণ করার। নাম এইকসুন্দ।
সমুদ্র তলদেশ থেকে ৯৪২ ফুট নিচ দিয়ে গিয়েছে টানেলটি। সমুদ্রের ৯৪২ ফুট নিচে যাওয়া লোভনীয় ব্যাপার। টানেলটি লম্বায় প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ ফুট। এত দীর্ঘ টানেলের ভেতর দিয়ে গিয়েছি বলে মনে পড়ে না। টানেল দেখার দিনক্ষণ ঠিক হলো। জায়েদ ও মুকসেদা আমাদের সঙ্গে যাবেন। নরওয়ের মূল ভূখণ্ড ও হ্যারিডল্যান্ড দ্বীপের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ৮৪৩ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ন মুদ্রা ব্যয়ে ২০০৮ সালে টানেলটি তৈরি করা হয়। দৈনিক এ টানেল দিয়ে প্রায় তিন হাজার ভেহিক্যাল যাতায়াত করে।
জায়েদ জানালেন আমরা যাব ইউরোপালান্ড নামক জায়গায়। সেটি আরেক প্রদেশ। যাওয়া–আসার সময় লাগবে বলে পুরো দিনটাই হাতে রাখা হলো। আমাদের যেতে হবে স্টাভাঙ্গার থেকে। স্টেশনসংলগ্ন বাসস্টেশন থেকে বাস যায়। সান্ডন্যাস নামক স্থানে আমরা যে হোটেলে ছিলাম, সেখান থেকে স্টাভাঙ্গারের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার, ট্রেনে যেতে সময় নেয় ১৬ মিনিট। বাস দিয়েও যাওয়া যায়, যেতে একটু সময় নেয়, তবে হোটেল বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস একেবারে জায়েদদের বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের দোরগোড়ায় নামিয়ে দেয়। উন্নত আধুনিক হোস্টেল ওদের, মোটামুটি সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। ঠিক হলো আমরা ট্রেনে যাব। কারণ, ট্রেনপথটি গিয়েছে সমুদ্রের ধার দিয়ে। সবাই দেখা করব স্টাভাঙ্গার স্টেশনে।
নির্ধারিত দিনে আমরা রেলপথে স্টাভাঙ্গার স্টেশনে চলে এলাম। জায়েদ ও মুকসেদার সঙ্গে দেখা হলো। জায়েদ ইউরোপাল্যান্ডে যাওয়ার টিকিট নিয়ে এলেন। আমরা বাসে উঠে বসলাম। বাসগুলো ট্যুরিস্ট বাসের মতো বিলাসবহুল। জায়েদ মুকসেদা আগেও গিয়েছেন আর আমাদের প্রথম বলেই উত্তেজনা ও আগ্রহ বেশি। বাস এপথ–ওপথ পেরিয়ে টানেলে প্রবেশ করে। দীর্ঘ পথ। টানেলের ভেতর মাঝে মাঝেই যানবাহন পার্কিংয়ের জায়গা। কোনো যান নষ্ট হলে বা গোলযোগ দেখা দিলে পার্কিংয়ে অপেক্ষা করার সুযোগ ও পাশের বুথ থেকে টেলিফোন করার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা যে ধীরে ধীরে সমুদ্রের তলদেশে চলে যাচ্ছি, বাসে বসে বোঝা যায় না। তবে বাতাসের চাপ হেতু চট করে চোখ লেগে আসে। এটাই বিপদ। চোখ লেগে যাওয়ার মুহূর্তে ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ পথের চালকেরা হয়তো আরও দক্ষ ও অভ্যস্ত।
একটি স্থানে কিছুটা পথ নীল আলোয় উদ্ভাসিত। মনে হয় স্থানটিই সাগরতলের গভীরতম পয়েন্ট। আমাদের বাস এগিয়ে যায়। পথ শেষ না হলেও একসময় সাড়ে ২৫ হাজার ফুট পথের টানেল পাড়ি দিয়ে বাস বিশ্রামস্থলে এসে দাঁড়ায়। সমুদ্রের ধারে বিশাল জায়গা নিয়ে বিশ্রামস্থল। জায়েদ জানালেন আমরা এখানে না নেমে আরও একটু এগিয়ে যাব। সামনে এক জলপ্রপাত, সেটিও দেখব। রাস্তার ধারেই জলপ্রপাত। উঁচু পাহাড় থেকে সশব্দে জল গভীর নদীতে নেমে যাচ্ছে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ইউরোপাল্যান্ডে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার রওনা হলাম একই পথে টানেলের ভেতর দিয়ে স্টাভাঙ্গারে ফেরার। ফেরার পথে টানেল প্রবেশমুখে সমুদ্রের ধারে বিশ্রামস্থলে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমাদের বাস গভীর সমুদ্রের তলদেশে নেমে এল।