দূরের তুরস্ক, কাছের তুরস্ক–৩

ছবি: লেখক

৫.

আজ শনিবার। ১ জুলাই, ২০২৩। ভোর চারটায় ঘুম ভাঙল। আমি আর স্ত্রী ফজরের নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম। উঠলাম সাড়ে সাতটায়। বউ-ছেলেকে ডাকলাম। নাশতা খেয়ে বেরুতে যাব, অমনি দেখি রিসিপশনের লোক দরজার সামনে। আমাদের ডাকতে এসেছে। বাস অপেক্ষা করছে। দৌড়ে গিয়ে বাস ধরলাম। বাসের প্রথম যাত্রী আমরা। আরও তিন–চারটা হোটেল থেকে যাত্রী তুলল।

তারপর ২০–২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম নদীর ঘাটে। যেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বিশাল নৌকা। সাইজে আমাদের দেশের লঞ্চের মতো। তিনতলা। শ দুয়েক লোক যেতে পারবে স্বাচ্ছন্দ্যে। দেখতে পুরোনো দিনের জাহাজের মতো। যেসব জাহাজে বাণিজ্য করত পর্তুগিজ, রোমানরা। খুব সুন্দর তরি। ক্লাসিক্যাল ফরমেটে বানানো। তরিতে উঠলাম। মনের মধ্যে উত্তেজনা এবং একটু ভয়ও। ভয় এ জন্য—তরি যাবে সমুদ্র দিয়ে।

স্ত্রীর সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রের ঢেউ বড়। ঢেউয়ের দুলাদুলিতে অনেক সময় অনেকের বমি হয়, শরীর খারাপ হয়ে যায়। বউয়ের মধ্যে সে নিয়ে টেনশন কাজ করছে। ছেলে বাস চড়ার কারণে অসুস্থ বোধ করছে। ছেলেকে বললাম, নৌকার লম্বা বেঞ্চে শুয়ে থাক।

নৌকার ভেতরটা বেশ খোলামেলা। স্টাফরাও আন্তরিক। নৌকার দ্বিতীয় তলায় ক্যাফে। সেখানে মদও পাওয়া যায়। আসলে তুরস্ক মুসলিম দেশ হলেও, পর্যটকদের বেশির ভাগই ইউরোপের লোক, যাঁদের মদ ছাড়া চলে না। নৌকার একমাত্র এশিয়ান লোক মনে হলো আমরা।

নদীর নাম মানবঘাট। শহরের নাম একই। যে শহর থেকে আমরা রওয়ানা দিয়েছি। কিছুক্ষণ চলার পর, নৌকা গিয়ে সমুদ্রে পড়বে। নৌকা এগিয়ে চলছে। চারদিকে খুব সুন্দর-সুন্দর স্থাপনা। মানুষ বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। কোথাও কোথাও নদীর পাড়ে, মাছ চাষের আয়োজন। সংগীতের মূর্ছনায় এগিয়ে চলছে নৌকা। এটাকে নৌকা না বলে ছোটখাটো জাহাজও বলা চলে।

পাশ দিয়ে বাহারি রঙের নৌকা অতিক্রম করে যায়। কোনো কোনোটিতে তুরস্কের তারা সম্মলিত লাল পতাকা উড়ছে। বাতাস ধুয়ে নিচ্ছে আমাদের চুল। চোখে শুধু ভাসছিল আমাদের ফেলে আসা নদী। সুরমা। লঞ্চযুগে, কত বিকেলে, নদীর সঙ্গে করেছি মিতালি, দেখেছি দূরের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, হেঁটে যাওয়া মানুষ। এই নদী আর সেই নদীর মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বুকে সবারই তরঙ্গ, ছলছল , জলের মৌনতা, শুদ্ধতা। নদী দেখেদেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, আহা নদী!

নদী পেরিয়ে সমুদ্রে এলাম। আমাদের ভয় কেটে গেল। না, সেখানে জলের গর্জন তীব্র নয়। দুলে ওঠা শৈল্পিক। আমরা আনন্দিত হলাম কিন্তু ছেলে অনুভব, তার কেন যেন মন খারাপ। সারাক্ষণ বসে মোবাইল টিপছে। তাকে যতই প্রকৃতির দিকে ডাকি, সে ততই ঢুকে পড়ে যন্ত্রে। এ যুগের কিশোর যতটা ডিজিটাল, ততটা প্রকৃতিময় নয়। তাকে খুশি রাখার জন্য এটাসেটা বলি। বলি, চকলেট খাবি?
না।

কফি।

না।

একসময় এই আমরা, নৌকা সফর বাদ দিতে চেয়েছিলাম, ঢেউয়ের ভয়ে। অথচ এই ছেলেই আমাদের বলল না গেলে তো অগ্রিম দেওয়া পাউন্ড ফেরত পাবা না।
সমস্যা নেই, মাত্র তো ১০ পাউন্ড।

না চলো, যাই।

আর এখন কি না সে মন খারাপ করে বসে আছে। সমুদ্রে কিছুক্ষণ চলার পর, নৌকা এক জায়গায় এসে থামল। ব্যাপার কী!

ছেলের সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

একজন বলল, এখন গোসলের বিরতি। নৌকার পেছনে গিয়ে দেখি, সাদা অর্ধনগ্ন মানুষেরা, লাইফ জ্যাকেট পরে, ঝাম্প দিচ্ছে জলে। জল থেকে ওঠার সুন্দর সিঁড়ি, রশি পাকানো। এটা দেখে ছেলের মেজাজ আরও গরম।

তোমাকে বলছিলাম না, সুইমিং কাস্ট আনতে, আননি কেন? এখন আমি কীভাবে গোসল করব?

ছেলের মা নরম হয়ে বলল, ভুল হয়ে গেছে বাবা।  

সে মেজাজ গরম করে নিচতলার লম্বা বেঞ্চে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ছেলের মাকে বললাম, ওকে আর তেল দিতে যাইও না, আরও অ্যাকশন দেখাবে, টেক ইট ইজি।

আমরা মানুষের সাঁতার দেখতে লাগলাম। উচ্ছ্বাস। দূরে সমুদ্রসৈকত দেখা যায়। ছাতা বিছানো। হঠাৎ খেয়াল করলাম, আরে, এই সমুদ্রসৈকত তো আমাদের চেনা। তার পেছনেই তো আমাদের হোটেল। ছেলেকে গিয়ে বললাম, অনু দেখ, ওইদিকেই আমাদের হোটেল না?

সে গভীর দৃষ্টি ফেলে দূরের সৈকত দেখল। তারপর খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ, তাই তো বাবা।
গোসল শেষ হবার পর শুরু হলো দুপুরের খাবার বিতরণ। প্যাকেজের সঙ্গে খাবার সংযুক্ত ছিল। আমাদের তিনজনের ছিল ৫০ পাউন্ড। বেশ ভালো অফার। আমরা তিনজন খেতে বসলাম। খাবার সিম্পল। টার্কিশ রাইস, গ্রিল চিকেন, সালাদ আর দুই টুকরো বনরুটি।

খাবারের পর দেখি, স্পিডবোটে নতুন লোক এসে উঠছে নৌকায়, কেউকেউ নৌকা থেকে নামছে। ছেলে বলল, চলো নেমে পড়ি।

আমি বললাম, নামা ঠিক হবে না । খুব ছোট স্পিডবোট, লাইফ জ্যাকেট ছাড়া লোকজন উঠানামা করছে, এখানে ঝুঁকি আছে।

ছেলের আবার মেজাজ খারাপ। সে বলল, ওরা বলেছিল বেলা একটায় ভ্রমণ শেষ হয়ে যাবে, অথচ এখন বাজে দেড়টা, আবার ঘাটে ফিরতে লাগবে দুই ঘণ্টা।

ছেলের আপসেট অবস্থা দেখে রাজি হয়ে গেলাম। স্পিডবোটে নেমে যাওয়ায়। নৌকার নেতা টাইপের একজনকে গিয়ে বললাম, আমরা নেমে যেতে চাই, স্পিডবোট পাওয়া যাবে?

সে বিনয়ের সাথে উত্তর দিল, দুঃখিত, স্পিডবোট আর আসবে না, আমাদের নৌকা এখনই চলতে শুরু করবে।

ছেলে হতাশ। মন খারাপ করে মোবাইল টিপাটিপি করে। হঠাৎ একজন এসে বলল, তোমরা যে টিয়া পাখি নিয়ে ছবি তুলেছিলে, সেটা কম্পিউটারে একটু দেখাতে চাই, পছন্দ হলে প্রিন্ট দিয়ে দেব। এটা নৌকাওয়ালাদের একটা ব্যবসা। বড় একটা টিয়া পাখি এনে পর্যটকদের ঘাড়ে বসিয়ে ছবি তুলে, ক্যাপ্টেনের হাতলে নিয়ে, ছবি তুলে পয়সা কামায়।

ছবিওয়ালাকে বললাম, নিচতলায় আমার ছেলে আছে, তাকে দেখাও, সে সিদ্ধান্ত দেবে।
আমি আর আমার বউ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি ধারণ করতে থাকলাম। মিনিট পাঁচেক পর ছবিওয়ালা দৌড়ে এলো, স্যার, আপনার ছেলে অসুস্থ, তাড়াতাড়ি নিচে যান।

দৌড় দিলাম। বউ পিছে ডাকতে লাগল, কই যাও?

সে ছবিওয়ালার ইংরেজি বুঝতে পারেনি। নিচতলায় এসে দেখি, সে বেঞ্চে শুয়ে মোবাইল টিপছে। বুঝলাম- সিরিয়াস কিছু না। তাকে এসে বললাম, নতুন একটা খবর আছে।

কী?

নৌকাওয়ালারা বলেছে, একটু পরেই একটা স্পিডবোট আসবে। শেষ স্পিডবোট। আমাদের পাড়ে নামিয়ে দেবে। তাড়াতাড়ি রেডি হ।

ছেলে লাফিয়ে উঠল। ছেলে ও ছেলের মা জুতা-টুতা খুলে রেডি। আমাদের সঙ্গে যাবে আরেকটা পরিবার। এই ছোট স্পিডবোর্ড দিয়ে কীভাবে যাব? যদি সমুদে ডুবে যায়, ছেলে সাঁতার জানে নামমাত্র!

বউ বলল, এত মানুষ এই ছোট ডিঙ্গি দিয়ে যাওয়া কী ঠিক হবে?

সেটা তো আমিও ভাবছি।

কিন্তু ছেলের মনে কোনো ভয় নেই, সে পারলে উড়াল দিয়ে যেতে চায়। মাথার ওপর বড়-বড় বেলুনে মানুষ উড়ছে। সমুদ্রের ওপর। সেই বেলুনগুলোকে টেনে নিচ্ছে স্পিডবোট। সে গুলোতেও উঠতে চায় ছেলে। আমাকে যুক্তি দিয়ে বলল, ইউরোপে ১৮ বছর না হলে এইসব বেলুনে ওঠা যায় না কিন্তু তুরস্ক এলাউ করে। সুযোগটা নিয়ে নিই বাবা।

প্রসঙ্গত বলে নেই, তার বয়স মাত্র ১৬। ১৬ হয়ে ১৮–তে জাম্প দিতে চায়। তবে সে এটাও জানে, তার বাবা এসব নিয়ম বহির্ভূত কাজকে প্রশ্রয় দেয়া লোক না।

আমরা স্পিডবোটের জন্য ভয়েভয়ে অপেক্ষা করছি। হঠাৎ নৌকাওয়ালাদের একজন এসে বলল, আমরা খুবই দুঃখিত, স্পিডবোট আসবে না ।

কেন! কেন!
কোসটগার্ড স্পিডবোট আটকে দিয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যু।

ছেলের আবার মন খারাপ। আমি খুশি। বউ কানের কাছে মুখ এনে বলল, আল্লাহ হয়তো আমাদের মঙ্গলের জন্যই এটা করেছেন।
নিশ্চয়।

নৌকা চলতে শুরু করেছে। ছেলে শুয়ে আছে নিচে। আমি তাকে খুশি করার জন্য বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলি, তা তোর ব্যবসার খবর কী? ব্র্যান্ডের জিনিসের কয়টা অফার পেলি? তোর বন্ধুরা কত অগ্রিম দিল?

সে বেরসিকের মতো, কাটকাট জবাব দিতে লাগল। হঠাৎ স্ত্রী ওপরের তলা থেকে নিচে নেমে এলো, তাড়াতাড়ি আসো, ওপরে মিউজিক প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে।

চল যাই।

ছেলে যাবে না। আমি আর আমার বউ ওপরে উঠে এলাম। দেখি গরম প্রোগ্রাম। সংগীতের তালেতালে সবাই নাচছে। সমুদ্রের জল কেটেকেটে ছুটছে নৌকা। বাতাস উড়িয়ে নিচ্ছে চুল। দৃশ্য অন্য রকম। বউ বলল, এই, ভিডিও করো, তোমার ইউটিউব চ্যানেলে (দেশ বিদেশ টিভি) কাজে লাগবে।

ভিডিও করতে লাগলাম। নেচে বাচ্চারাও খুব মজা পাচ্ছে। হঠাৎ নৌকার টপ ফ্লোর থেকে, পাইপের মাধ্যমে ফেনা ছাড়া হলো, সবাই নাচতে নাচতে ফেনা মাখল শরীরে। আহা কী আনন্দ। মনে মনে ভাবি, খদ্দরদের মনরঞ্জনে কত প্রচেষ্টা। হঠাৎ তৃষ্ণা পেল। ছোট এক বোতল পানি কিনলাম। ২৫ লিরায়। প্রায় ৮০ টাকা। ডাকাতি আর কী।

নাচ, গান শেষ হলে, নৌকা এসে ভিড়ল নদী ও সাগরের মোহনায়। সেখানে বালুকাময় একখণ্ড দ্বীপ। নৌকাওয়ালারা ঘোষণা দিল, নৌকা আধা ঘণ্টার জন্য এখানে থামবে। কেউ চাইলে সেই দ্বীপে নামতে পারেন। নৌকা ভিড়ল। নিচতলায় ছেলেকে গিয়ে বললাম, নামবি না কি?

নামা যায়।

আমরা তিনজন বালুর দ্বীপে নামলাম। সেখানে টংদোকানের মত খাবার দোকান আছে। আছে লাফিয়ে গোসল করার বাবস্থা। একটু হাঁটতেই দেখি, দ্বীপের একপাশে কয়েকটা উট। সুন্দর সাজে সাজানো। মালিকেরা রশি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

কী অনুভব, উঠবি নাকি?
ছেলে এখন খুশি, উঠব বাবা।
উটওয়ালা ভালো ইংরেজি জানে না। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সে আমাদের বোঝাল, ২০ মিনিট চড়লে ১০ ইউরো দিতে হবে।

আমাদের কাছে ইউরো নাই। লিরা আছে।
৩০০ লিরা লাগবে।
২৫০ লিরা দিব।

উটওয়ালা রাজি হলো। ছেলে জীবনের প্রথম উট চড়বে। তার মধ্যে মৃদু উত্তেজনা। দুজনে ধরে, ছেলেকে উটের পিঠে উঠাল। উঠের উচ্চতা অনেক। উট চলতে শুরু করল। ছেলের মুখে রাজা-রাজা ভাব। একটু চলেই ফিরে এলো উট। ব্যাপার কী! ২০ মিনিটের চুক্তি। ৫ মিনিট যেতে না যেতেই ফিরে আসা!

ছেলে উটের পিট থেকে নেমে বলল, এরা ইংরেজি বোঝে না। এটা নিয়ে আর কথা বলার দরকার নেই। উট চড়ে আমরা আবার নৌকার দিকে ছুটলাম। আমার আর আমার বউয়ের স্যান্ডেল বালুতে ভরপুর। এই বালুময় পা নিয়ে ঝকঝকে নৌকায় উঠব? নৌকা নোংরা হয়ে যাবে না ?

নৌকার কাছে পৌঁছলাম। অবাক হলাম নৌকাওয়ালাদের সেবা দেখে। তারা কাস্টমারদের পা ধুয়ার জন্য পানি এনে দিচ্ছে। এতএত যাত্রীর জন্য পানি!

নৌকা ছেড়ে দিল। ছাড়তে না ছাড়তেই দৌড়ে এলো দুই অর্ধনগ্ন নারী। ভেঁপু কয়েকবার বাজানোর পরও তারা নৌকায় উঠে আসেনি। এখন এসেছে। জাহাজ আকৃতির নৌকা পাড়ে ভেড়ানো বেশ সময় সাপেক্ষ। নোঙ্গর করতে হয়, বড়বড় রশি দিয়ে আটকাতে হয়। এই দুইজনের জন্য কষ্টসাধ্য এই কাজটা তারা করল হেসেই। আহা সার্ভিস। আমাদের দেশের কথা মনে পড়ে।

নৌকা আবার ছাড়ল। এখন আমরা যাচ্ছি নদী দিয়ে। সেই আগের নদী। আগের নদীর স্থাপনা। ভালো লাগছে। বাতাস খেতে খেতে ফিরছি। গাছ দেখে, হাঁস দেখে, নদী পাড়ে বসে কফি খাওয়া মানুষ দেখে। বিকেল সাড়ে চারটায় নৌকা এসে ঘাটে ভিড়ল। সবাই নেমে গেল দ্রুত। আমাদের জন্য বাস অপেক্ষা করছে। এখন আমরা যে বাসটিতে উঠে বসেছি, তার কোনটিতেই জানালা নেই। খোলা। পর্যটন বাস। বাস চলতে শুরু করেছে। এক জায়গায় একটু জ্যামও পেলাম। ছেলে বলল, বাবা, এ তো দেখছি ঢাকা।

আসলেই তো!

মিনিট ৪০ পর আমাদেরকে বাসওয়ালা হোটেলে পৌঁছে দিল। আমাদের হোটেলটা বেশ পরিচিত। ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেও চেনে। বাস থেকে নেমে রিসোর্টে ঢুকব কিন্তু না। বউ-ছেলে বলল, তারা এখন শপিং করবে।

আগে রুমে চলো। গোসল, খাওয়া দাওয়া সেরে, ফ্রেশ হয়ে আসি।

না, তারা এখনি করবে। ভাবলাম, ছেলেটা আজ অনেক মন খারাপ করেছে। তার এই ইচ্ছাটা না হয় পূরণ করি। তাকে বললাম, কী কিনবি?

বন্ধুদের জন্য কিছু গিফট। আমাকে কিছু ইউরো দিতে পারবা?
আমার কাছে তো ইউরো নাই। সমস্যা নেই। তোরা জিনিস বাছাই কর, আমি ক্যাশ পয়েন্ট থেকে ইউরো নিয়ে আসছি।

ছেলের মুখে হাসি ফুটল। আমি ক্লান্ত শরীর টেনেটেনে, এই রোদের মধ্যেও হাঁটতে লাগলাম। ক্যাশ মেশিন বেশ দূর। আর তারা যে দোকান থেকে সস্তায় জিনিস কিনবে, সে দোকান আবার কার্ড নেয় না। কী আর করা। হাঁটতে হাঁটতে তৃষ্ণা পেল। পথে আইসক্রিম নিলাম একটা। তারপর ক্যাশ মেশিনে কার্ড ঢুকালাম। কিন্তু কম্পিউটারের ভাষা বুঝতে পারছি না।

সম্ভবত টার্কিশ ভাষা। কার্ড বের করে পাশের অন্য ক্যাশ মেশিনে গেলাম। সেখানে ইংরেজি অপশন এলো। ইউরো তুলতে পারলাম। দোকানে এসে ছেলে ও ছেলের মা এক গাদা জিনিস দিল। এসব নেয়া যাবে?

নাও।
বাবাকে এত উদার দেখে ছেলের কালো মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। খুশি হয়ে বলল, বাবা, তোমার জন্যও আজ একটা বেল্ট কিনি?

কিন।  

বাজার শেষ রুমে ফিরলাম। গোসল, নামাজ, খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুম। ঘুম থেকে উঠে নিজেই কফি বানালাম একটা। কফি খেতে খেতে এই ভ্রমণকাহিনি লিখছি। এখন রাত সোয়া এগারোটা। ঘুমুতে ঘুমুতে নিশ্চয় একটা বাজবে। বাজুক। বেড়াতে এসেছি। অফিস নেই, স্কুল নেই। দেরি করলে কী এমন ক্ষতি। চলুক। চলবে...

**দূর পরবাসে লেখা পাঠাতে পারবেন আপনিও। ঠিকানা [email protected]