তোমাকে দেখতে

প্রতীকী ছবি

সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির আঙিনায় দড়ির খাটে শুয়ে বিশাল স্নিগ্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক বছর কেটেছে। তখন আশির দশক, ছেলেবেলা। গ্রামে সে কী সুন্দর মুক্ত পরিবেশ, আর নির্মল বাতাস!

তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে এক এক করে তারার সংখ্যা গণনা করার ব্যর্থ চেষ্টা। মা-বাবা পাশে বসে থাকতেন। নিজেদের মাঝে কত কত কথা আর কতই না মজার সেসব স্মৃতি। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে কীই না সেসব আনন্দ!

দূর সেই আকাশটায় বাড়ির ওপর দিয়ে মিটিমিটি আলো জ্বেলে প্লেনের ছুটে চলা দেখতে ভালো লাগত। কাছে থেকে প্লেন তখন দেখা হয়নি। অবশ্যই না। টিভিতেও সেটা দেখা হয়নি—সে সময় বাড়িতে টিভি ছিল না বলে।

তবে রাতের শান্ত ঘুমে আকাশে নিজেই উড়তে পারার স্বপ্ন বহুবার দেখেছি। ঠিক যেভাবে প্লেন আকাশে ওড়ে। সাঁতার কাটার মতো করে দেহটা ওপরের দিকে শূন্যে উঠে আকাশে ওড়া শেষে জমিনে নেমে আসা—স্বপ্নে আকাশে বিচরণ।

মা-বাবার সঙ্গে কাটানো ছেলেবেলার সেই সুখকর দিনগুলো আজ আর সেই। নাহ, আজ আর নেই। বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে টোকিওতে উচ্চশিক্ষার মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎই সেদিন মায়ের মৃত্যুর খবরটা কানে এল। আগেও অনেক মৃত্যু দেখেছি, অনেক মৃত্যুর খবর শুনেছি, এগুলো এখনো দেখি আর শুনি। তবে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট রাতের সেই মৃত্যুর খবরটা খুব আলাদা। খুব কষ্টের। এ কষ্টের কান্না সব সময়ই সঙ্গে থাকে।

আজও থাকে, আছে। ব্যস্ততার আড়ালে কান্নাটা লুকিয়ে থাকে। আপনাতেই কখনো কখনো সবার থেকে আলাদা হয়ে ব্যস্ততা ঝেড়ে কাঁদি। নিজের ভেজা ভেজা চোখে তখন মাকে দেখতে পাই, মনটা ভালো হয়।

ছোটবেলায় রাতের ঘুমে দেখা আকাশে ওড়ার স্বপ্নগুলো এখন আর দেখা হয় না। মন চাই সে স্বপ্নগুলো আবার দেখি, ঘুমের মাঝে যেন উড়ে উড়ে আকাশে আর জমিনে থাকা আপন মানুষগুলোকে দেখে আসি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।