দ্বিতীয় দফায় কি জয় পাবেন এরদোয়ান?

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও একে পার্টির সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন ছিল এবারের (১৪ মে) নির্বাচন। অধিকাংশ জরিপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মহল এরদোয়ানের শাসনের পতন হচ্ছে, এ রকমই আভাস দিচ্ছিল।

বিরোধী জোট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পাশাপাশি সাতজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কোন দল কোন মন্ত্রণালয় নেবে, এমনকি কারা কারা মন্ত্রী হবেন, সেটাও ঠিক করে রেখেছিল! নির্বাচনের ফলাফল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাসনের পালাবদলের এ আয়োজন প্রায় পুরোপুরি ফিকে হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যেমন এগিয়ে থাকলেন, তেমনই তাঁর জোটও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। কিন্তু সংবিধানের আলোকে ৫০%+১টি ভোট না পাওয়ার কারণে ২৮ মে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় তুরস্কের জনগণের মাথায় বেশ কিছু বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে। মিডিয়াপাড়ার আলাপ-আলোচনা, দলগুলোর নির্বাচনপরবর্তী কার্যকলাপ এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে চায়ের টেবিলে আলোচনায় মনে হলো ২৮ মের নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবে নিম্নোক্ত পাঁচটি ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

জয়-পরাজয়ের মনস্তত্ত্ব

১৪ মে রাতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদলু এজেন্সি যখন ফলাফল ঘোষণা করছিল, তখন এটি সিএইচপির নেতারা প্রত্যাখ্যান করে। বিশেষত ইস্তাম্বুল ও আনকারার মেয়ররা সিএইচপির সংগৃহীত ফলাফলের ভিত্তিতে কেমাল কিলিচদারওলু ৬০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছে বলে ঘোষণা করে ফেলেন। এমনকি তাঁরা তাঁকে ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ঘোষণা করেন! সারা রাত ধরেই বেশ কয়েকবার তাঁরা টেলিভিশনে যুক্ত হয়ে এমন দাবি করতে থাকেন। কিন্তু যখন প্রায় সব কটি আসনের সরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তখন পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তাঁরা ইতস্তত হন এবং পরবর্তী সময় এটাকে নিজেদের ফলাফল কন্ট্রোল রুমের ভুল হিসেবে উল্লেখ করেন।

কেমাল কিলিচদারওলু শেষ রাতের দিকে নিজ জোটের ছয় দলের চেয়ারম্যান ও মেয়রদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করে নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় সব নেতার মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট ছিল! সিএইচপি জোটের এই হতাশা এখনো কাটেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া এবং সংসদে একে পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ সার্বিক ফলাফলে পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতি তাদের মধ্যে দেখা গেছে। ফলাফল কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সিএইচপির ভাইস প্রেসিডেন্টকে পরদিন দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। সিএইচপির একসময়ের শীর্ষ নেতা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেমালের পদত্যাগ দাবি করে। দলের ভেতরে তার ওপর চাপ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে দ্বিতীয় দিন তিনি এক ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং টেবিল চাপড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না, এ-খানেই আছি।’

এদিকে জোটের দ্বিতীয় শীর্ষ দল ইয়ি (গুড) পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এক ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেদের খারাপ পারফরমেন্সের জন্য নেতৃত্বকে দোষারোপ করে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের ঘটনা এখানেই শেষ নয়। গত এক সপ্তাহে বিরোধী জোটের অন্তত ডজনখানেক নেতা পদত্যাগ করেছেন। যদিও জোটের ইসলামপন্থী কিংবা ডানপন্থী বাকি চার ছোট দল তুলনামূলক ভালো মেজাজেই আছে। কারণ, তারা সিএইচপির হয়ে নির্বাচন করে ৩৯টি আসন বাগিয়ে নিয়েছে। যদিও তাদের সম্মিলিত ভোট জোটে ২% এরও কম যোগ হয়েছে। এটি নিয়েও সিএইচপির কেন্দ্র এবং তৃণমূলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সব মিলে সিএইচপিসহ বিরোধী জোটে এক পরাজিত মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা দ্বিতীয় দফার জন্য তেমন কোনো প্রচারণা শুরু করতে পারেনি।

অপর দিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ১৪ মে রাতে একে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষের সামনে নিজেদের জয়ের বিষয়টি স্পষ্ট করেন।

বিশেষত, সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৫% এগিয়ে থাকার ব্যাপারটি উল্লেখ করেন। ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের প্রায় সব শহরেই একে পার্টির কর্মীরা সারা রাত জেগে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিজয় উদ্‌যাপন করেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একধরনের জয়ী মানসিকতা রয়েছে। অবস্থা এ রকম যে তাঁরা বিজয়ী হয়ে গেছেন, এখন শুধু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে। এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পুরোপুরি প্রচার শুরু করেছেন।

নির্বাচনে আসল জয়ী তুর্কি জাতীয়তাবাদ

নির্বাচনে একে পার্টিসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ভালো করলেও আদতে সবচেয়ে চমক দেখিয়েছে জাতীয়তাবাদীরা। এবার জাতীয়তাবাদী আদর্শের চারটি দল প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, তুরস্কের মানুষ অসম্ভব এক জাতীয়তাবাদ লালন করেন। এখানে ইসলামপন্থী, বাম, ডান—সবাই কম-বেশি জাতীয়তাবাদী। এবারের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীরা শুধু ভোটে চমক দেখিয়েছেন তা-ই নয়, বরং দলগুলোর প্রচারণায়ও জাতীয়তাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল।

একে পার্টি, সিএইচপিসহ প্রধান দলগুলো জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালিয়েছে। তৃতীয় হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনান ওয়ান কোনো বড় দলের প্রার্থী না হয়েও শুধু কট্টর জাতীয়তাবাদের প্রচারণা চালিয়ে ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তাঁর ভোটারদের কাছে টানাসহ নানা কারণেই জাতীয়তাবাদের বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। বর্তমান কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রচারণায় দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, তুরস্ক শুধু তুর্কিদের। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দলগুলো আদতে তুর্কি জাতীয়তাবাদকে অন্য যেকোনো জাতির (বিশেষত, কুর্দি) ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখা বোঝায়। উল্লেখ্য, কেমাল কিলিচদারওলুকে এবার কুর্দিদের বাম এবং বড় দল এইচডিপি সমর্থন দিয়েছিল। কুর্দি এলাকাগুলোতে সিএইচপি-এইচডিপি যৌথ নির্বাচনী প্রচারণা এবং অনুষ্ঠান করেছে। সিএইচপি-প্রধান কুর্দি সন্ত্রাসী গ্রুপ পিকেকের নেতা ওজালান এবং এইচডিপির সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন দেমিরতাসের মুক্তির ওয়াদা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এ দুজন এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। ফলে কিলিচদারওলু জিতলে এইচডিপিসহ পিকেকের প্রভাব বাড়বে, ভোটাররা এমন আশঙ্কা করেছিলেন। এরদোয়ান ও সিনান ওয়ান বিষয়টি সুচারুভাবে প্রচার করেছিলেন এবং তাঁরা ফলাফলও পেয়েছেন।

অপর দিকে সরকারি জোটে একে পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কুর্দিদের ইসলামপন্থী দল হুদা পার্টি। যাদের সঙ্গে একসময় হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিরোধী মিডিয়াগুলো এটাকে ফলাও করে প্রচার চালিয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বিষয়টি আরও বড় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দুই প্রার্থীই পিকেকেবিরোধী প্রচারসহ তুর্কি জাতীয়তাবাদের দৃঢ় প্রচার করছে।

দ্বিতীয়ত, বিদেশি, বিশেষত উদ্বাস্তু বা শরণার্থী ইস্যু। এটাও বর্তমানে কট্টর জাতীয়তাবাদের অন্যতম একটি টার্গেট। সিরিয়ানদের বের করে দেওয়া, বিদেশিদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সবচেয়ে কট্টর প্রচার চালিয়েছিলেন সিনান ওয়ান। তাঁর ভোটের একটা বড় অংশ এসেছে এসব বিষয়ে তাঁর শক্ত অবস্থানের জন্য। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শরণার্থী ইস্যুতে বর্তমান পলিসিই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। আর তা হলো, সিরিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাবুঝির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান এবং আপাতত সিরিয়া সীমান্তে তুর্কি সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বাধীন এরিয়ায় আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করে এক মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে এখানে নিয়ে আসা। পাশাপাশি তিনি কাউকে জোর করে বের না করারও পক্ষপাতী।

অপর দিকে বিরোধী প্রার্থী এ ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করলেও উদ্বাস্তুদের সিনান ওয়ানদের মতো বের করে দেওয়ার প্রচার চালাননি। তবে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি জোরেশোরেই উদ্বাস্তুদের বের করে দেওয়ার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সিনান ওয়ান ইস্যু

দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে প্রথম দফায় তৃতীয় হওয়া সিনান ওয়ান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তাঁর ৫ শতাংশ ভোট জয়-পরাজয়ে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এখন পর্যন্ত তিনি কাউকেই সমর্থন দেননি, বরং দর-কষাকষি চলছে। গত শুক্রবার এরদোয়ানের সঙ্গে সিনান ওয়ানের সে জোটের হয়ে লড়েছিল (আতা জোট) তাঁর প্রধান উমিত ওজদাহ ও কেমাল কিলিচদারওলুর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর কোনো পক্ষই স্পষ্ট কিছু বলেনি যে সিনান কাকে সমর্থন করছেন। তবে দু-এক দিনের মধ্যে একটা সিদ্ধান্তে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিনান যে প্রার্থীকেই সমর্থক দিক না কেন, ভোটের পুরোটা সেই প্রার্থীর হিসাবে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, তাঁর ভোটপ্রাপ্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সে অধিকাংশ ভোট পেয়েছে এরদোয়ানের ভোটব্যাংক খ্যাত এলাকাগুলো থেকে। যেমন কায়সেরি, কোনিয়ার মতো মধ্য আনাতলিয়ার জেলাগুলো থেকে। এসব জেলা থেকে সে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এসব ভোট আদর্শিকভাবে ডানপন্থী ভোট এবং সিএইচপির মতো একটি বাম দলের প্রার্থীকে দেওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই। আবার সিনানের বেশ কিছু ভোট আছে সিএইচপি থেকে আসা। বিশেষত, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা মোহাররেম ইনজের ভোট। এসব ভোট এরদোয়ানের হিসাবে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

সিনানের ভোট তিনটি দৃশ্য সামনে আসতে পারে—

১.
কাউকেই সমর্থন না দিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গেই সমান যোগাযোগ রাখা অথবা চুপ থাকা। এ রকমটা হলে তার ৫% ভোটের ৩% যাবে এরদোয়ানের দিকে আর বাকি ২% পাবে কিলিচদারওলু।

২.
কেমালকে সমর্থন দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ৫% থেকে ২.৫ থেকে ৩% যাবে কেমালের দিকে আর বাকি ২ থেকে ২.৫% পাবে এরদোয়ান। এ রকমটা হলেও এরদোয়ান বিজয়ী হবেন।

৩.
যদি এরদোয়ানকে সমর্থন করে, তবে তাঁর ভোটের ৩.০০ থেকে ৩.৫% এরদোয়ানের দিকে যেতে পারে।

সব মিলে তাঁর সমর্থন না পেলেও এরদোয়ান বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাতে এরদোয়ানকে সমর্থন দিলে অথবা কাউকেই সমর্থন না দিলে তাঁর রাজনৈতিক প্রাপ্তির খাতায় কিছু যোগ হবে হয়তো। কিন্তু এখানেও খোদ এরদোয়ান জোট থেকেও জটিলতা রয়েছে। জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দল এমএইচপি তাঁর ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।

কেননা, তিনি একসময় এমএইচপিরই এমপি ছিলেন এবং পরবর্তী সময় দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে তিক্ততা, মামলা-মোকদ্দমা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। স্বভাবতই এমএইচপি চাইবে না যে সে জোটে আসুক আর এরদোয়ান তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট কিংবা মন্ত্রী বানাক।

সংসদে সরকারি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা

প্রথম দফার নির্বাচনে ৬০০ আসনের মধ্যে ৩২৩টি আসন পেয়ে সরকারি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। যেখানে বিরোধী জোট পেয়েছে ২১২টি। উল্লেখ্য, একে পার্টি এককভাবেই ২৬৮টি আসন পেয়েছে। সরকারি জোটের এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রথম দফায় এরদোয়ানকে ভোট না দেওয়া ভোটারদের মনে ইতিবাচক ভাবনা তৈরি করবে। কারণ, প্রেসিডেন্ট এক জোট আর সংসদ ভিন্ন জোটের হলে নানা জটিলতা তৈরি হবে।

সরকারি জোটও এ বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করছে। যদিও বিরোধীরাও একে নতুন প্রচারণার অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। শনিবার বিরোধী জোটভুক্ত ইয়ি পার্টির প্রধান মেরাল আকসেনার সংসদে সরকারি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পুনরায় জয়ী হলে ক্ষমতার চাবিকাঠি এক ব্যক্তির হাতেই থাকবে বলে ভোটারদের সতর্ক করেছেন।

এদিকে দুয়েক দিনের মধ্যেই সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান ও সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হয়ে যাওয়ার পর ভোটাররা হয়তো এরদোয়ানের দিকে আরও ঝুঁকে যাবেন।

ভূমিকম্পদুর্গতরা নাকি অকৃতজ্ঞ!

প্রথম দফার নির্বাচনে ভূমিকম্প এলাকায় এরদোয়ান ৬৫% এরও বেশি ভোট পেয়েছে। যদিও এগুলো আগে থেকেই একে পার্টির ঘাঁটি ছিল। তারপরও ফলাফল ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূমিকম্পদুর্গত লোকজন বিরোধী জোটের কতিপয় সমর্থকের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। বিশেষত তাঁদের অকৃতজ্ঞ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের মতে, বিরোধী জোটের লোকজন তাঁদের প্রচুর সহায়তা করা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের ভোট দেননি, দিয়েছেন এরদোয়ানকে। অথচ কিছু দুর্গত এলাকায় সরকারি উদ্ধার তৎপরতা এবং সহায়তাসামগ্রী পৌঁছাতে দেরি হয়েছিল। বিরোধী জোট সরব থাকা সত্ত্বেও ভূমিকম্পদুর্গত এলাকার লোকজন থেকে কাঙ্ক্ষিত ভোট পাননি।

এ প্রচারণা শুধু অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো আলাপ খুব বাড়ত না, কিন্তু নির্বাচনের দুই দিন পর সিএইচপি থেকে মেয়র হওয়া কয়েকটি সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা ভূমিকম্পে দুর্গতদের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে তাদের এলাকায় যাঁরা করপোরেশনের খরচে হোটেলগুলোতে থাকছেন, তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে বের হয়ে যেতে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ভূমিকম্পে দুর্গতরা। যদিও কেমাল কিলিচদারওলু তাঁর সমর্থকদের ভূমিকম্পে দুর্গতদের নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ১০ বার ভেবে একবার বলার জন্য অনুরোধ করেছেন তারপরও বিরোধী জোট রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি জোট এটিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। শনি ও রোববার এরদোয়ান দুর্গত এলাকা পরিদর্শন, সদ্য সমাপ্ত বিভিন্ন অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে সমাবেশগুলোতে বক্তব্য দেন, যেখানে বিরোধীদের এই কর্মকাণ্ড স্মরণ করিয়ে দেন।

ওপরের মৌলিক পাঁচটি ইস্যুসহ দ্বিতীয় দফার নির্বাচন এরদোয়ানের জন্য সহজ হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২৮ তারিখ রাতেই বোঝা যাবে তুরস্কের ভোটাররা কার ওপর আগামী পাঁচ বছরের শাসনভার তুলে দিচ্ছেন।

লেখক: হাফিজুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, তোকাত গাজী ওসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক