পর্তুগালে অভিবাসনপ্রক্রিয়ার অপব্যবহার, বাংলাদেশিদের জন্য অভিবাসনের দরজা বন্ধের আশঙ্কা
কিছু অসাধু মানুষের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইউরোপে বাংলাদেশিদের জন্য সহজ শর্তে অভিবাসনের সুযোগ করে দেওয়া একমাত্র দেশ পর্তুগালের দরজাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কিছু মানুষ অতি লোভে অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অল্প আয় হলেও পর্তুগালে সাধারণ বাংলাদেশিরা একটি রেসিডেন্স কার্ড আর স্বপ্নের পর্তুগিজ পাসপোর্টের আশায় রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে টিকে আছেন। আর কেউ কেউ আবার অবৈধ ধান্ধায় আঙুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ, যার খেসারত গুনতে হবে সাধারণ অভিবাসীদের। বিগত বছরগুলোতে যেভাবে অভিবাসনপ্রক্রিয়ায় অপব্যবহার করা হয়েছে, এর ফলে বারবার নেতিবাচক প্রতিবেদনের শিরোনামও হয়েছেন বাংলাদেশিরা। সহজ অভিবাসনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি–অধ্যুষিত এলাকার আশপাশে নামে–বেনামে প্রতিষ্ঠান করে এহেন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন অনেকে।
আজ আমি এই ইস্যুতে লিখলে অনেকের শত্রুতে পরিণত হব, জানি। সঙ্গে অনেকে ব্যাবসার ক্ষতিসাধন করছি বলে ধরে নিবেন। তবে জেনে রাখুন, আমি লিখছি বাংলাদেশিদের বৃহৎ স্বার্থে। পর্তুগালে বাংলাদেশিদের যাত্রা এখানেই শেষ নয়। বরং আমি চাই সুনামের সঙ্গে এগিয়ে গেলে আমাদের মানুষদের জন্য পর্তুগালে অভিবাসনের দরজা সব সময়ই যেন খোলা থাকে। সামনে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও পর্তুগালে সহজে স্থায়ী হওয়ায় সুযোগ পাবেন। তাই ইমিগ্রেশন–সংশ্লিষ্ট অবৈধ এসব কার্যক্রমের বিষয়ে আপনাদের–আমাদের আরও সতর্কতা জরুরি। বৈধ পথে পর্তুগালে এলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই আপনি রেসিডেন্স পাবেন, কোনো অনৈতিক উপায় অবলম্বন করতে হবে না। আর ইউরোপের অন্য দেশে বসে পর্তুগালে কাগজ করার মতো অন্যায় আবদার বা স্বপ্ন দেখা বাদ দিন।
পূর্বে অভিবাসনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধে অন্যান্য অভিবাসী দেশের মানুষের নাম এলেও পর্তুগিজ কমিউনিটিতে বাংলাদেশি মানুষের ব্যাপক সুনাম ছিল, যেটা এখনো আছে। তবে সাম্প্রতিক অভিবাসনকেন্দ্রিক কিছু অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততায় সুনাম নষ্ট হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশি সাধারণ অভিবাসীদের। আজ পর্তুগিজ ইমিগ্রেশন সার্ভিস বাংলেদেশি–অধ্যুষিত এলাকায় একটি অভিযান চালায় এবং তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই ব্যাপারে বিস্তারিত একটি পোস্টও করে, যা কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও শঙ্কার বিষয়।
বর্তমান সময়ে অভিবাসনপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক মনে হলেও সামনে কঠিন সময় আসছে বলেই মনে হচ্ছে। পর্তুগিজ সাধারণ মানুষ অভিবাসনের প্রশ্নে এখন বিরক্ত। তার ওপর অভিবাসনের নামে জালিয়াতির খবরে নড়ে বসতে পারে প্রশাসন। কিছু মানুষের অতি লোভে বর্তমানে অভিবাসনপ্রত্যাশী যাঁরা রয়েছেন এবং সামনের সময়ে যাঁরা আসবেন, প্রত্যেকেই দারুণ হুমকির মুখে।
আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, ২০১৫–২০১৬ সালকেন্দ্রিক অভিবাসনের এমন অপব্যবহারের ফলে কঠোর হয়ে যায় পর্তুগালের অভিবাসন। যেখানে বৈধ পথে পর্তুগালে এলে ছয় মাসে রেসিডেন্স পাওয়া যেত, সেখানে রেসিডেন্স পেতে সেসময় দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগে যেত। এমন অচল অবস্থা ছিল প্রায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত। আর যাঁরা অবৈধ পথে এসেছিলেন, তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও দীর্ঘ সময়, প্রায় তিন থেকে চার বছর। বর্তমান চিত্র যেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিগত বছরগুলোতে কমপক্ষে ৩০ হাজার নতুন মানুষের আগমন ঘটেছে, যার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র আবাসন আর চাকরিসংকট। কিন্তু তারপরও মানুষের স্রোত থামছে না আর এর সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধু ব্যক্তিরা। ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সুইডেনের মতো দেশগুলোতে বসে পর্তুগালে রেসিডেন্স পেয়ে যায়! কী ভয়ানক ব্যাপার! একটা দেশে পা না রেখেই সেই দেশের রেসিডেন্স নিয়ে নিচ্ছে। একেই হয়তো বলা যায় সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে অপব্যবহার করা।
বর্তমানে সহজ অভিবাসনের নামে এহেন জালিয়াতির খবরে নড়ে বসতে পারে প্রশাসন। কিছু মানুষের অতি লোভে বর্তমানে অভিবাসনপ্রত্যাশী যাঁরা রয়েছেন এবং সামনের সময়ে যাঁরা আসবেন, প্রত্যেকেই দারুণ হুমকির মুখে। তাই সামনের সময়ে সহজ শর্তে অভিবাসনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে পর্তুগালের দরজা।