লেলো বুকস্টোর—এক জাদুর বইজগৎ
‘এ বিশ্ব একটি বই এবং যে ভ্রমণ করে না সে এই বইয়ের একটি পাতা পড়েছে মাত্র’, সেন্ট অগাস্টিনের এই উক্তি থেকে সহজেই বুঝে নিতে পারি, বিশ্বকে জানার জন্য ভ্রমণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ছোট্ট এই জগতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যাটাও খুব কম নয়। শত বছরের ঐতিহাসিক কোনোও স্থানে ভ্রমণের আনন্দ এবং অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম। সে রকম এক অভিজ্ঞতার কথাই আজ তুলে ধরব আপনদের কাছে।
যার কথা বলছি, সেই ঐতিহাসিক নিদর্শনের অবস্থান পর্তুগালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোর্তোতে। গোছানো এ শহরেই মাথা উঁচু দাঁড়িয়ে আছে বিখ্যাত নিদর্শন ‘Livraria Lello’, পর্তুগিজ থেকে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘লেলো বুকস্টোর’; যেটি এখনো পর্তুগালের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীগুলোর মধ্যে অন্যতম। শত বছরের পুরোনো এ বুকস্টোরের নির্মাণশৈলী যে কারও ভালো লাগবে, তা শতভাগ নিশ্চিত।
১৮৮১ সালে পারিবারিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জোসে পিন্টো দে সউজা লেলো। এরপর ১৮৯৪ ও ১৮৯৮ সালে এর ব্যাপ্তি বাড়ানো হয় এবং ১৯০৬ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয় এবং এখন পর্যন্ত এই নতুন ভবনেই এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যদিও ১৯৯৫ ও ২০১৬ সালে এর সংস্করণ করা হয়।
অনলাইনে টিকিট ভাউচার ক্রয় করে ভেতরে ঢুকতে হয়, বাইরে কোনো টিকিট কাউন্টার নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে মূল্য দিয়ে টিকিট কিনবেন, ভেতরে কোনো বই কিনলে টিকিটের দাম মূল্যছাড় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমন ৫ ইউরো দিয়ে টিকিট কিনলে আপনি যদি ভেতরে ১৫ ইউরোর বই কেনেন, তাহলে মূল্যছাড় দিয়ে সেই বইয়ের দাম পড়বে ১০ ইউরো।
ভেতরে ঢুকতেই মনে হবে, কোনো বইয়ের রাজ্যে চলে এসেছেন, চারদিকে শুধু বই আর বই। বইপাগল মানুষদের জন্য এটি বইয়ের স্বর্গপুরী। কাঠের তাকে তাকে সাজানো বিভিন্ন ভাষার বইয়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে যে কেউ। লাল রঙের কাঠের মোড়ানো সিঁড়ি এই বুকস্টোরের মূল আকর্ষণ। তার সঙ্গে বিভিন্ন রঙের কাজ করা কাচের ছাদে আপনার চোখ আটকে যাবেই। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার সৌন্দর্য ভিন্ন রকম।
দ্বিতীয় তলায় নিজেকে কিছু সময়ের জন্য শত বছর আগে খুঁজে পাবেন। এখনো সেই পুরোনো ব্যাপারটা অনুভব করা যায়। সারি সারি বইয়ের মাঝে কোনটা রেখে কোনটা নেবেন, এই দ্বিধায় আপনার কয়েক ঘণ্টা চলে যাবে। সুতরাং হাতে একটু সময় নিয়ে যেতে হবে। সিঁড়িতে আপনার সুন্দর ছবিতে অন্য কেউ থাকবে না, তা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনার সুন্দর ছবিতে একজন ভিনদেশি থাকবেই, তা নিশ্চিত। বেশি বেলা করে না গিয়ে সকাল সকাল চলে যেতে হবে। কারণ, তখন মানুষ একটু কম থাকে এবং সুন্দরভাবে ছবি তোলা যায়। যাঁরা পর্তুগালের পোর্তোতে ঘুরতে আসবেন, তাঁরা অবশ্যই এখানে ঘুরে আসবেন। শত বছরের এই নিদর্শন একবার না ঘুরে এলে আপনার পোর্তো ভ্রমণ শতভাগ উপভোগ্য হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকের মতে, এটি ‘The most beautiful bookstore in the world’, আপনার ভ্রমণ সুস্থ ও সুন্দর হোক!
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]