নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা কেন জরুরি
নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়, ডিমভাজা বা আলুভর্তা বানানো শেখানোতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার আলোচনার উদ্দেশ্য ‘পরীক্ষা কেন জরুরি’। ডিমভাজা আর আলুভর্তা বিতর্কে একটা পক্ষের যৌক্তিক আলোচনা বা দাবি উপেক্ষিত থেকেছে, অনেকাংশে দমনও করা হয়েছে। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা উচিত ছিল। এটা যে হয়নি সে আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। সাধারণত শিশু-কিশোরদের ওপর যেকোনো গবেষণার ক্ষেত্রে শিশু-কিশোদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবার মতামত নেওয়া হয়।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। এখানে শুরু করার আগে আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ হয়েছে। গত সেমিস্টারে আমার ক্লাস থাকত সোমবার আর বুধবার। নতুন কোর্স, নতুন করে সবকিছু গোছানো বলে সময়সাপেক্ষ ছিল। সোমবারের ক্লাসের জন্য আমাকে রোববারের মধ্যে অবশ্যই ক্লাস লেকচার তৈরি করতে হতো। কোনো এক সপ্তাহে সোমবার ছুটি ছিল। ভাবলাম, ভালোই হলো, অতিরিক্ত একটা দিন আমাকে একটু এগিয়ে থাকতে সহায়তা করবে। আমার কিন্তু রোববারের মধ্যে ক্লাস তৈরি করা হলো না। কেন হলো না? কারণ, একান্ত বাধ্য হতে হয়নি বলে। রুটিন থেকে সুযোগ পেলে বের হয়ে যাওয়া মানুষের স্বাভাবিক একটা প্রবণতার মধ্যেই পড়ে বলে আমার বিশ্বাস। আপনি এখানে একই রকম আরও অনেক উদাহরণ চিন্তা করতে পারবেন, আপনার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অনেক বেশি নিয়মানুবর্তিতা চর্চা করেন, আমি তাঁদের মধ্যে পড়ি না। ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা বলে আমার মতো মানুষের সংখ্যা কম নয়, সংখ্যার বিচারে সংখ্যাগুরুই হবে। শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে তাঁদের নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা আবশ্যক। কারণ, অন্য পক্ষ পরিবারের সহযোগিতা বলেন বা অন্যান্য সুবিধার কারণেই বলেন—ভালোই করেন। পরীক্ষা না থাকলে ছাত্রছাত্রীরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের যা পড়া দরকার বা জানা দরকার, তার থেকে সব সময় পিছিয়ে থাকবে, ঠিক আমার ক্লাস লেকচার তৈরি করার মতো। এটাই বাস্তবতা। নিজেকে প্রশ্ন করুন। একটা কিছু চাপ হিসেবে থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা বহুল পরীক্ষিত এবং এযাবৎকাল বহুল প্রচলিত পদ্ধতি বলেই আমার বিশ্বাস। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও কীভাবে তা অধিক কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
পরীক্ষা থাকলে মুখস্থবিদ্যা থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির ও একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের বক্তব্য এ রকমই। খুব সহজভাবে আপনার কাছে জানতে চাই। ধরুন, আপনি ১০ জন মানুষকে বললেন একটা বিষয়ে পড়ে আসতে কিন্তু তাঁদের এ বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। কতজন পড়বেন বলে আপনি মনে করেন? উত্তরটা নিজেকেই দেবেন দয়া করে। আর যদি বলেন আপনার এ বিষয়ে একটা পরীক্ষা নেওয়া হবে। অধিকাংশই পড়বেন, এতে নিশ্চয়ই দ্বিমত হবেন না। কীভাবে পড়বেন, তা নির্ভর করবে পরীক্ষার ধরনের ওপর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুখস্থ করা নিয়ে। বাস্তব সত্য হচ্ছে এ জীবনে অনেক কিছু আপনাকে মুখস্থ রাখতে হয়, যেখানে বোঝার কিছু নেই কিন্তু জরুরি। যেমন ধরুন আপনার মুঠোফোন নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি। আমার বাবার নামের মধ্যেই বোঝার কি আছে, বলুন? ঠিক এমনই কিছু পরিভাষা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে, যা মুখস্থ করা জরুরি। অনেকটা বাবার নাম মনে রাখার মতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যা বোঝা দরকার, তা না বুঝে মুখস্থ করছি কি না। যদি তা–ই হয়, তাহলে খারাপ হবে, এতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। আর তা প্রতিরোধে পরীক্ষা না থাকা অনেকটা মাথাব্যথায় মাথা কেটে ফেলার শামিল। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরন এ সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে খুব সহজেই।
পরীক্ষা কি শুধু শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে? নিশ্চয় নয়। শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা যায় খুব সহজেই। ধরুন, আমি আর আপনি একই ক্লাসের দুটি সেকশনে পড়াই। আপনার সেকশনে সবাই ভালো করলেও আমার সেকশনে অনেকেই খারাপ করছে। আমাকে কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমার পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।
আমাদের সময় (৯০ দশকের প্রথম দিকের কথা বলছি, পরবর্তী বেশকিছু সময় ধরে প্রযোজ্য ছিল বলেই মনে পড়ছে; এখন আছে কি না, আমার জানা নেই) প্রাইমারি স্কুলে হাতের কাজ বলে একটা বিষয় ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষার্থীরা নিজে থেকে কিছু একটা বানিয়ে জমা দেবে মূল্যায়নের জন্য। কী চমৎকার ভাবনা, তাই না? এই ভাবনার মধ্যে ছিল চরমতম আধুনিকতা, যা কখনোই পুরোনো হওয়ার নয়। সব সময়ের জন্য মানানসই। এটাও চরমভাবে ব্যর্থ ছিল শেষ পর্যন্ত! ছাত্রছাত্রীরা হাটবাজার থেকে বিশেষত বাঁশের তৈরি যেমন ঝাড়ু, কুলা, ধামা ইত্যাদি জমা দিত। শিক্ষকেরা ভাগাভাগি করে বাসায় নিয়ে যেতেন। কী অদ্ভুত না? সততার প্রশ্নে তখন সবাই অকৃতকার্য হয়েছেন। সততা বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আমাদের নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে। আপনি যা পড়তে বলছেন বা পড়াচ্ছেন, তা যে তারা আসলেই পড়ছে, তা জানার উপায় কী পরীক্ষা ছাড়া? উল্লেখিত হাতের কাজের বিষয়ে যদি এমন হতো যে সবাইকে ক্লাসরুম থেকে দুই বা তিন দিন সময় নিয়ে সে যা পারে কিছু একটা বানিয়ে দিতে হবে। কী মনে হয় আপনার, সফল হতো? নিশ্চয় হতো। ডিমভাজা, আলুভর্তাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারত। সে ক্ষেত্রে আমি তো বলব, এগুলো আমাদের সময়ও ছিল।
পরীক্ষা বিষয়টা এমন যে আপনাকে সুন্দরভাবে ভাবতে শেখাবে, লিখতে শেখাবে, সুন্দর উপস্থাপন করতে শেখাবে, যা বাস্তবজীবনের প্রতি পদে পদে কাজে লাগবে। পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় আপনাকে শেখাবে, বুঝতে পারা বিষয়টাও বারবার চর্চা করতে, যাতে সময় মতো শেষ করতে পারেন। তে প্রতিটা বিষয়ের পারিভাষিক শব্দগুলো মাথায় থেকে যাবে, যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে। অন্যথায় এমন হতে পারে যে আপনি কিছু জিনিস বুঝতে পারছেন কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারছেন না সম্যক জ্ঞানের অভাবে। শুধু মুখস্থনির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি যেমন পরিপূর্ণ নয়, তেমনি যা মুখস্থ থাকা দরকার, তা ছাড়াও জ্ঞানার্জন পরিপূর্ণতা পাবে না। বিষয়ভিত্তিক পরিভাষাগুলো আপনাকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনি যে এ বিষয়গুলো জানেন, তা অন্যদের বোঝাতে (বিশেষত প্রফেশনাল জীবনে বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে) সহায়তা করবে। আপনার কাজের ক্ষেত্রে আপনি সহায়ক বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি ভাবেন মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আপনি বই খুলে খুঁজতে থাকবেন, তা বাস্তবসম্মত হবে না। সঠিক পরীক্ষা পদ্ধতি এই জ্ঞানার্জনে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ছোট করে একটা উদাহরণ চিন্তা করা যেতে পারে। প্রশ্ন হলো, সালোকসংশ্লেষণ কী? আপনারা যাঁরা পড়াশোনা শেষ করেছেন, তাঁরা হয়তো একবার পড়লেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমি বলব, আপনারা স্কুলের সময় চলে যান। একবারে বুঝতে পারলেও পরীক্ষায় উপস্থাপনের জন্য তা যথেষ্ট নয় বরং আপনাকে কয়েকবার পড়তে হবে। পরীক্ষা না থাকলে আমি কেন কয়েকবার পড়ব, বলতে পারেন?
কেউ কেউ বলছেন, সারা বছরই তো কোনো না কোনোভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে, তাহলে পরীক্ষা কেন জরুরি? পরীক্ষা নিয়েই শুধু জানা সম্ভব যে আমাদের সারা বছরের শেখানো কতটুকু সার্থক হয়েছে। বিভিন্নভাবে তাদের শেখানো হয়েছে, গ্রুপ বা ইনডিভিজ্যুয়াল হোমওয়ার্কের মাধ্যমে। আপনি যদি দেখেন কেউ কিছুই লিখতে পারছেন না, তাহলে বুঝতে হবে পদ্ধতি কাজ করছে না। যদি দেখেন কিছুসংখ্যক ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন, বাকিরা পারছেন না। সে ক্ষেত্রেও নিশ্চয় সমস্যা নিরূপণ জরুরি। আর এই পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি নতুন কারিকুলামের উদ্দেশ্য অর্জনের পরীক্ষাও হয়ে যাবে।
ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বৃত্ত ব্যবহারের যুক্তি হিসেবে বলা হয় প্রতিযোগিতাকে নিরুৎসাহী করা হচ্ছে। কী অদ্ভুত? এ রকমও বলা হচ্ছে যে কেউ কেউ মন খারাপ করে। খুব সহজভাবে এটার সমাধান করা যায়। উন্নত বিশ্বে তাই করে। শুধু ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকেরা (কোনো কোনো পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের অনুমতি সাপেক্ষে) তাদের গ্রেড বা মার্কস জানতে পারেন। দুনিয়ার কোন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নেই বলতে পারেন? প্রশ্নটা প্রতিযোগিতা নিয়ে হওয়া উচিত নয়, হওয়া উচিত প্রতিযোগিতা সুস্থ কি না। আপনি যখন প্রতিযোগিতা ছাড়া একটা প্রজন্ম তৈরি করে জীবনের একটা জায়গায় এনে দাঁড় (বাস্তবজীবন) করাবেন, যেখানে প্রতি পদে পদে তাকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে, তখন কী তারা অসহায়বোধ করবে না? এ শিক্ষাব্যবস্থা কী তাকে প্রস্তুত করতে পারবে? এর জন্য কে দায়ী হবে? পরীক্ষা কী শুধু মানুষকে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে? না, পরীক্ষা আমাদের আরও অনেক কিছু শেখায়, শেখায় কীভাবে অধ্যবসায় সবকিছু অর্জনে সহায়ক হয়। যদি আমাকে কোনো কিছুই পড়তে না হয়, তাহলে আসলে আমি কী পড়তে ভালোবাসি, তা–ও অজানা থেকে যাবে।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন সবচেয়ে বড় একটা প্রশ্নের উদ্রেক করে সৃজনশীল শিক্ষাক্রম নিয়ে। খুব বেশিদিন কি পেয়েছে এ পদ্ধতি সফল হওয়ার জন্য? শিক্ষকেরা হয়তো আস্তে আস্তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন। সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নের সময় কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা (যাঁরা এ শিক্ষাক্রমের সঙ্গেও জড়িত) যে যুক্তি দেখিয়েছেন, সেই একই যুক্তি তাঁরা এখনো দিচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন সৃজনশীল শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হচ্ছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে? তাঁদের ওই সময়ের যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়! যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই নতুন কারিকুলামে কোনো ত্রুটি নেই, বাস্তবায়ন কী সঠিক হচ্ছে? ন্যূনতম একটা মৌলিক বিষয় নিশ্চিত করা উচিত বাস্তবায়নসংক্রান্ত জটিলতায় যেন একজন শিক্ষার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এটা নিশ্চিত করা সম্ভব তখনই, যখন সব শিক্ষক নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাবেন। নতুন কারিকুলামের ক্ষেত্রে এটা কি নিশ্চিত করা হয়েছে? উত্তর হলো, না। যারা এ কারিকুলাম প্রথম পাচ্ছে, এটা তাদের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ছাড়া আর কিছুই নয়। মনে রাখা দরকার যে এ বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে যুগে যুগে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে এই ধারাই গ্রহণ করা হয়েছে। এটা যে কতবড় অন্যায়, তা আমাদের বড় বড় বিজ্ঞজনদের অন্তত জানা উচিত বলে মনে করি, কিন্তু বাস্তবতা বিপরীত!
পরীক্ষা না রাখার পক্ষে কিছু দেশের রেফারেন্স দেওয়া হয়। দুনিয়া এখন এমন দিকে যাচ্ছে যে পারসোনালাইজড মেডিসিনের কথা চিন্তা করছে। কারণ, আপনার জন্য যা কাজ করবে, আমার জন্য তা না–ও করতে পারে। ঠিক তেমনি জাপানের জন্য যে পদ্ধতি ভালোভাবে কাজ করছে, তা দেশের জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাদের পদ্ধতি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সব সিস্টেম (আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য) তাদের মতো হতে হবে। একটু ভাবুন, জাপানি সিস্টেমে যদি আমাদের অসততাকে একটু মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কী হতে পারে। কারণ, সততা তাদের বড় পুঁজি এবং এটা একেবারে আকাশ থেকে হঠাৎ করে পড়েনি, যুগ যুগ ধরে অনুশীলনের ফসল। যদি নীতিনির্ধারকেরা বলেন আমরা জাপানিদের সমকক্ষ, অন্তত সততায়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা সংগতিপূর্ণ, তা নির্ধারণ সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। একটা বিষয় মনে রাখা উচিত যে প্রচলিত পদ্ধতির সাধারণত আমূল পরিবর্তন হয় না। কারণ, তা ধাপে ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রচলিত হয়ে উঠে। পরীক্ষা না থাকাটা এর ব্যত্যয় বলেই আমি মনে করি।
কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরি নতুন কারিকুলাম চলমান রাখতে। প্রশ্ন হলো, বুঝে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যে সৃজনশীল পদ্ধতির শুরু, তা কেন ব্যর্থ হলো বা কীভাবে বুঝলেন যে এটা ব্যর্থ হয়েছে? কোনো তথ্য-প্রমাণ কি আছে? যদি এটা মূল্যায়ন না করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে, তবে তা হবে একটি মহা অন্যায়। সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নে যা যা করা হয়েছে, তা কি কারণ ছাড়াই অপচয়ে পর্যবসিত হলো না? যেভাবে তাড়াহুড়া করে শুরু করেছিল, তার জন্য একটা সময় কিন্তু জরুরি ছিল। নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীরা যে বুঝতে পারছে বা নির্দিষ্ট লক্ষ্য যে অর্জিত হচ্ছে, তা কীভাবে বুঝবেন?
একটা আবেদন রেখে শেষ করছি। অভিভাবকদের কথা শুনুন। নতুন কারিকুলাম নিয়ে অনেকের সমালোচনাকে আপনারা বারবার বলার চেষ্টা করছেন যে এটা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটা অপপ্রচার। আমার ধারণা, বর্তমান পদ্ধতিতে তাঁদের ব্যবসার সমস্যা হবে না, যেমনটি হয়নি সৃজনশীল বাস্তবায়নের পরও, বরং একটু বেড়েছিল। বিপুলসংখ্যক গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি যেন কারিকুলাম পূর্ণ বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার পায়, সে আশা রাখব। শুভকামনা সবার জন্য।
*লেখক: মো. তারেক ফেরদৌস খান, সহকারী অধ্যাপক, ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি, ক্লিভল্যান্ড, ওহাইও, যুক্তরাষ্ট্র
*** দূর পরবাসে লেখা, ভ্রমণ, গল্প পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]