রমজান মানে অন্য অনুভূতি, যেভাবে আমেরিকায় ইফতার করি

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

বছর ঘুরে রমজান মাস আসে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঘরে। মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর মানুষের জন্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন এ মাসে নাজিল করেছিলেন। তাই এ মাসটি মুসলমানদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাকটিসিং মুসলিমরা মাসজুড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবিহ নামাজের মধ্য দিয়ে বছরে একবার হলেও আল কোরআন পাঠ করার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। মাসের শেষে খুশির সওগাত নিয়ে আসে ঈদ। এ সময় বাংলাদেশের মতো সুদূর আমেরিকায় সব মসজিদে অধিকাংশ বাংলাদেশি মুসলমান ভাইবোনদের দেখা মেলে। বস্তুগত সাফল্য এবং অগ্রগতির ছুটে চলা সমাজে রমজান হলো বিশ্বাস ও ঐক্যের প্রতীক। আর এ বিশ্বাস মানুষকে প্রভাবিত করে।

রমজান মানে অন্য রকম অনুভূতি। ছেলেবেলায় সাহ্‌রির সময় রনি বিশ্বাসের ডাকে ঘুম ভাঙত। দুই কাঁধে দইয়ের হাঁড়ি-পাতিল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে; সে কী হাঁকডাক তাঁর। দই ছাড়াও কলাপাতায় মোড়ানো মাখন বেশ মজাদার ছিল। জীবনের অনেকগুলো বসন্ত পার হয়ে গেছে, আবছা স্মৃতিগুলো ম্লান হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে সব পাখি নীড়ে ফেরে। সব নদী ফিরে যায় মোহনায়; কিন্তু আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ ঘন কালো আঁধারের অতলে ডুবে যাওয়ার আগেও জীবনের তরিটি কূলে ভেড়াতে পারি না। তাই ছুটে চলি রঙিন স্বপ্নযাত্রায় দেশ থেকে দেশান্তরে। যেখানে দিন–রাত পেছনে ফিরে তাকাবার ফুরসত নেই।

‘ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন’–এর দেশ আমেরিকা। যেখানে যে যার ধর্ম পালন করার রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ট্টাম্পের (রেড-ন্যাক) রাজ্য কানসাস। ধর্ম-বর্ণ সবাই মিলেমিশে যে যার মতো করে চলাফেরা করে থাকেন। এখানে গির্জা, মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি সবই আছে। মসজিদগুলোতে আন্তধর্মীয় ‘অল ফ্যাথ রিলিজিয়ন’— ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়ে থাকে। গুগল থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ৭৬৯টি ছোট-বড় মসজিদ রয়েছে। ইফতারের সব আয়োজন সবখানে রয়েছে। তারপরও কী যেন নেই।

এখানে বেশির ভাগ ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশি মসজিদে ইফতার করে থাকেন। সবার বিশ্বাস, মসজিদে ইফতারে রমজানের পূর্ণতা মেলে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দেখা মিলবে না মসজিদভিত্তিক এ ইফতার আয়োজনে। কাজ-কাজ-কাজ; মাস শেষে বিল পে হলো প্রবাসজীবন। যান্ত্রিক এ জীবনে একটু স্বস্তির খোঁজে কমিউনিটি পরিবার নিয়ে ইফতারে একে অপরের ভাব বিনিময়ের মহাসুযোগ নিয়ে আসে। এ সময় প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেখা মেলে। খরচ ও সময় বাঁচাতে ফ্রি ইফতারির জুড়ি নেই। মসজিদকেন্দ্রিক ইফতারিতে বাঙালিয়ানা খাবার না থাকলেও প্যাকেটজাত মজাদার খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। ইফতারি নিয়ে রাস্তায় জ্যামে পড়া, রাস্তায় ইফতার করা, সে প্যারাটা এখানে নেই। আমেরিকায় বাংলাদেশি খাবারের দোকানে ছোলা, পেঁয়াজু, হালিম, বেগুনি, জিলাপি, কালোজাম সবই পাওয়া যায়।

রমজান এলেই মনের জানালায় অমলিন স্মৃতিগুলো উঁকি দেয়। বিশেষ করে ইফতারের সময়ে। সারা দিন পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় ক্লান্তি দূর করা রুহ আফজা শরবত পান। এর সাথে ছোলা, পেঁয়াজু, হালিম, বেগুনি, জিলাপি, রসমালাই, সিজন অনুযায়ী ফলমূল তো থাকত। মা, বাবা, ভাই–বোন মিলে ইফতার করা। খুব মিস করি মায়ের হাতে রান্না করা সুস্বাদু পায়েস আর সেমাই।