বাওয়াং মেরাহ বাওয়াং পুতিহর গল্প
ইন্দোনেশিয়ার জাভার একটি গ্রামে এক বিধবা তার মেয়ে বাওয়াং মেরাহ, সৎকন্যা বাওয়াং পুতিহসহ বাস করত। বাওয়াং মেরাহ এবং বাওয়াং পুতি দুজন আলাদা স্বভাবের। বাওয়াং পুতিহ ছিল পরিশ্রমী, দয়ালু, সৎ এবং নম্র। বাওয়াং মেরাহ খুব অলস, চটকদার, গর্বিত ও ঈর্ষান্বিত। বাওয়াং পুতিহ বাড়ির সমস্ত কাজ করত আর বাওয়াং মেরাহ মায়ের আদরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাওয়াং মেরাহ এবং বিধবা মা শুধু নিজেদের সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। বাওয়াং পুতিহ কখনোই এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেনি এবং সে সব সময় তার সৎমা এবং বোনের সেবা করত।
একদিন সকালে বাওয়াং পুতিহ নদীতে কাপড় ধুচ্ছিল। অজান্তেই তার মায়ের একটি কাপড় নদীতে ভেসে গেল। তার সৎমায়ের কাছ থেকে শাস্তির ভয়ে, বাওয়াং পুতিহ কাপড়ের সন্ধানে নদীর ধারে হাঁটতে থাকে।
সে অনেক খোঁজ করল, কিন্তু খুঁজে পেল না। অবশেষে বাওয়াং পুতিহ নদী অনুসরণ করে একটি গুহায় পৌঁছায়। সেখানে একজন বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে তার দেখা হয়। বাওয়াং পুতিহ বৃদ্ধকে তার হারানো কাপড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বৃদ্ধা একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন না, তার অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। বৃদ্ধ মহিলা পোশাকটি বাওয়াং পুতিহকে ফেরত দেওয়ার কথা বললেন। যদি বাওয়াং পুতিহ তাকে তার কাজে সহায়তা করেন। বাওয়াং পুতিহ কঠোর পরিশ্রমে বৃদ্ধ মহিলার সকল কাজ করে দিলেন এবং তার কাজে বৃদ্ধা খুশি হলেন। বৃদ্ধ মহিলা শুধু বাওয়াং পুতিহকে তার হারিয়ে যাওয়া কাপড় ফিরিয়ে দিলেন এবং উপহার হিসাবে দুটি কুমড়ার মধ্যে একটি পছন্দের প্রস্তাব দিলেন। বাওয়াং পুতিহ লোভী না হওয়ায় দুটি কুমড়ার মধ্যে ছোট কুমড়া বেছে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
শেষ বিকেলে বাড়ি ফিরে, বাওয়াং পুতিহ বিধবা সৎমা এবং বাওয়াং মেরাহের ক্রোধের মুখোমুখি হন।
বাওয়াং পুতিহ এ দুজনের কাছে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার বর্ণনা করল। তার সৎমা তখনো রাগান্বিত হয়ে একটি ছোট কুমড়াটিকে থেঁতলে দিল। কুমড়া ফেটে সোনার গয়না এবং হীরার অলঙ্কার বের হয়ে আসল। যা দেখে লোভী বাওয়াং মেরাহ বাওয়াং পুতিহের বলা পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করল।
বাওয়াং মেরাহ স্বেচ্ছায় তার মায়ের কাপড়টি নদীতে হারিয়ে ফেলেল, নদীর ধারে হেঁটে আর লোকদের জিজ্ঞাসা করে এবং অবশেষে সেই গুহায় এল যেখানে বৃদ্ধ মহিলা থাকতেন। যাইহোক, বৃদ্ধ মহিলার তাকে তার কাজে সহায়তার জন্য অনুরোধ জানাল কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করল। এবং বৃদ্ধ মহিলার কাছ থেকে তার বড় কুমড়া জোর করে নিয়ে নিল। বাওয়াং মেরা সুখে বড় কুমড়া নিয়ে ঘরে ফিরল। বিধবা ও বাওয়াং মেরা কুমড়া থেঁতলে দিল। তবে কুমড়ার ভেতর থেকে বিভিন্ন ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ বেরিয়ে এল।
এদিকে বাওয়াং পুতির যখন মন খারাপ থাকত তখন সে তাদের বাড়ির পুকুরের একটি মাছের সঙ্গে কথা বলত। একদিন বাওয়াং মেরাহ বাওয়াং পুতিহকে লুকিয়ে মাছের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। বাওয়াং পুতিহ চলে যাওয়ার পর, বাওয়াং মেরাহ মাছটিকে পুকুরের মাছটিকে ধরে রান্না করে বাওয়াং পুতিহকে খাওয়ায়। বাওয়াং পুতিহর খাওয়া শেষ হলে তার সৎমা এবং সৎবোন মাছটি সম্পর্কে বলে। বাওয়াং পুতিহ এর জন্য অনুশোচনায় করে।
বাওয়াং পুতিহ মাছের কাঁটা সংগ্রহ করে একটি গাছের নিচে একটি ছোট কবর দেয়। পরের দিন যখন সে কবর কাছে যায়, তখন সে অবাক হয়ে দেখে যে মাছের কবরের ওপর একটি গাছ জন্ম নিয়েছে। গাছের একটি ডাল থেকে একটি সুন্দর দোলনা দেখা দিয়েছে। যখন বাওয়াং পুতিহ দোলনায় বসে একটি পুরানো লুলাবি দুঃখের গান গায়, তখন এটি জাদুকরীভাবে দুলতে থাকে।
বাওয়াং পুতিহ যখনই সময় পায় তখনই এই ম্যাজিক দোলনায় দোল খায়। একদিন, যখন সে জাদুর দোলনায় ছিল, তখন একজন যুবরাজ পাশের জঙ্গলে শিকার করতে এসে তার গান শুনতে পায়। যুবরাজ তার কণ্ঠের শব্দ অনুসরণ করে, কিন্তু সে তার কাছে যাওয়ার আগেই বাওয়াং পুতিহ রাজ কুমারকে দেখতে পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে যায়।
যুবরাজ এবং তার সঙ্গীরা অনেক অনুসন্ধান করে বাওয়াং পুতির বাড়ি খুঁজে পান। বাওয়াং মেরাহের মা যুবরাজকে দেখে বাওয়াং পুতিহকে রান্নাঘরে লুকিয়ে থাকার নির্দেশ দেন। যুবরাজ এ সময় সৎমায়ের কাছে দোলনা এবং এতে বসা মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করে। বাওয়াং মেরাহের মা তখন যুবরাজের কাছে বলেন, তিনি যে মেয়েটির কথা শুনেছেন সে তার সুন্দর এবং প্রতিভাবান মেয়ে বাওয়াং মেরাহ। যুবরাজ বাওয়াং মেরাহকে অনুরোধ করেন তাকে দেখাতে কীভাবে সে জাদুকরী দোলনায় চড়ে গান গাইতে।
বাওয়াং মেরাহ এবং মা প্রিন্সকে জাদুর দোলনার কাছে নিয়ে যান। বাওয়াং মেরাহ দোলনায় বসে গান গাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সে পারে না এবং দোলনাও দুলে না। যুবরাজ এতে রাগান্বিত হন, বাওয়াং মেরাহের মাকে সত্য বলার আদেশ দেয়। বাওয়াং মেরাহের মা স্বীকার করতে বাধ্য হন এবং ঘরে লুকিয়ে রাখা বাওয়াং পুতিকে বের করে আনেন।
প্রিন্স বাওয়াং পুতিহকে দোলনায় আনে এবং সে গান গাইতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই জাদুর দোলনা দোলা দিতে শুরু করে। এরপর যুবরাজ বাওয়াং পুতিহকে বিয়ে করেন। তারা সুখের সঙ্গে বসবাস করতে লাগলেন।
লেখক: মো. এরফান রাশেদ, দারমাশিশওয়া স্কলার ২০১৯-২০২০, ইন্দোনেশিয়া
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]