শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণে কলম্বোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
বাংলাদেশ হাইকমিশন গতকাল মঙ্গলবার সকালে কলম্বোর ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরে প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন জেলা থেকে আগত স্কুলের শতাধিক ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে বহু ভাষাভাষী বর্ণাঢ্য এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করেছে। শ্রীলঙ্কার উচ্চশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুরেশ রাগাভান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থারাকা বালাশুরিয়া, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিকবিষয়ক সচিব, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা চত্বর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও অন্য অভ্যাগতরা রং আর তুলির আঁচড়ে নিজ নিজ মাতৃভাষায় তাঁদের অনুভূতি চত্বরে রক্ষিত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন। ভাষাশহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা ও বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিবারের সদস্যদের সমবেতভাবে গাওয়া অমর একুশের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
দিবসটি পালনের অংশ হিসেবে দূতাবাস দুই মাসব্যাপী শ্রীলঙ্কাজুড়ে স্কুলছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘মাতৃভাষা: বৈচিত্র্যে-ঐক্য’। আজকের অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ভিন্ন ভাষাভাষীর একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কলম্বোর স্বামী বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মালদ্বীপ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সার্ক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শ্রীলঙ্কার স্থানীয় শিল্পী ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের শিশুরা তাদের নিজ নিজ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মাতৃভাষার প্রতি তাদের ভালোবাসা—নৃত্য, সংগীত ও আবৃত্তির মাধ্যমে তুলে ধরে। অন্তত আটটি বিভিন্ন ভাষায় পরিবেশনাগুলো সাজানো ছিল। একটি জনপ্রিয় কোরিয়ান কে-পপ পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। সবার পরিবেশনাই দর্শকের মধ্যে ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়।
রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম তাঁর সূচনা বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এর তাৎপর্য বর্ণনা করেন। তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা এবং একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য মাতৃভাষার ভূমিকার ওপর জোর দেন। উচ্চশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুরেশ রাগাভান শ্রীলঙ্কার তিনটি ভাষাতে (ইংরেজি, সিংহলী ও তামিল) বক্তব্য দেন।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের স্থানীয় দপ্তর ও শ্রীলঙ্কা স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাস বর্ণাঢ্য এ আয়োজন করে। স্যার জন কোটেলাওয়ালা ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে শ্রীলঙ্কা স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় হাইকমিশন একটি রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করে। বাংলাদেশ হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। অতঃপর ভাষাশহীদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি