ওয়ান ফর ইউ—শেষ সবাই

বছর দুয়েক আগের কথা। একদিন একজন ক্রেতা দোকানে এসে দুটি ২০০; অর্থাৎ ৪০০ রেন্ড (দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রার নাম) আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘প্লিজ, ফোর হান্ড্রেড ওয়ান ফর ইউ।’ আমি তো খুশিতে আত্মহারা। কারণ, কাস্টমার যখন আমাকে রেন্ড দিয়ে বলেন, ‘এটা তোমার জন্য,’ তখন আমি মহাখুশি। সুতরাং আমি তাঁকে ১০-১২ বার থ্যাঙ্ক ইউ দিয়ে দ্রুত রেন্ডগুলো নিয়ে আমার পকেটে রেখে দিলাম। তারপরও তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন আমার সামনে। ভাবলাম, তিনি হয়তো আমার কাছ থেকে আরও থ্যাঙ্কস নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। সুতরাং আমি আরও কয়েকবার তাঁকে থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ দিয়ে দিলাম। তবু তিনি আমার সামনে দাঁড়িয়েই রইলেন; অর্থাৎ কাউন্টার ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছেন।

পেছনে আরও কিছু ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন; অর্থাৎ কাউন্টারের সামনে জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমি প্লিজ বলে তাঁকে একটু সরতে বললাম। তিনি সামান্য একটু সরে দাঁড়ালেন। এ ফাঁকে দুই তিনজনকে সেবা দিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্লিজ, গিভ মি ওয়ান ফর ইউ।’ তখন আমার মাথায় চিন্তা ঠুকে গেল। ওয়ান ফর ইউ আবার কী? তাহলে কী তিনি আমাকে ৪০০ রেন্ড দিলেন না? বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু হলো। কথা বলতে বলতে অবশেষে বুঝতে পারলাম, আসলে ওয়ান ফর ইউ কি। আমি পকেট থেকে বের করে তাঁর টাকা ফেরত দিলাম। আমার ৪০০ রেন্ডের মহাখুশি ধুলায় ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

এখন জানা যাক, ওয়ান ফর ইউ কি? এটা একটা জুয়া অ্যাপস। এয়ার টাইম মেশিনে অ্যাপস আছে, সেখান থেকে ক্রেতা তাঁর চাহিদা অনুযায়ী ভাউচার কিনতে পারেন। ভাউচারে পিন নম্বর থাকে। এই পিন নম্বর ফোনে বা অ্যাপসে লোড দিতে হয়। তারপর জুয়া খেলা শুরু হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলমান খেলাধুলার ওপর বাজি ধরা যায়। আবার স্পিন আকারের ভিত্তিতে জুয়ার আসরে অংশ নেওয়া যায়, যেটাকে ক্যাসিনো বলতে পারি।

ওয়ান ফর ইউ-এর পাশাপাশি এমন আরও কিছু অ্যাপস আছে। যেমন: ওটিটি, ব্লু ভাউচার, হলিউড ইত্যাদি। সব কটিরই বিষয়ভিত্তিক একই। একেকজন তাঁর পছন্দ অনুযায়ী ভাউচার কিনে থাকেন। পাঁচ রেন্ড থেকে শুরু করে যেকোনো মূল্যের ভাউচার সংগ্রহ করা যায়। আমার কাছ থেকে অবশ্য এক কাস্টমার একযোগে ছয় হাজার রেন্ডের ভাউচার ক্রয় করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি জুয়া বা ওয়ান ফর ইউ খেলে কত টাকা জিততে পেরেছিলেন বা আদৌ জিততে পেরেছিল কি না, আমি তা জানতে পারিনি। তবে তাঁর আগে ওই ব্যক্তি একবারে বেশ কিছু টাকা জিততে পেরেছিলেন বলে আমার মনে হলো। বেশ কিছু বলতে অনুমানভিত্তিক সাত-আট হাজার রেন্ড হতে পারে। সেই লোভে এসে বুকের পাটায় বৃহস্পতি ভর করায় প্রত্যুত্তরে ছয় হাজার রেন্ডের ভাউচার কিনেছিল।

এ দেশে ওয়ান ফর ইউ জুয়ায় অংশগ্রহণ করছে না, এমন মানুষের সংখ্যা যৎসামান্য। অনেক ভালো ও ভদ্রলোক আছেন, যাঁরা এসবের ধারেকাছেও যান না। আবার এমনও লোক আছেন, যাঁদের মনে করি যে তাঁদের পক্ষে জুয়া খেলা সম্ভব নয়, অর্থাৎ তাঁদের ভদ্রের তালিকায় স্থান দিয়ে থাকি। কিন্তু তলেতলে আপস করে ফেলেছেন ওয়ান ফর ইউ-এর সঙ্গে। এমন জাতীয় খেলোয়াড়েরা যখন ওয়ান ফর ইউ ভাউচার চান, তখন আঁতকে উঠি বটে। অনেকে আবার বুঝে যান যে তাঁর দ্বারা ওয়ান ফর ইউ ভাউচার এখান থেকে কেনা ঠিক হলো না বা লাজুক লাজুক ভাব—তখন এই কাস্টমার নিজ থেকেই বলে দেন যে এ ভাউচার তাঁর নয়, বাড়ির পাশের একজন তাঁর কাছে কিনতে দিয়েছেন। এ ধরনের কথা বলে দোকানদারকে বোকা বানিয়ে চলে যান।

এসব বেটওয়ে বা ক্যাসিনো এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। আগে তো মানুষকে ক্যাসিনো খেলতে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় যেতে হতো। এখন আর তা লাগে না। ক্যাসিনো মলে এখন আর জমজমাট লোকসমাগমে জমাট বাঁধে না। চায়নার উৎপত্তি ক্যাসিনো এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিছানায় পৌঁছে দিয়েছে। সবার হাতে হাতে। বেটওয়ের ওয়ান ফর ইউ, ব্লু ভাউচার, ওটিটি, হলিউড ইত্যাদি নামের অ্যাপসগুলো স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস, পথেঘাটে বা দোকান, কোর্ট-কাচারিসহ সর্বত্র অ্যালার্জির মতো কাজ করছে। এসব অ্যালার্জির সঙ্গে আপস করে আছেন সব ধরনের পেশাজীবী মানুষ।

সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিক্ষক, ছাত্র থেকে শুরু করে রাস্তার ভিকিও উঠে এসেছে এই ঘরোয়া ক্যাসিনোতে। এ ক্যাসিনোর যেসব অ্যাপস আছে, সেগুলোর মূল মালিক চায়না-হংকং। প্রথমে যখন ওয়ান ফর ইউ বা অন্যান্য অ্যাপস শুরু হলো; অর্থাৎ হাতের মুঠোয় চলে এল, তখন এসব অ্যাপসের ছিল উদারহস্তে দান করার মনমানসিকতা। জুয়ায় বিজয় অর্জন করার কথা শুনতে পেতাম অহরহ।

কয়েকজনের ওয়ান ফর ইউ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দেওয়ার গল্প শুনি। এসব জুয়া প্রথম পর্যায়ে যখন ফোনে এল, তখনকার মানসিক আগ্রহের কু ঝিকঝিক কেমন ছিল, আর ইদানীং সেই ব্যক্তির ওয়ান ফর ইউ ভাউচারের প্রতি আগ্রহের ঝিকঝিক শব্দের উচ্চারণ কতটুকু করছে, তা জানার চেষ্টা করি।

যখন ওয়ান ফর ইউ বেটওয়ে ফোনে অ্যাপস হয়ে এল, তখন অনেকের মন ধনী হওয়ার অদ্ভুত বাসনায় ভাসতে দেখা গেল। তেমনি একজন ভি. ইয়ান। প্রতিদিন হাজার হাজার রেন্ড ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনেছেন। ৫০০, ৭০০, ১০০০ করতে করতে ৩০০০ রেন্ড পর্যন্ত খরচ করেছেন। এসব ভাউচার দিয়ে কিছু রেন্ড জিতে যেতেন। ইয়ানের জিতে যাওয়ার দিন লোভে পড়ে আশপাশের কিছু লোক ছুটে দোকানে যান ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনতে। তখন এই বেটওয়ে থেকে কেউ ৩ হাজার রেন্ড, কেউ ৫ হাজার রেন্ড, ১০ হাজার, ২০ হাজার রেন্ড জয়ী হওয়ার খবর পেয়েছি। সত্য হোক বা মিথ্যা, ৪৫ হাজার রেন্ড কেউ একজন জিতেছেন, সেই খবরও কানে এসেছিল।

আমি সরাসরি একজন ওয়ান ফর ইউ জুয়াড়ির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নাকি ২টি প্রাইভেট কার কিনেছেন ওয়ান ফর ইউ খেলে। নাম ডমিঙ্গ। প্রথম দিকে তিনি দিনে হাজার হাজার টাকার ভাউচার নিতেন দোকান থেকে। সারা দিন ওই ওয়ান ফর ইউ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাত। ভুম ভুম শব্দ করে গাড়ি চালিয়ে দোকানে এসে ভাউচার কিনে নিয়ে বাসায় গিয়ে ওয়ান ফর ইউ-এ ঠুকে যেতেন। বেশি লোভ করতে করতে সব হারিয়েছেন আবার। একসময় ভাউচার কেনার টাকা না থাকায় গাড়ি বিক্রয় করতে বাধ্য হন। এভাবে দুটি গাড়িই ডমিঙ্গর হাতছাড়া হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ধীরে ধীরে ভাউচার কেনার গতি হ্রাস করে দিলেন। কারণ, আগের মতো ইদানীং লাভবান হওয়া যাচ্ছে না, লোকসানে থাকতে হচ্ছে। বেশি টাকার ভাউচার কেনার সামর্থ্য আর নেই। শুয়ে শুয়ে মনে মনে হয়তো ভাবেন, টাকা থাকলে ভাউচার কিনতাম। ভাউচার কিনলে টাকা হতো। আর টাকা থাকলে জমি কিনতাম। স্বপ্নের শেষ নেই ডমিঙ্গর।

ওয়ান ফর ইউ খেললেই লাভবান হওয়া যায়, এমন আশা থেকে কেউ কেউ ছোটখাটো বা কষ্টের চাকরি ছেড়ে দিয়ে দোকান থেকে ভাউচার কিনে বিছানায় এসে পিঠের নিচে তুলতুলে নরম বালিশে হেলান দিয়ে ওয়ান ফর ইউ খেলতে লাগেন। যদি এক হাজার টাকা বাগে আনতে পারেন, সেখান থেকে ২০০ টাকার খাবার-জাতীয় বাজার করে নিলেন। বাকি ৮০০ টাকা নিয়ে আবার ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনে বাসায় ফিরে আসেন। এবার আর নসিবে আসে না। লোকসানে টাকা কেল্লাফতে। যখন তা দুনয়নে নেশা লেগে যায়, তখন কি আর শয়তান চুপিসারে কানে কানে কিছু না বলে থাকতে পারে? মোটেও পারে না। তাই তো ঘর থেকে আরও কিছু টাকা নিয়ে দোকানে ছুটে যান ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনতে।

আরও একজন আছেন, নাম জানা নেই। তবে দোকানে এলে হ্যালো সিনবাদ বলেই ডাকি। দোকানে এসে তাঁর কাছে যদি কোনো কিছু অসংগতি মনে হতো, তবে তিনি হারাম হারাম বলে ধিক্কার জানাতেন। সেই হ্যালো সিনবাদ ব্যক্তিটিও গিভ মি থ্রি টোয়েন্টি ওয়ান টেন বলে ৭০ রেন্ড করে প্রতিদিন ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনতে লাগলেন। তখন থেকে তিনি হারাম শব্দটি মালুম ভুলে গেলেন।

ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা আছেন। লোকে বলে, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। ওয়ান ফর ইউ খেলা শুরু করলেন। দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার দোকানে এসে ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কেনেন। ওয়ান ফর ইউ খেলার আগে হাসিখুশি হয়ে দোকানে আসতেন। সঙ্গে করে নাতিপুতিদেরও নিয়ে আসতেন। পেনশনের টাকা, যা মনে চাইত তা-ই কিনতেন। ওয়ান ফর ইউতে খেয়েছে তাঁকে। এখন আর দোকানে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে আসেন। মুখ গম্ভীর, যেন হাসতে মানা। এখন ৫ রেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ২০ রেন্ড ভাউচার কিনতে পারেন। নাতিপুতিদের আগের মতো কিছু কিনে দিতে পারেন না। ওরা এটা-ওটা নিতে চায়। না পেয়ে কাঁদতে থাকে। কী আর হইব কাঁন্দিয়া?

টনিক, স্কুলপড়ুয়া ছেলে। মা-বাবা বাড়ি থেকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন হলিউড বেটওয়ে কিনতে। প্রতিদিন ৩০০, ৪০০, ৫০০ রেন্ডের ভাউচার নিত। মাঝেমধ্যে জিতে যেত। সেই জিতে যাওয়া টাকা নিয়ে আবার ছুটে যেত দোকানে। ভাউচার কিনে বাড়িতে গিয়ে আবার শুরু হতো বেটওয়ে খেলা। কিন্তু না, ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল সব।

নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনও গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল মারতে মারতে কচকচে টাকা কচলাতে কচলাতে নিয়ে আসেন দোকানে। বেতন পেয়ে বাসায় ফিরে আর দেরি নয়। হাজার রেন্ডের ব্লু ভাউচার কিনে হলিউড অ্যাপসে মগ্ন। কিছু জিততে পারেন নাকি পারেন না, আমি তা বুঝতে পারি না। তবে আগের মতো মন থেকে জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছেন। মনে হয়, মহুয়া বনে মধু হচ্ছে না।

এমন অনেক সরকারি চাকরিজীবী আছেন, যাঁরা ওয়ান ফর ইউ খেলেন। আমি একবারে এভাবে বলতে পারি যে এ দেশের কোনো পেশারই মানুষ ওয়ান ফর ইউ থেকে দূরে আছেন, তা বলা যাবে না। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণের এ খেলায় অংশগ্রহণকারী নীরবে-নিভৃতে অংশগ্রহণ করে মাত্র। আর এ খেলার মূল বেনিফিট তুলে নিয়ে হাততালি দিচ্ছে চীন-হংকং-তাইওয়ান।

প্রাথমিক পর্যায়ে যে গতি ছিল, তার তুলনায় গতি অনেক কমেছে বলে ধারণা। তবে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে, এটা ঠিক। কারণ, কিছু নিত্যনতুন মানুষের ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে ঝিমিয়ে গেছেন। আগে যে পরিমাণ টাকার ভাউচার কিনতেন, এখন কিছুটা ঝিমিয়ে গেছেন। এই ঝিমিয়ে পড়ার দলে মূলত তাঁরাই, যাঁদের সাংসারিক জীবনে আর্থিক টানাপোড়েন আছে বা যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। তবে যাঁদের মাসিক একটা ইনকাম আছে, তাঁরা কিন্তু এখনো এসব বেটওয়ে থেকে পিছু হটেননি। যদি ২ হাজার রেন্ডের ভাউচার কেউ কিনে থাকেন, আর সেখান থেকে ৮০০ রেন্ড জিতে গেলে খেলার স্পৃহা জেগে থাকে।

ভিকি বা টোকাই শ্রেণি মানুষ, যাঁরা পথেঘাটে খাবার খুঁটে খুঁটে খান। প্রথম দিকে তাঁরাও ওয়ান ফর ইউ খেলেছেন। কোনো উপায়ে ৫ বা ১০ রেন্ড ম্যানেজ করতে পারলেই দোকানে এসে ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনেছেন। হাজার হাজার টাকা জিতবেন, গাড়ি-বাড়ি কিনবেন, এমনই আশা ছিল। কিন্তু সেই আশা বারবার তাসের ঘরের মতো যখন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তখন বেদনায় ঘুরপাক খেতে খেতে রাতের খাবার না খেয়েই চাটাইয়ের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকেন সারা রাত। যখন ষোলো আনা শিক্ষা হলো, তখন এসব ভিকি বা টোকাইকে আর ওয়ান ফর ইউ ভাউচার খুব বেশি কিনতে দেখা যায় না।

সর্বশেষ যাঁকে মরণফাঁদে আটকে যেতে দেখলাম, তিনি হচ্ছেন কলিন। চায়না টাউনে চাকরি করেন। নিজ বাসা থেকে অফিসে আসা-যাওয়া করেন। তাঁকে এই ভাইরাস বেশি দিন আক্রমণ করেনি। আক্রমণের আগে দোকানে খুব একটা বেশি দেখা যেত না। অফিসে যাওয়ার আগে অথবা অফিস থেকে ফিরে এসে দামি এক প্যাকেট সিগারেট কিনে বাসায় ফিরে আর বের হতেন না। ছুটির দিনে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দোকানে এসে কিছু কেনাকাটা করতেন। কিন্তু যখন ওয়ান ফর ইউ-এর নেশায় বুঁদ হলেন, তারপর থেকে গণেশ উল্টে গেল। দিনে ৪-৫ বার দোকানে আসেন। দামি সিগারেট না কিনে সস্তা কেনে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫০০ রেন্ডের ওয়ান ফর ইউ ভাউচার কিনে থাকেন। বেতনের টাকা শেষ হলে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা খরচ করতে থাকেন। তখন ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করেন। মাঝেমধ্যে কিছু টাকা জুয়া খেলে জিতে যান। যখন জিতে যান, তখন তিনি আরও উজ্জীবিত হন। এখন আর বেশি টাকার ভাউচার কিনতে পারেন না। কোনোভাবে ১০ টাকা বা ১৫ টাকা হাতে এলেই চলে আসেন দোকানে ওয়ান ফর ইউ কিনতে। বলা যায়, তিনি এখন ফতুর।

চাকরি করা অবস্থায় অনেকে আছেন, মালিককে না জানিয়ে গোপনে ওয়ান ফর ইউ খেলে থাকেন। ১০ দিন চোরের, ১ দিন গেরস্তের। চুরি করে খেলতে খেলতে একদিন ধরা পড়ে যান মালিকের হাতে। মালিক বুঝতে পারেন, ভাউচারগুলো বৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। অবশেষে চাকরি হারাতে হয়। তাঁর যেন আম-ছালা সবই গেল। এমন কাহিনিও দুই-একটা শুনেছি। জুয়া খেলে কেউ ভালো কিছু করেছেন, এমন কথা শুনিনি, ধ্বংস ছাড়া।