নিজেকে ভালোবাসুন

একজন মানুষকে আপনি ভালোবাসেন আপনার সবটুকু সত্তা বিসর্জন দিয়ে। দিনরাত তার ভালো–মন্দের খোঁজ নেন। সে ঘুমিয়েছে কি না, খেয়েছে কি না, বাইরে থেকে ঠিকঠাক ফিরেছে কি না? দৈনন্দিন সব খবর না নিলে আপনার অস্থির লাগে। কারণ, আপনি তাকে খুব বেশি ভালোবাসেন। আর ভালোবাসলে এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো আপনার বিপরীত মানুষও এত দিন থেকে আপনাকে ঠিক যতটুকু ভালোবেসে আসছে, যতটা আপনি বেসেছেন, সবকিছু ঠিকঠাক যখন চলছিল। স্বপ্নের ডালপালা মেলে যখন আকাশচুম্বী, তখনই খানেকটা ছন্দপতন।

ইদানীং আপনার কেন জানি মনে হচ্ছে, সে আপনাকে আগের মতো ভালোবাসছে না। যে মানুষ আপনাকে সারা দিনরাত অস্থির করে রাখত, সে কিনা ইদানীং তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আপনাকে আগের মতো সময় দিচ্ছে না। আপনি ফোন করলেও তাকে আগের মতো পাচ্ছেন না। সে কথা বললেও আগের মতো তাকে মেলাতে পারেন না। সেই আগের উচ্ছ্বাস পান না তার কথায়। অনেক সময় মান–অভিমান হতে হতে রাগ পর্যন্ত গড়ায়। কৈফিয়ত চাইতে গেলে আবার তার রাগ হয়।

আপনার প্রেমিক আপনাকে সত্যি কথা বলছে তো? মডেল হয়েছেন হিমু ও শাওন

অতঃপর আপনি নিজে নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যস্ততা কমলে সে আগের মতো ফিরে আসবে। আপনি তার একটা মেসেজের জন্য রাত জেগে অপেক্ষায় কাটান। কেঁদে বালিশ ভেজান। অথচ মানুষটা মেসেজ সিন করার বা রিপ্লাই দেওয়ার সময়টুকু পায় না। কারণ, সে ব্যস্ত তার কাজে কিংবা অজুহাতে।

হ্যাঁ, অজুহাত। ঠিক শুনেছেন। ইদানীং তার ব্যস্ততার অজুহাত, নিজেকে দূরে রাখার নানা অজুহাত নিয়ে আপনার সন্দেহ বাড়ছে। আপনার মনে হচ্ছে, একটু একটু করে সে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিচ্ছে আপনাকে। আপনাকে সরিয়ে দিচ্ছে মানে অন্য কেউ এসে ধীরে ধীরে তার জীবনে প্রবেশ করছে। এমনটা হয়, আবার হয়ও না।

আপনি যখনই তার কাছে জানতে চান, তখনই ব্যস্ততার অজুহাত সামনে আসে। কিংবা সিনক্রিয়েট করছে। আপনাকে সন্দেহপ্রবণ বলছে। অতঃপর আপনি নিরুপায়। কী বলবেন, কী বলে মনকে প্রবোধ দেবেন, খুঁজে পান না৷ আগের মতো সে মেসেজ বা কল করছে না। আগের মতো কথা বলছে না, এটা মেনে নিতে আপনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে; কিন্তু সত্য কথা কি জানেন, এখান থেকেই আপনার কষ্টের শুরু। এ পৃথিবীতে মানুষ এত ব্যস্ত হয় না যে কারও খবর নেওয়ার মতো সময়টুকু থাকে না! ব্যস্ততা কেবল কাজের জন্য নয়, তা হতে পারে তোমাকে আমার এখন আগের মতো ভালো লাগছে না, আমি ফিল করতে পারছি না।

আপনি কী ধারণা করেছেন কখনো, যে মানুষ আপনাকে ব্যস্ত আছি বলে মেসেঞ্জারের একটিভ নাউ অফ করে রেখেছে। সেই একই মানুষ অন্য আরেকজনকে বলছে আরে নাহ্‌... তুমি বলো, আমি ফ্রি আছি, তোমার জন্য আমার অফুরন্ত সময় আছে। এই একই কথা শুরুর দিকে আপনাকে বলেছিল। মানুষ যতই ব্যস্ত থাকুক, সে তার প্রিয় মানুষকে সব সময়ই সময় দেয়। তবে সবাইকে দেওয়ার কারণ নেই। বুঝে যেতে হবে আপনি প্রিয় তালিকায় নেই, সে তালিকায় আপনাকে সরিয়ে অন্য কেউ দিব্যি বসে আছে বিধায় আপনার জন্য তার সেই সময় আর নেই।

আপনি হয়তো জানেন, একসময় আপনার প্রতি তার মুগ্ধতা, ভালোবাসা এত ছিল যে হাজার ব্যস্ততা থাকলেও সে আপনাকে দেওয়া সময়টুকু রঙিন করে রাখত, অথচ এখন তার সময় নেই। জানেন, সবকিছুই নির্ভর করে আপনি তার কাছে এখন কতটুকু প্রিয়, আপনার প্রায়োরিটি কতটা আছে তার কাছে, সেটা ভেবেই সে আপনাকে সময় দেবে। মনে রাখবেন, আপনার জন্য ব্যস্ত হলেও অন্য কারও জন্য তার অফুরন্ত সময়, এটাই সত্য। তা মেনে নেওয়া ছাড়া আপনার উপায় নেই।

যে মানুষ আপনাকে দিনরাত মেসেজ, কল দিয়ে জ্বালাত , সেই একই মানুষ ফোন রিসিভ করে না, অনলাইন থেকেও মেসেজ আনসিন রাখে, এর মানে কী বোঝেন আপনি! এর মানে, তোমাকে সময় দেওয়ার কোয়ালিটি টাইম আমার কাছে নেই। আমার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা নেই তোমার কথা শোনার। সে যখন আপনার আবেগ–অনুভূতির পরোয়া করছে না, আপনাকে বুঝতে হবে, তার নিজের অনুভূতি আপনার প্রতি অবশিষ্ট নেই।

আপনাকে দেখার জন্য যে অস্থির ছিল একসময়, আজ দেখতে চাইছে না, দেখা করতে চাইছে না। আপনাকে বুঝে নিতে হবে, তার জীবনে নতুন কারও আগমন ঘটেছে। কেউ একজন তার প্রিয় তালিকায়, তার বুকের হৃৎপিণ্ডে জায়গা করে নিয়েছে। যেখানে আপনাকে সরিয়ে তাকে বসিয়েছে। আপনার সেখানটায় প্রবেশাধিকার নেই।

যদি তার ইচ্ছা হয়, হাজার ব্যস্ততায় আপনাকে নক দেবেই। আর যদি অফুরন্ত সময়ও থাকে ইচ্ছা না হয়, তবে একবিন্দু সময় দিতেও সে অপারগ। বুঝতে হবে, এখানেই থেমে যেতে হবে। থেমে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়। থেমে যাওয়া মানে, একটা ভুল মানুষ থেকে বের হয়ে আসা। থেমে যাওয়া মানে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, নিজেকে ভালোবাসা।

একটা মানুষ চলে যেতে চায়, তাকে কেন জোর করে রাখবেন। কেন তার কাছে কৈফিয়ত চাইবেন। যে যাওয়ার সে নানা বাহানায় চলে যাবেই। তাকে আটকনোর সাধ্য কারও নেই। যে এত ভালোবাসার পরও আপনাকে বুঝতে চায় না, আপনার কষ্ট–যন্ত্রণা তার হৃদয় স্পর্শ করে না, তার জন্য কেনই–বা নিজেকে কষ্ট দেবেন; বরং তাকে চলে যেতে দিন। একটা ভুল মানুষ জীবনে থাকার যন্ত্রণা বড্ড ভয়াবহ।

মানুষটার বুকের গভীর থেকে যদি আপনার প্রস্থান হয়, তাকে স্মৃতির বাহানায় ধরে রেখে কী লাভ! কারও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে ধরে রাখা কঠিন। দরকারই–বা কী! কেউ চলে গেলে খারাপ লাগা থাকবে স্বাভাবিক। নিজেকে বড্ড একাকী মনে হবে। রোজ রাতে তার স্মৃতি মনে করে কাঁদবেন। তবু কয়েকটা দিন সহ্য করুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন অন্য কাজে। মনকে অন্য দিকে সরিয়ে নিন।

আপনার একাকী বিষণ্ন সময়গুলোতে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো কথা বলুন, যে বন্ধুদের একদিন ভীষণ অবহেলায় আপনি ফেলে এসেছিলেন। আর যা–ই হোক, বন্ধুত্ব সহজে হারায় না। তাই যাদের একদিন ছেড়ে এসেছিলেন ওই নির্দিষ্ট একজন মানুষকে বেশি টাইম দেবেন বলে, যার জন্য নিজের সব সত্তা, বন্ধুত্ব বিসর্জন দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। যে আপনাকে অন্যান্য কাছের মানুষ থেকে দূরে রেখেছিল কিংবা আপনি নিজেই তার জন্য সবার থেকে দূরে এসেছিলেন, ভেবেছিলেন, অন্য কেউ থাকলে সে কষ্ট পাবে, ঈর্ষান্বিত হবে। আপনি তাকে কষ্ট দিতে চাননি!

অথচ আপনাকে একা করে দিয়ে সে দিব্যি আড্ডায় মত্ত থাকে। অন্য আরেকজন নিয়ে স্বপ্নে বিভোর থাকে। এখন হয়তো সে অন্য মানুষ। তার নতুন মানুষ আছে। তাহলে কেন আপনিও বদলাবেন না। কেন তার জন্য নিজেকে নিঃশেষ করবেন। জেনে রাখুন, তার ভালোবাসাটা কেবল আবেগ, মোহ ছিল। আর আপনার ভালোবাসা ছিল সত্য। মনে করবেন কেউ কেউ আসে চলে যাওয়ার জন্য, কেউ কেউ আসে জীবনকে অগোছালো করে দেওয়ার জন্য, কেউ কেউ আসে কাঁদার জন্য। যখন সে নিজেই চলে যায়, আপনার কিছু করার থাকে না। এখান থেকে বদলে যাওয়ার প্রত্যয় নিন। সম্ভব না বলবেন না, বলুন সম্ভব। একটু চেষ্টা আর ধৈর্য থাকলেই সম্ভব।

এমন একটা স্বার্থপর মানুষের জন্য নিজের শান্তি কেন নষ্ট করবেন। চেষ্টা করুন বেরিয়ে আসতে। একটা জীবনে খানিক সময়ে ঝড়বৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের বানানো কুঁড়েঘর ভেঙে পড়ে। তাই বলে কেউ থেমে যায় না। ঝড়–তুফান শেষে নতুন করে আবার ঘর বাঁধে। আপনিও সে রকম উঠে দাঁড়ান। নিজেকে নতুন করে তৈরি করুন। মনে রাখবেন, আপনি আছেন বলেই পৃথিবীটা সুন্দর। তাই নিজেকে ভালোবাসুন। অবশ্যই নিজেকে ভালোবাসুন। নিজেকে ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর কিছু নেই!