বেশি তেল মারা ভালো নয়

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার ভালোবাসা সুন্দর ও মধুময়। আমার মন হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। আমি ভালোবাসার মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর আহ্বানে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো অন্যায় করতে চাই না। আমি তেল মেরে নয়, ভালেবাসার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। যাদের মনের মধ্যে এ আর্তনাদ, কখনো কী আমরা সেসব মানুষের কথা ভেবেছি?

আজ পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ মনে পড়ছে কেন, এত দিন লেগে গেল বুঝতে যে তারাও তেল মেরে মানুষের মধ্যে বেঁচে আছে। সারা জীবন শিক্ষা পেয়েছি, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে, সুখে-দুঃখে একসঙ্গে বসবাস করতে হবে। অথচ একবারও ভাবিনি, তারা এসব তেল মারা কথা বলে আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। তারা তেল মারতে মারতে এতই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে, সেটা তারা বুঝতে পারছে না। পারছে না দেখতে, পারছে না উপভোগ করতে, সেই অনুভূতি।

আজ একটি ঘটনা চোখে পড়ল। সেটা দেখার পর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বল তো, কি কারণ থাকতে পারে বাঙালিদের এত তেল মারার পেছনে? ও মা, সে দিব্যি আমাকে তেলের বর্ণনা থেকে শুরু করে তেল মারার গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানাল। শুধু কি তা-ই? হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তেলের ওপর লিখাটি আমাকে ধরিয়ে দিল, যার অংশবিশেষ যেমন সেখানে বলা হয়েছে, তেলের আরেক নাম স্নেহ এবং স্নেহ ও তেল একই পদার্থ।

মূল কথা হলো, আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ করো, অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তেল দিই।

ছোটবেলায় সাগরিকা ছবি দেখেছিলাম ঢাকার পিলখানা সিনেমা হলে। তখন কেদারদাকে তার এক বন্ধু, নাম মনে নেই বলেছিল নিজের চরকায় তেল দিতে। তখন কেদারদা উত্তরে বলেছিল, যতটুকু মনে পড়ে, ‘যার তেল দেওয়ার অভ্যাস, তার কাছে নিজ আর পর বলে কিছু নেই, চরকা পেলেই তেল দেয়।’ সে বহু বছর আগের কথা, তবে তেল দেওয়া নিয়ে এত সুন্দর করে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, তা আমার জানা ছিল না।

আমি জীবনে এত সুন্দরভাবে বিষয়টি নিয়ে কখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম তেলের ওপর অনেক কিছু লিখব, যেমন তেলের গুরুত্ব, তেলের ব্যবহার ও এর উপকারিতা। আমার মতো করে। কিন্তু তেল এমন এক বস্তু, যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এটি পানির সঙ্গে মেশে না। অথচ জৈব দ্রাবকের সঙ্গে মিশে যায়। তেলে উচ্চমাত্রার কার্বন ও হাইড্রোজেন রয়েছে।

বিভিন্ন প্রকারের তেল, যেমন উদ্ভিজ্জ তেল, ঔষধি তেল ও অপরিহার্য উদ্বায়ী তেল প্রদত্ত সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সব ধরনের তেলই আদিতে জৈব পদার্থ থেকে উৎসারিত। বিশেষ করে শর্ষের তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে মালিশ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্মগ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।

শর্ষের তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামের উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যানসারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে। তবে সেটা শতভাগ ভেজালমুক্ত হতে হবে।

ওপরের বর্ণনায় যতটুকু জানলাম, তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তেলের গুরুত্ব আমাদের জীবনে এত বেশি, আগে আমার জানা ছিল না। তবে এতটুকু বলতে চাই, ভেজাল শর্ষের তেল কি আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনবে? মোটেও তা নয়। দোকানের খোলা শর্ষের তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখবিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি শর্ষের তেল কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। তা ছাড়া অতিরিক্ত তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শিক্ষণীয় বা ভালো কিছু থেকে যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, সেটাকে আমরা নানাভাবে প্রয়োগ করি। অতএব তেলের গুণাগুণ এবং তার ব্যবহার বা তেল মারা অভ্যাসটা সেভাবেই আমাদের আচরণে ঢুকেছে। শিক্ষককে খুশি করতে আমরা সালাম করি, আদবকায়দা বা মার্জিত ভাষা ব্যবহার করি, প্রতিদিন আল্লাহকে খুশি করতে ভালো কাজ করি।

সবকিছুই মূলত তেল মারার মধ্যেই কিন্তু পড়ে। বন্ধুর কথায় যুক্তি দেখে আমি তার সঙ্গে তর্কে না গিয়ে একটু তেল মেরে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে আলোচনা শেষ করলাম।

ছোটবেলায় দেশে থাকতে শুনেছি যে বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কর্মী বলে কোনো কথা নেই—তাদের কাছে কোনোকিছুর জন্য গেলেই হয়, সালামি না হয় ঘুষ দিতে হয়। চাকরিতে প্রমোশনের দরকার, বসকে পটাতে হবে; বদলি হওয়ার দরকার তো বসকে তেল দিতে হবে।

বস হয়তো কিছু আশা করেননি, তারপরও অনেকে নিজ থেকে কিছু নিয়ে বসের বাড়ি হাজির হয়েছেন। এটাও শুনেছি, একবার একজন ইলিশ মাছ নিয়ে বসকে বলেছিলেন এ মাছ তার নিজের পুকুরের।

এখন ঘুষ, সালামি বা নিজ থেকে কাউকে কিছু দেওয়া এ ধরনের রেওয়াজ বাংলাদেশে অতীতে যেমন ছিল, এখনো আছে। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ কারও সম্পদ বা অর্থ হরণ না করে, বরং বিনিময় করে, তাকে তেল বলা হয়। আবার যেমন পাম্পপট্টি মারা বা ঘুষ দেওয়া—এসবও কিন্তু আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত। আমরা তেল মেরে, ঘুষ দিয়ে বা নিয়ে, পাম্পপট্টি মেরে আমাদের কার্য সাধন করতে ওস্তাদ। তবে আমাদের কথার শেষের দিকে দুজনই কেন যেন একমত হলাম—বেশি তেল খাওয়া, ব্যবহার করা, এমনকি তেল মারা ভালো নয়।

পারছে না দেখতে, পারছে না উপভোগ করতে, সেই অনুভূতি। আজ একটি ঘটনা চোখে পড়ল। সেটা দেখার পর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বল তো, কি কারণ থাকতে পারে বাঙালিদের এত তেল মারার পেছনে? ও মা, সে দিব্যি আমাকে তেলের বর্ণনা থেকে শুরু করে তেল মারার গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানাল। শুধু কি তা-ই? হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তেলের ওপর লিখাটি আমাকে ধরিয়ে দিল, যার অংশবিশেষ যেমন সেখানে বলা হয়েছে, তেলের আরেক নাম স্নেহ এবং স্নেহ ও তেল একই পদার্থ।

মূল কথা হলো, আমি তোমায় স্নেহ করি, তুমি আমায় স্নেহ করো, অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে তেল দিই। ছোটবেলায় সাগরিকা ছবি দেখেছিলাম ঢাকার পিলখানা সিনেমা হলে। তখন কেদারদাকে তার এক বন্ধু, নাম মনে নেই বলেছিল নিজের চরকায় তেল দিতে। তখন কেদারদা উত্তরে বলেছিল, যতটুকু মনে পড়ে, ‘যার তেল দেওয়ার অভ্যাস, তার কাছে নিজ আর পর বলে কিছু নেই, চরকা পেলেই তেল দেয়।’ সে বহু বছর আগের কথা, তবে তেল দেওয়া নিয়ে এত সুন্দর করে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, তা আমার জানা ছিল না।

আমি জীবনে এত সুন্দরভাবে বিষয়টি নিয়ে কখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম তেলের ওপর অনেক কিছু লিখব, যেমন তেলের গুরুত্ব, তেলের ব্যবহার ও এর উপকারিতা। আমার মতো করে। কিন্তু তেল এমন এক বস্তু, যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এটি পানির সঙ্গে মেশে না। অথচ জৈব দ্রাবকের সঙ্গে মিশে যায়। তেলে উচ্চমাত্রার কার্বন ও হাইড্রোজেন রয়েছে।

বিভিন্ন প্রকারের তেল, যেমন উদ্ভিজ্জ তেল, ঔষধি তেল ও অপরিহার্য উদ্বায়ী তেল প্রদত্ত সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সব ধরনের তেলই আদিতে জৈব পদার্থ থেকে উৎসারিত। বিশেষ করে শর্ষের তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে মালিশ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্মগ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।

শর্ষের তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামের উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যানসারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে। তবে সেটা শতভাগ ভেজালমুক্ত হতে হবে।

ওপরের বর্ণনায় যতটুকু জানলাম, তাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তেলের গুরুত্ব আমাদের জীবনে এত বেশি, আগে আমার জানা ছিল না। তবে এতটুকু বলতে চাই, ভেজাল শর্ষের তেল কি আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনবে? মোটেও তা নয়। দোকানের খোলা শর্ষের তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখবিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি শর্ষের তেল কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। তা ছাড়া অতিরিক্ত তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শিক্ষণীয় বা ভালো কিছু থেকে যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, সেটাকে আমরা নানাভাবে প্রয়োগ করি। অতএব তেলের গুণাগুণ এবং তার ব্যবহার বা তেল মারা অভ্যাসটা সেভাবেই আমাদের আচরণে ঢুকেছে। শিক্ষককে খুশি করতে আমরা সালাম করি, আদবকায়দা বা মার্জিত ভাষা ব্যবহার করি, প্রতিদিন আল্লাহকে খুশি করতে ভালো কাজ করি।

সবকিছুই মূলত তেল মারার মধ্যেই কিন্তু পড়ে। বন্ধুর কথায় যুক্তি দেখে আমি তার সঙ্গে তর্কে না গিয়ে একটু তেল মেরে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে আলোচনা শেষ করলাম।

ছোটবেলায় দেশে থাকতে শুনেছি যে বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কর্মী বলে কোনো কথা নেই—তাদের কাছে কোনোকিছুর জন্য গেলেই হয়, সালামি না হয় ঘুষ দিতে হয়। চাকরিতে প্রমোশনের দরকার, বসকে পটাতে হবে; বদলি হওয়ার দরকার তো বসকে তেল দিতে হবে।

বস হয়তো কিছু আশা করেননি, তারপরও অনেকে নিজ থেকে কিছু নিয়ে বসের বাড়ি হাজির হয়েছেন। এটাও শুনেছি, একবার একজন ইলিশ মাছ নিয়ে বসকে বলেছিলেন এ মাছ তার নিজের পুকুরের।

এখন ঘুষ, সালামি বা নিজ থেকে কাউকে কিছু দেওয়া এ ধরনের রেওয়াজ বাংলাদেশে অতীতে যেমন ছিল, এখনো আছে। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ কারও সম্পদ বা অর্থ হরণ না করে, বরং বিনিময় করে, তাকে তেল বলা হয়। আবার যেমন পাম্পপট্টি মারা বা ঘুষ দেওয়া—এসবও কিন্তু আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত।

আমরা তেল মেরে, ঘুষ দিয়ে বা নিয়ে, পাম্পপট্টি মেরে আমাদের কার্য সাধন করতে ওস্তাদ। তবে আমাদের কথার শেষের দিকে দুজনই কেন যেন একমত হলাম—বেশি তেল খাওয়া, ব্যবহার করা, এমনকি তেল মারা ভালো নয়।