শেফিল্ডে জমকালো ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত
উঁচু উঁচু টিলার বুক চিরে সবুজ পত্রপল্লবশোভিত গাছের আদুরে ছায়া আর পায়ের তলায় মাটির বুক আগলে থাকা সবুজ–সতেজ দূর্বাঘাস—এমন এক মোহনীয় প্রাকৃতিক মায়াবী গ্রাউন্ড ‘শেফিল্ড নরফল্ক হ্যারিটেজ পার্ক’। ইংল্যান্ডের সাউথ ইয়র্ক শায়ারের অন্যতম বৃহৎ এ পার্কে গত রোববার অনুষ্ঠিত হলো ‘ঈদ ফেস্টিভ্যাল বা ঈদ উৎসব ২০২৩।’ মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউস এবং ফেমিলিস রিলিফের যৌথ উদ্যোগে এ ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
আগের দিন শনিবার দিনভর ভারী বর্ষণ হলেও রোববার ভোরের আকাশ হেসে উঠে সোনালি রোদে। আকাশের এই হাসি বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চওড়া হতে থাকে। আগের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে একলাফে এ দিন সকালেই তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রিতে পৌঁছে, যা এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বলা যায় উৎসবের জন্য প্রকৃতি মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছে। এবারে ঈদ উৎসব শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ১২টা, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা চলবে। কিন্তু এমন মনু হরি আবহাওয়ায় সকাল থেকেই জমে উঠে নরফল্ক পার্ক। শিশুদের আনন্দ দিতে ইতিমধ্যেই বসানো হয় নানা ধরনের রাইড। সারি সারি অস্থায়ী খাবারের দোকান পসরা সাজিয়ে বসে পড়ে সবাই। যুক্ত হয় নারীদের বাহারি পোশাক নিয়ে নানা ধরনের স্টল। দুপুর ১২টায় দেখা যায় নরফল্ক পার্কের সবুজ মাঠটি কানায় কানায় ভরে উঠে। ঈদ উৎসবে মাতুয়ারা শিশু–কিশোর, তরুণ–তরুণী আর নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত উৎসব প্রাঙ্গণ। মূলত এটি ঈদ উৎসব হলেও ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এটি রূপ নেয় এক নান্দনিক সর্বজনীন উৎসবে।
কয়েক বছর থেকে নিয়মিতভাবে এ পার্কে ঈদ উৎসব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারে আয়োজন আরও বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হয়। শেফিল্ডের আরব, বাংলাদেশ, পাকিস্তানি কমিউনিটিসহ সব মুসলমানদের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই উৎসব। উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল শাফি আদাম ও খালিল মোহাম্মদের ইসলামিক সংগীত পরিবেশন। বেলা দুইটায় শাফি আদামের জনপ্রিয় সব গানের তালে দুল খেতে থাকেন তরুণ–তরুণীরা। তাঁদের পরিবেশনা চলে বিকেল পর্যন্ত।
শেফিল্ডে থাকা হাজার দশেক বাংলাদেশিদের জন্যেও এটি সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মা–বাবার হাত ধরে শিশু–কিশোরেরা আনন্দ উপভোগ করে। উৎসবে তিন সন্তানকে নিয়ে এসেছেন দেলোয়ার হুসেন। তিনি বলেন, আগের দিন থেকেই ছেলেমেয়েদের তর সইছে না, কখন আসবে মেলায়। এখনে এসে বিভিন্ন রাইড চড়তে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও তাদের কোনো ক্লান্তি নাই।
ঈদ উৎসবে প্রতি স্টলের জন্য গড়ে ৪০০ পাউন্ড ভাড়া গুনতে হয়েছে স্টলমালিকদের। তবে প্রতিটি স্টলে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়! দুপুর গড়ার সঙ্গে সঙ্গে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ বিরিয়ানি, চটপটি, সমুচাসহ নানা ধরনের খাবার কিনছেন। অনেক স্টলে খাবার ফুরিয়ে আসে। মোহাম্মদ সায়েম পেশায় ডাক্তার, গেলবারের মতো এবারও বন্ধুদের নিয়ে খাবারের স্টল দিয়েছেন। তাঁর স্টলের সামনেও লম্বা লাইন, তবে চাহদার তুলনায় তাঁর জোগান শেষ হয়ে গেছে জানালেন।
এভাবেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ঈদ ফেস্টিভ্যাল। একরাশ আনন্দ আর মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিকালে বাসায় ফিরেন উৎসবে আগত হাজার ত্রিশেক মানুষ।
লেখক: শামসুল ইসলাম, শেফিল্ড, ইংল্যান্ড