রহমান পরিবারের ওমরাহ—আমার চোখে দেখা একজীবনের শ্রেষ্ঠ যাত্রা
আমার জীবনে অনেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু সম্প্রতি আমার পরিবার নিয়ে করা প্রথম ওমরাহ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা—একটা আত্মার যাত্রা, একটা শান্তির যাত্রা, আর আল্লাহর রহমতের কাছে নিজেকে আরও কাছে নিয়ে যাওয়ার যাত্রা। পাঁচ দিন মদিনা, পাঁচ দিন মক্কা—এই ১০ দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আজও আমার মনে সতেজ।
মদিনা: শান্তির শহরে প্রথম পদার্পণ
মদিনায় পৌঁছানোর পরই মনে হলো হৃদয়টা যেন হালকা হয়ে গেল। মসজিদে নববির আঙিনা, সবুজ গম্বুজ, শহরের সেই নরম প্রশান্তি—সব মিলিয়ে যেন এক অপার শান্তির ঘর।
মসজিদে নববি
প্রতিদিন ফজর থেকে ইশা—যতবার সম্ভব নামাজ পড়েছি। রওজায় দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়ার সেই মুহূর্ত—আত্মাকে কাঁপিয়ে দেওয়া অনুভূতি।
মসজিদে কিবলাতাইন
যে স্থানে নামাজের কিবলা পরিবর্তন হয়েছিল—বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কাবার দিকে। সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো ইতিহাস যেন জীবন্ত।
সালমান ফারসি খেজুরবাগান
এখানে এসে সালমান ফারসি (রা.)-এর ত্যাগ, পরিশ্রম আর ইমানের কাহিনি যেন চোখের সামনে ফুটে উঠল। খেজুরবাগানের শান্ত পরিবেশ মনকে ছুঁয়ে গেল।
হরমাইন ট্রেনে করে যখন মক্কায় পৌঁছালাম, মনে হচ্ছিল বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। প্রথমবার কাবা দেখা, আমি শব্দে প্রকাশ করতে পারি না। শুধু চোখ ভিজে গিয়েছিল। প্রথম ওমরাহটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। পরিবার নিয়ে তাওয়াফ, সাই-যেন সময় থেমে গিয়েছিল।
উহুদ পাহাড়
শহীদের ভূমি—আমি, আমার পরিবার সবাই মিলে মাটিতে হাত রেখে শহীদদের জন্য দোয়া করেছি। মদিনা থেকে বিদায় নেওয়া সত্যিই কষ্টের ছিল। কিন্তু একটা উত্তেজনাও ছিল—কারণ সামনেই কাবার দেখা!
মক্কা: আল্লাহর ঘরের সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি
হরমাইন ট্রেনে করে যখন মক্কায় পৌঁছালাম, মনে হচ্ছিল বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। প্রথমবার কাবা দেখা—আমি শব্দে প্রকাশ করতে পারি না। শুধু চোখ ভিজে গিয়েছিল। প্রথম উমরাহটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। পরিবারকে নিয়ে তাওয়াফ, সাই—যেন সময় থেমে গিয়েছিল।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
মক্কায় ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ
এই ভ্রমণে শুধু ইবাদতই নয়, ইসলামের ইতিহাসকে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগও পেয়েছি।
জাবালে নূর: যেখানে প্রথম ওহি নাজিল হয়েছিল। নিচ থেকে ওপরের দিকে তাকিয়েই একটা শিহরণ লাগে।
জাবালে সাওর: হিজরতের সময় রাসুল (সা.) ও আবু বকর (রা.)-এর আশ্রয়ের গুহা। পাহাড়টা দেখেই হিজরতের কষ্ট, ত্যাগ—সব মনে পড়ে যায়।
আরাফাত মাঠ ও জাবালে রহমত: যেখানে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে। সেখানে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে না পারলেও জায়গাটা দেখেই মনটা নরম হয়ে গেল।
মিনা ও মুজদালিফা: হজযাত্রার পথ, তাঁবুর শহর, জামারাত—সবই আমাকে ইসলামের গভীরতা আরও বুঝতে সাহায্য করেছে।
জেদ্দায় শেষ দিন—হাওয়া (হাওয়া) মায়ের কবর জিয়ারত
শেষ দিনে আমরা জেদ্দা ঘুরেছি। সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল হাওয়া মায়ের কবর জিয়ারত করা। সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো আমরা আমাদের মা-বাবাদের দোয়ায়ই আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। শেষে লাল সাগরের ধারে জেদ্দা কর্নিশে হাঁটলাম আর অবশ্যই আল-বাইক খেতে ভুলিনি—স্বাদটা সত্যিই অসাধারণ।
শেষ কথা
রহমান পরিবারের এই প্রথম উমরাহ আমাদের জীবনে চিরস্মরণীয়। এই যাত্রা আমাকে বদলে দিয়েছে—হৃদয়কে নরম করেছে, কৃতজ্ঞ করেছে, আর আল্লাহর কাছে আরও বেশি নিকটবর্তী করেছে।
আমি শুধু এ দোয়াই করি—
আল্লাহ যেন আমাদের আবার ডাকেন, আর যাঁরা এখনো যেতে পারেননি, তাঁদের সবার জন্য পথ সহজ করে দেন। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর শান্তির জন্যও প্রার্থনা করেছি।