বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত
প্রিয় মাতৃভাষার মর্যাদা-অধিকার রক্ষা, মহান স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত অগণিত শহীদের রক্তে রঞ্জিত দিবসটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতো এবারও শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ ও উদ্যাপন করেছেন। বাংলাদেশি স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাজিদা ফাতেমাকে আহ্বায়ক, মেহেদি হাসান ও তানজিম হাসানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও এ কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।
প্রথম পর্ব ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ ইন্টারন্যাশনাল বয়েজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শুরু হয়। প্রভাতফেরির পর জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সকাল আটটায় অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও দৃশকলা অনুষদের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা সুরেশ নায়ারের উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়বস্তুতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। বাংলাদেশি স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেহেদি হাসানের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি দেশের শিক্ষার্থীর ক্যানভাসে ফুটে ওঠে ভাষা আন্দোলন ও সংস্কৃতির নানান দিক।
সন্ধ্যা ছয়টায় সুরঞ্জনা নাথ ভৌমিক ও সৌরভ সাহার সঞ্চালনায় শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পণ্ডিত মদনমোহন মালভিয়ার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (কো-অর্ডিনেটর) ও কৃষিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এস ভি এস রাজু। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন নিউ ইন্টারন্যাশনাল বয়েজ হোস্টেলের প্রশাসনিক ওয়ার্ডেন অধ্যাপক আক্তার আলী, সংগীত ও পারফর্মিং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক কে শশী কুমার, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সুমিতা চট্টোপাধ্যায়, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর ঘোষ, ইন্টারন্যাশনাল গার্লস হোস্টেলের প্রশাসনিক ওয়ার্ডেন নিতি সিং। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলা বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সুমিতা চট্টোপাধ্যায় একুশে ফেব্রুয়ারি তাৎপর্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে দেশভাগের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা ব্যক্ত করেন এবং একুশের ওপর স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
তবে গত বছরের তুলনায় এবারের আয়োজন ছিল ভিন্নমাত্রার। কেননা, ‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী ও গবেষক শরিফ আরেফিনের পরিচালনায় ১৩টি ভাষায় পরিবেশন করা হয়; পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দেশাত্মবোধক কবিতা, গান, নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে শহীদ দিবসের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। শুধু তা-ই নয়, একুশে ফেব্রুয়ারিকে রংতুলির আঁচড়ে আলপনার মাধ্যমে রাঙিয়ে তোলা হয় পুরো হোস্টেল প্রাঙ্গণ।
শহীদ মিনার ও আলপনার শৈল্পিক কাজটি করেন বাংলাদেশি স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী পুলক কুমার সরকার। আলপনার কাজে সাহায্য করেছেন পার্থপ্রতিম, অদিতি বিশ্বাস, মেধা পারমিতা, শুভশ্রী ঘোষ, অর্পিতা দে ও দেবস্মিতা বড়াল।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক সাজিদা ফাতেমা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা আজ এখানে একত্র হয়ে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলনের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাই অন্যান্য দেশের সব মাতৃভাষার প্রতি।’
লেখক: মো. আমিনুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত
* দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]