প্রবাসে নতুন প্রজন্মের কাছে বয়োজ্যেষ্ঠদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু

প্রতীকী ছবি

বয়সের ভারে বার্ধক্যের অক্ষমতা আর অসহায়ত্ব কি ঠেলে দেয় আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে? যে পিতা-মাতা পৃথিবীর আলো বাতাসে লালন-পালন করে বড় করেছেন আমাদের। ইটের সঙ্গে বালু, সিমেন্ট, শ্রম আর ভালোবাসা মিশিয়ে অল্প অল্প করে বাসস্থান তৈরি করেছেন তাঁকেই কি নির্বাসিত হতে হয়? সেই পিতা-মাতার কি এটাই প্রাপ্য ছিল? বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক পরিত্যক্ত সম্বলহীন মায়ের করুণ মুখ আর বিষাদগ্রস্ত বাবার দুর্বল চাহনি। একটা পরিবারের একান্তই আপনজনদের হাসি-কান্নায় জর্জরিত দুঃখ-বেদনার লুকায়িত গল্পকাহিনি।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজরালি বলেছিলেন, ‘যৌবন একটি ভুল, পুরুষত্ব একটি সংগ্রাম, বার্ধক্য একটি অনুশোচনা।’

একজন বৃদ্ধের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, ‘জীবনের মানে কী? তিনি চশমার গ্লাসে ফুঁক দিয়ে বলবেন: জীবন মানে চশমা ছাড়া সবকিছুই ঝাপসা! জীবন মানে অপরিতৃপ্ত মন আর অগণিত ভুলের যোগফল। জীবন মানে—একবুক আশা নিয়ে দিন গোনা আর অপূর্ণতার মাঝে খুঁজে পাওয়া মিথ্যা সান্ত্বনা!’

প্রাচীন চীনের শান রাজবংশের উদ্যোগে পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গৃহছাড়া অবহেলিত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এ উদ্যোগ মানবসভ্যতার আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পরিবার থেকে বিতাড়িত অক্ষম, কর্মহীন বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল শান রাজবংশীয়রা। বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠার এই ধারণা এখন বর্তমান বিশ্বের সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো বৃদ্ধাশ্রমের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল যে যৌথ পরিবারে একসঙ্গে বসবাসের ধারণাটি যেমন সভ্য সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তেমনি আমাদের দেশেও এর ধারাবাহিক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে যৌথ পরিবার হারিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ প্রাচাত্যের কাঠখোট্টা মিশ্র সংস্কৃতির দৃশ্যমান আধিপত্য। আধুনিক জীবনযাপনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৌরাত্ম্য, ভিনদেশি অপসংস্কৃতির প্রতি আসক্তি এমনকি বিদেশি কায়দায় অতিথি আপ্যায়ন, খাবারদাবার পরিবেশন, বাংলা ভাষার মিশ্রণ এবং বিকৃতি এ প্রজন্মের ছোট–বড় নির্বিশেষে সবার ভেতরে সমান মাপে চলছে। বিনোদনের নামে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত এক চাকচিক্যময় অসামাজিক চালচিত্র, যা একটা সমৃদ্ধ পরিবারের ঐতিহ্য আর পারিবারিক কাঠামোর বিপরীতে বড় ধরনের হামলা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ফাটল ধরানো থেকে শুরু করে মা–বাবা, ভাই-বোনের মধ্যে বৈষয়িক সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতের পারিবারিক কলহ এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের অবহেলার জন্য বিদেশি মিডিয়াগুলো অনেকাংশেই দায়ী। ভেঙে যাচ্ছে সুখের সংসার! পরস্পরের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং মমতাও ধীরে ধীরে কমে এসেছে পরিবার থেকে। একটা সময় ছিল, যখন বাড়ি বাড়ি একান্নবর্তী পরিবার ছিল। হইহুল্লোড়ে আর কোলাহলে ভরা যৌথ পরিবারগুলোর পারিবারিক বন্ধন, আতিথিয়েতাও অনেক শক্তিশালী এবং মর্যাদাসম্পন্ন ছিল। এ ডিজিটাল যুগে যৌথ পারিবারের ভাতৃত্ববোধ, সম্মান এখন তেমন একটা চোখেই পড়ে না। সমাজের পরিবর্তন আর মানুষের নিত্যনতুন চাহিদার অন্তরালে যৌথ পরিবারের দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া এখন প্রায়ই বিরল ঘটনা। বর্তমানে একক পরিবারে বৃদ্ধ মা–বাবা, নানা-নানি কিংবা দাদা-দাদি তথা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রাধান্য দেখা যায় না। যদিও অনেক পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনো একসঙ্গে বসবাস করেন; কিন্তু তাঁদের সব সময়ই আশ্রিত মনোভাব নিয়ে চলতে হয়। অথচ আগে পরিবারের মুরব্বিরাই প্রধান হর্তাকর্তা ছিলেন। বাবা, দাদার হাঁচি-কাশিতে বাড়িটা নীরব নিস্তব্ধ হয়ে যেত। আবার ফুফু, চাচা, মামা, খালার আগমনে পুরো বাড়িটা আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়ে উঠত। একটি পরিবারকে অটুট বন্ধনে বেঁধে রাখতে মুরব্বিদের জীবনাদর্শ, তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ উপদেশ পরিবারের সবার ভবিষ্যৎ পথচলার পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। সেই দিনগুলো এখন পুরোটাই হারানো অতীত।

সুদূর প্রবাসে নতুন প্রজন্মের কাছে বয়োজ্যেষ্ঠদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু

প্রবাসের কর্মময় জীবনে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন সংস্কৃতি, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ভাষা-কৃষ্টি নিয়ে কারোই যেন মাথাব্যথা নেই। সারা বিশ্বের অভিবাসিত লাখো বাংলাদেশি প্রবাসকে জীবন–জীবিকার একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে শেষ ঠিকানা করেছেন। বুকভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে প্রথম প্রজন্মের মা–বাবা নিরলস পরিশ্রম করে আর্থিক ও সামাজিক প্রতিকূলতার বাঁধ ভেঙে ছেলেমেয়েদের আদরে-স্নেহে বড় শিক্ষিত করে তোলেন। কিন্তু স্বপ্নের প্রবাসে খুঁজে পান না নিজের শান্তির আর স্বীকৃতির জায়গাটা। নতুন প্রজন্মের কাছে বৃদ্ধ মা–বাবা এখন অর্থহীন অপ্রয়োজনীয় একধরনের পারিবারিক দায়বদ্ধতা।

সত্তরের দশকের শুরু থেকে অর্থাৎ স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে যেসব বাংলাদেশি মাতৃভূমি ত্যাগ করে প্রবাসের মাটিতে পা রেখেছিলেন, তাঁদের একটা বিরাট অংশ বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সঙ্গহীন এবং একা। নানা রকম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে এমনকি ছেলেমেয়েদের অনাদর–অবহেলায় দেশে ফেরত যেতেও বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। অনেককে প্রবাসী বৃদ্ধাশ্রমের দিকে পথ চলতে হয়েছে। দিন দিন এর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েই চলছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা তথা সারা বিশ্বে অগণিত বয়োজ্যেষ্ঠ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং অবহেলিত হয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।

ফাইল ছবি

ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতি! আমাদের কাছে কোনটি গ্রহণযোগ্য?

প্রত্যেক মানুষের জীবন আলোকিত হয়েছে তাঁর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক পারিবারিক বন্ধন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা ঠিক রাখাও খুবই জরুরি। কিন্তু উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয়দের বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে, তেমনি তাঁদের ছেলেমেয়েরা ১৮ বছরে পা রেখেই স্বনির্ভরতার নামে মা–বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ছে। এর সমান প্রভাব বাংলাদেশি প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভেতরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিত্তবিনোদন বা মনোরঞ্জনের নামে বাংলা ভাষা, কৃষ্টি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসে বড় হওয়া বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের কাছে শুধু বৈষয়িক প্রয়োজনটাই অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ঘড়ির কাঁটায় যখন জীবন ঘোরে, তখন মানুষ যেমন অতি হিসাবি হয়ে ওঠে, তেমনি মা-বাবার ভরণপোষণ নিয়ে সন্তানকে থাকতে হয় টানাপোড়েনে। সবকিছু মিলিয়ে এ দুঃখ–দুর্দশায় নিজের সন্তানদের সঙ্গে অনভিপ্রেত দূরত্ব শুরু হয় এবং বৃদ্ধ মা–বাবা সন্তানদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে নিঃসঙ্গ অবস্থায় জীবন যাপন করেন। নাতি-নাতনি নিয়ে হেসেখেলে যে সময় পার করার কথা, সেই বৃদ্ধ মা–বাবাকে কাটাতে হয় নিঃশব্দে ও নিঃসঙ্গতায়। কখনো কখনো প্রবাসী এ প্রবীণদের কমিউনিটির বিভিন্ন দেশীয় রেস্তোরাঁয় বা গ্রোচারি স্টোরগুলোতে আড্ডা জমাতে এবং আবেগ আপ্লুত মনে জীবনের সুখ-দুঃখের গল্পকাহিনি বলতে দেখা যায়। প্রবাসের অনেক ছেলেমেয়েই বৃদ্ধাশ্রমে মা–বাবার বাসস্থান নিশ্চিত করে শুধু খরচটা পাঠিয়ে দিয়ে নিজ দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেন। বয়স্ক মা-বাবার প্রতি সন্তানের অমানবিক আচরণের নিষ্ঠুর প্রতিচ্ছবি মোটেও কাম্য নয়।

বার্ধক্য মানে কি জীবনের শেষ

বার্ধক্য মানে জীবন শেষ হওয়া বোঝায় না। বার্ধক্য জীবনেরই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ। সময়ই মানুষকে বার্ধক্যে নিয়ে যায়। আগের দিনে নবজাতকের আগমনী শুনে পাড়া-প্রতিবেশী, নিকটাত্মীয় সবাই আনন্দমুখর হয়ে উঠত। মা–বাবার আদরের ছোট্ট শিশুটি একদিন বয়সের ভারে বার্ধক্যে পৌঁছে যাবে। এ অবশ্যম্ভাবী জৈবিক বাস্তবতা, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। টগবগে সেই তরুণকেও একদিন বয়সের ভারে নুয়ে যেতে হয়। এটাই নিয়ম, এটাই সত্য, এটাই সুন্দর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া মানুষটির মনকে আমরা দেখি না, দেখি তার জবুথবু শরীর! শিশুসুলভ আচরণ। ঠিক তখনই তার প্রয়োজন হয় একটু মানসিক শান্তির। বৈষয়িক চাহিদা আর বস্তুগত দাবির কাছে আমরা হেরে গিয়ে আত্মকেন্দ্রিক হতে শিখেছি। এ স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতায় পরিবার-পরিজনদের এমনকি বৃদ্ধ মা–বাবাকেও দূরে সরিয়ে রেখেছে।

অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় চেইন মাইগ্রেশনের সুবাদে নাতি-পুতির মুখ দেখতে এসে আটকে যান আমাদের প্রবীণেরা। সময়ের চাকায় প্রবীণেরা হন আরও প্রবীণ; তখন বাস্তবতা এমন হয় যে তাঁদের দেশে ফিরতে হয়, না হলে সমগোত্রীয়দের পাশে বৃদ্ধাশ্রমে। কারণ, তাঁরা সন্তানদের মধ্যে ঝামেলা-যন্ত্রণার কারণ হতে চান না।

সমাধানের উপায় কী

বৃদ্ধাশ্রম এখনো দেশে–বিদেশে মহামারি হিসেবে ধরা না দিলেও দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। আমাদের একটু মনের ইচ্ছা, সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধা পেলে মা–বাবার জীবনের শেষ সময়টা এভাবে নিঃসঙ্গ হতো না। সেই জন্য দরকার মনের উন্নতি এবং সুন্দর মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্যসম্মত এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমাদের সবার একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রবীণদের মানবিক সেবাদানে যুগান্তকারী পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ামুক্ত এবং তাদের কর্মকাণ্ড শুধু পাসপোর্ট–সেবা আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতার ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে সরকারি উদ্যোগে দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী কমিউনিটিতে সব ধরনের সাহায্য–সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে বাধ্য করা উচিত।

সরকার এ দূতাবাসগুলোকে আরও দায়িত্বশীল করার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছ জবাবদিহির বন্দোবস্ত করলে প্রবাসী বাংলাদেশি বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের কর্মক্ষমতা আরও শক্তিশালী ও জোরদার হয়ে উঠবে। ডিজিটাল মিডিয়ায় অনলাইন পোর্টাল তৈরি করে বয়োজ্যেষ্ঠদের পছন্দের কর্মসংস্থান, ই-কমার্সের মাধ্যমে তাঁদের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সুযোগ এবং অনলাইনে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারেন, এমন ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া বৃদ্ধ মা–বাবা যেন নিকট আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও দূতাবাসগুলো তৈরি করতে পারে। সারা জীবনের উপার্জিত অর্থের বিরাট অংশ রেমিট্যান্স করেছেন। অথচ আজ সেই সব বৃদ্ধ মা–বাবাসহ বহু প্রবীণ প্রবাসী বড়ই অসহায় ও নিরুপায়। সরকারি উদ্যোগে তথ্যসেবা প্রদান এবং প্রবাসী বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা, সামাজিক-ধর্মীয় সুবিধা নিশ্চিত করা এবং তাঁদের আর্থিক সামর্থ্যানুযায়ী শারীরিক-মানসিক চিকিৎসার পদক্ষেপ নেওয়ার আর কোনো বিকল্প মনে করি না।

পাশাপাশি প্রবাসী পরিবারগুলোকে সময়োপযোগী সঠিক ও উপযুক্ত গাইডলাইনের ভিত্তিতে তাঁদের মনোজগতে সচেতনতাবোধ সৃষ্টি, মা, মাটি ও নিজের শিকড়ের পরিচয় ধরে রাখতে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই আমাদের বৃদ্ধ মা–বাবা দুজনেই সুখে-শান্তিতে, সুস্থ–সবল দেহে মনের সবটুকু সান্ত্বনা আর ভালোবাসা নিয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আমাদের সঙ্গেই বাস করেন! বেঁচে থাকেন! আমাদের সন্তানদের কাছে তুলে ধরেন বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি।

আমরা জানি, পৃথিবীতে তো মাত্র একবারই আসা। কিন্তু এ সময়ে যদি সবার কাছ থেকে সহানুভূতি অর্জন করা না যায়; জীবনের কোথায় যেন একটা গভীর অপূর্ণতা থেকে যায়। মা–বাবাকে শেষ বয়সে অবহেলা করলে উত্তরাধিকার সূত্রে এর করুণ অবস্থায় আমাদেরও পড়তে হবে। তখন বৃদ্ধাশ্রমে বসে নচিকেতার সেই গান স্মরণ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না: ‘ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠত খোকা কেঁদে, দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে। দু’হাত আজও খুঁজে! ভুলে যায় যে একদম, আমার এ ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’ পরিশেষে পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে! সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসঙ্গে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।

*লেখক: আইটি প্রফেশনাল, শিশু ও পরিবারবিষয়ক ডিপার্টমেন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র