আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের অদ্ভুত কিছু আইন
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জে ওয়াকিংয়ের জন্য ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে ‘আইনবহির্ভূত’ ৪৬৭টি টিকিট ইস্যু করা হয়েছে। আমরা অনেকেই জানি না যে নিউইয়র্ক সিটিতে জে ওয়াকিং অবৈধ।
সাধারণত রাস্তা পারাপারের জন্য অনুমদিত ক্রস-ওয়াকের নাম জেব্রা ক্রসিং। কোনো পথচারী জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে রাস্তা পার হলে তাকে জে ওয়াকিং বলে। নিউইয়র্ক সিটি ট্রাফিক রুলস সেকশন ৪-০৪ (সি) (৩) অনুযায়ী, জে ওয়াকিং অবৈধ। এ জন্য পুলিশ আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে সর্বনিম্ন ৫০ ডলারের টিকিট দিতে পারে। এই জরিমানা স্থানভেদে বিভিন্ন অঙ্কের হতে পারে। গত বছর সর্বোচ্চ আড়াই শ ডলারের টিকিটও দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত নগরীতে ৭০ শতাংশ পথচারী জে ওয়াক করে। সাধারণত পুলিশ জে ওয়াকারদের বেশির ভাগ সময় এড়িয়ে যায়। তবে কপাল খারাপ হলে বিপদ আসতে সময় লাগে না। কয়েক বছর আগে আমার এক বন্ধু ম্যানহাটানে জে ওয়াকিংয়ের জন্য টিকিট পেয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু তিনটি স্টেটে জে ওয়াকিং বৈধ করা হয়েছে। ভার্জিনিয়াতে ২০২০ সাল থেকে জে ওয়াকিং বৈধ। নেভাদাতে বৈধ করা হয়েছে ২০২১ সালে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি ফ্রিডম টু ওয়াক অ্যাক্টের আওতায় ক্যালিফোর্নিয়ায় জে ওয়াকিং বৈধ করা হয়।
১৯০০ সালের প্রথম দিকে ক্যানসাস সিটিতে জে ওয়াকিং কথাটা প্রথম চালু হয়। সাধারণত নির্বোধ হাবাগোবা লোকদের সেখানে কৌতুক করে জে নামে ডাকা হতো। ট্রাফিক আইনকানুন সম্বন্ধে অজ্ঞ চালকদের বলা হতো জে ড্রাইভার। আর রাস্তায় নির্বোধের মতো চলাচলকারী পথচারীদের ডাকা হতো জে ওয়াকার। সেই থেকে জে ওয়াকিং শব্দটার শুরু। মজার ব্যাপার হলো জে ওয়াকিংয়ের উৎপত্তিস্থল ক্যানসাস সিটিতে টিকিট ইস্যুর ব্যাপারে বর্ণবাদের অভিযোগ ওঠায় ক্যানসাস সিটি কাউন্সিল গত সপ্তাহে ভোটাভুটির মাধ্যমে জে ওয়াকিং বা এ–সংক্রান্ত জরিমানা রহিত করার জন্য নতুন আইন পাস করেছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠলেও এখন পর্যন্ত জে ওয়াকিং এখানে অবৈধ। প্রসঙ্গত, গত বছর নিউইয়র্ক সিটিতে মোট টিকিটের ৯২ শতাংশ দেওয়া হয়েছে অশ্বেতাঙ্গদের।
আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জে ওয়াকিংয়ের মতো মজার কিছু অপ্রচলিত আইন আছে, যা এ যুগে একেবারেই প্রয়োগ হয় না। তবু কাগজে-কলমে আইনগুলো এখনো বিদ্যমান। নিম্নে কয়েকটি মজার আইনের উদাহরণ দেওয়া হলো—
নিউইয়র্কে পরকীয়া একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯০৭ সাল থেকে আইনটি বিদ্যমান। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর তিন মাসের জেল এবং সর্বোচ্চ পাঁচ শ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে ১৯৭২ সাল থেকে এই আইনের আওতায় আজ পর্যন্ত মাত্র ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও শুধু ৫ জনের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এই অপ্রচলিত আইন রহিত করার জন্য গত মার্চে আলবানিতে একটি বিল আনা হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে রাত ১০টার পর স্লিপার পায়ে পাবলিক প্লেসে যাওয়া, কারও সঙ্গে ফ্লার্টিং করা বা কারও দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা বেআইনি। বৃষ্টি না থাকলে সাইডওয়াক দিয়ে হাঁটার সময় ছাতা ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইনগুলো অমান্য করলে ২৫ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
আরকানসে কোনো স্যান্ডউইচ শপের আশপাশে রাত নয়টার পর হর্ন বাজানো নিষেধ। ছোট শহরগুলোতে রাত নয়টার পর সাধারণত সুনশান নীরবতা বিরাজ করে। হর্ন বাজালে মানুষের শান্তি বিনষ্ট হবে বিধায় আইনটি করা হয়েছিল। অপ্রচলিত এই আইন এখনো বিদ্যমান।
কলোরাডোতে বাড়ির সামনের বারান্দায় কোনো সোফা রাখা নিষেধ। সম্ভবত মাতালদের অসাবধানতার কারণে সোফা থেকে অনেক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতো বলে সোফা রাখা নিষেধ করা হয়েছিল।
কানেটিকাটে একটি আইন আছে যে তাজা সবুজ শসা ড্রপ করলে যদি বাউন্স করে, তাহলে তা মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। ১৯৪৮ সালে দুজন কৃষকের জেল হয়েছিল। তাঁদের বিক্রি করা শসা বাউন্স করেনি
ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে মানুষ বা অন্য প্রাণীর পশম বা চুল বিক্রি বৈধ হলেও কোনো কুকুর বা বিড়ালের পশম বিক্রি অবৈধ।
জর্জিয়ায় কেউ একনাগাড়ে ৩০ দিনের বেশি কোনো ধরনের বোটে বসবাস করতে পারে না। আইনের চোখে তা অবৈধ।
ক্যানটাকিতে কোনো নারী একই পুরুষকে তিনবারের বেশি বিবাহ করতে পারেন না। তৃতীয়বার বিবাহবিচ্ছেদ হলে চতুর্থবারের সুযোগ আর আসবে না।
লুইজিয়ানাতে সারপ্রাইজ গিফট হিসেবে কারও কাছে পিৎজা পাঠানো বেআইনি। রেস্তোরাঁগুলোও ডেলিভারির পূর্বে ভালো করে চেক করে, যেন ভুল ঠিকানায় পিৎজা না যায়। নয়তো জরিমানা দিতে হবে।
ম্যারিল্যান্ডে পুরুষদের স্লিভলেস গেঞ্জি পরে পাবলিক পার্কে যাওয়া নিষেধ। পেশিবহুল বাহু দেখানোর সুযোগ সেখানে নেই।
মিশিগানে রোববারে কোনো যান্ত্রিক যানবাহন কেনাবেচা নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী রোববার হলো গির্জায় যাওয়া বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দিন। প্রশ্ন থাকে যে এই আইন অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্যও প্রযোজ্য কি না!
নেভাদাতে সাইডওয়াকে বসে আড্ডা দেওয়া বা ঘুমানো নিষিদ্ধ। এমন একটা আইন নিউইয়র্কের বাঙালি–অধ্যুষিত এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় অন্যের বাড়ির ড্রাইভওয়ে তো দূরের কথা, নিজের বাড়ির সামনে ড্রাইভওয়ে ব্লক করে গাড়ি পার্ক করাও বেআইনি।
মিজৌরিতে ১৯ শতকের দিকে অবিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য ব্যাচেলর ট্যাক্স নামে একটি আইন করা হয়েছিল, যা আজও বিদ্যমান তবে অপ্রচলিত। ভারমন্টে স্বামীর লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো নারী নকল দাঁত (ফলস টিথ) ব্যবহার করতে পারেন না।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে দুজন অবিবাহিত পুরুষ ও নারী একত্রে বসবাস নিষিদ্ধ, এই যুগে যা লিভ টুগেদার নামে পরিচিত। আজকাল নাকি ঢাকা শহরেই হরদম লিভ টুগেদার চলছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে পুলিশের গাড়ি বা অ্যম্বুলেন্সের মতো গার্বেজ ট্রাকও এসেনশিয়াল ভেহিকেল। বিভিন্ন এলাকার অপ্রশস্ত রাস্তায় কোনো এসেনশিয়াল ভেহিকেল থেমে থাকলে সবাইকে গাড়িটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, কোনো হর্ন বাজানো নিষেধ। আশির দশকের শেষের দিকে নিউইয়র্ক সিটিতে দেখতাম যে খুব ভোরে গার্বেজ পিকআপ করা হতো। এখন তারা দিনের যেকোনো সময় বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ব্লক করে গার্বেজ পিকআপ করে অহেতুক জ্যামের সৃষ্টি করে। এসেনশিয়াল ভেহিকেল বিধায় সবাই ধৈর্য ধরে বসে থাকে। একবার আমার এক আত্মীয় এক গার্বেজ ট্রাকের পেছনে আটকা পড়েন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কয়েকজন ধৈর্যহীন চালক হর্ন বাজান। উৎসাহ পেয়ে আমার আত্মীয়ও অন্যদের সঙ্গে তাল মেলান।
পাশেই ছিল পুলিশ স্টেশন। পুলিশ এসে কয়েকজন চালককে দুটি করে টিকিট দেয়—একটি এসেনশিয়াল ভেহিকলের কাজে বাধা, অপরটি শব্দদুষণের জন্য। আত্মীয় বেচারা আপিল করে ট্রাফিক কোর্টে যান। বিচারকের সামনে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন যে শুধু তিনি একা নন, অন্যরাও একই অপরাধ করেছেন। বিচারক বলেন, ‘আপনি এসেছেন আপনার নিজের মামলা নিয়ে, অন্যদের নয়।
আপনি কি হর্ন দিয়েছেন? ইয়েস অর নো।’ আত্মীয় উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস, ইয়োর অনার।’ বিচারক বললেন, ‘তাহলে আপনি দোষী।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একটা কথা আছে, ‘দেহাদেহি বেহা নাছে (দেখাদেখি বধির নাচে)। আত্মীয়ের ঘটনা থেকে দুটি জিনিস শেখার আছে। প্রথমত, অন্যকে অনুকরণ করে হুজুগে কোনো কাজ করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, বিচারকের সামনে আমার কৃতকর্মের জবাব আমাকেই দিতে হবে।