পৃথিবীর স্বর্গ
আহা কী এক অদ্ভুত সময় যেন পার করছি! ঘোরের মাঝে আছি। নিজের অজান্তেই স্রষ্টার সৃষ্টি দেখে অভিভূত হচ্ছি। আকাশ মেঘ পাহাড় আর সূর্যের সমারোহ দেখে। আকাশের তুলুটো মেঘগুলো যেন পালকিতে ছড়া সদ্য বিবাহিত কোনো যৌবনা কিশোরী। আর পাহাড়কে দেখলে মনে হবে ঘোড়ায় টগবগিয়ে যাচ্ছে কোনো সদ্য প্রেমে পড়া যুবক। প্রেমিকার আক্ষেপ পূরণে একেকবার একেক রূপে নিজেকে মেলে ধরছে।
সূর্যকে দেখলে মনে হয় আগন্তুক কোনো এক ক্যামেরাম্যান। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘ আর পাহাড়ের মাঝে কেবল আলোর ঝলকানি মেলে ধরে রাখতে চাইছে সবচেয়ে সুন্দরতম প্রেমিক জুটিকে, যাকে তার মনে ধরেছে। এ যেন মাঝ দরিয়ায় মাস্তুলে দাঁড়িয়ে আলোর পথে পথ বাড়ানোর মতো।
এসব রঙের মাঝে হঠাৎ করে আবির্ভাব ঘটে বৃষ্টির। পাহাড়ের বৃষ্টির বর্ণনা দেওয়া কি সম্ভব। তবু বলি, নববধূকে বরণের জন্য তৈরি করা সেটের একটা অংশ যেন। ফুলের কলির মতো। মনে হচ্ছে পাহাড় আর মেঘের গায়ে একটু পরপর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছে। আর অতি বর্ষণে তা ছিটিয়ে পড়ছে আমাদের ওপর।
এর একটু পর দেখলাম মেঘকে কোলে নিয়ে বসে আছে পাহাড়ে। আহ্লাদি বিড়ালের মতো। কী ভয়ংকর রকমের সুন্দর!
আহা সুইজারল্যান্ড! কীভাবে তুমি আমাকে তোমার রূপে পাগল করলে। এভাবে দেখতে দেখতে আমরা পাহাড়ে পেটের ভেতরে প্রবেশ করি। আমাদের সময় লাগে এক পাহাড়ের পেটে থেকে বের হয়ে অন্য পাহাড়ে পেটে ঢুকতে। পাহাড় আমার বরণ করে নেয় বৃষ্টি নয়তো তার পেটের ভেতরের কৃত্রিম কোনো আলো দিয়ে। আমরা ভেতর হতেই নয়নাভিরাম জলবদ্ধ নীল জলে চক্ষু শীতল হয়ে উঠে আমাদের।
আমরা চলতে থাকি। খেই হারিয়ে ফেলি। আমরা পাড়ি দিই পাহাড়ের নিচ থেকে পাহাড়ের ওপরে। পাহাড়ের বুক ছেড়ে পানির স্রোতোধারা নেমে আসে বরফ গলা নদীর মতো। আহা! কী অদ্ভুত। সমুদ্রের গর্জনকে হার মানায় যেন।
আর আমি এখন এ মুহূর্তে যেখানে বসে এসব ভাবছি। সে আবাসস্থলের সামনে আবছা আলোয় পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। তার বুকে অভিমানে মাথা রেখেছে মেঘ। আর আমার ব্যালকনির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে অভিমানে জমেো ওঠা চোখের জলের মতো জল। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আমার কর্ণকুহরে যেন নৃত্যের ঝংকার তুলছে, আমি নিঃশব্দে তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করি।
আমার চোখে বহু বছর পর শীতল হয়ে এল সেসবে। রাত্রির এ বেলায় যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠল আমার চারপাশ।