বাংলাদেশ–মালদ্বীপ সম্পর্কের ইতিহাসে মাইলফলক, বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন এক্সপো ২০২৫
মালদ্বীপের মালে শহরের বার্সেলো নাসানধুরা হোটেলে বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন এক্সপো ২০২৫ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন মালদ্বীপের সহযোগিতায় আয়োজিত এই এক্সপো বাংলাদেশ–মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথম ও সর্ববৃহৎ বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষা প্রদর্শনী, যা শিক্ষা কূটনীতি ও জনকূটনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপ সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আমিনাথ শিরনা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আবদুল রহীম হাসান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুনসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।
এই ঐতিহাসিক এক্সপোয় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে ১৫টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রায় ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মালদ্বীপ সফর করে, যা বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা কূটনীতি ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)–এর সেক্রেটারি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষায় মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরবর্তী সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, উপযোগী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় শিক্ষার পরিবেশ প্রদান করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হাইকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ ও মালদ্বীপকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই এক্সপো শিক্ষা কূটনীতি ও জনকূটনীতির একটি বাস্তব উদাহরণ, যা তাঁর প্রবর্তিত ধারণা ‘পাওয়ার অব বন্ডিং’ বা সম্পর্কের শক্তিকে সুদৃঢ় করে। বর্তমানে মালদ্বীপের অনেক মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করলেও সম্পূর্ণ এমবিবিএস কোর্স বাংলাদেশে সম্পন্ন করলে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে কমে যায় এবং একই পরিবেশে পড়াশোনা ও ইন্টার্নশিপ শেষ করা সম্ভব হয়, যা দক্ষ ও যোগ্য চিকিৎসক তৈরিতে সহায়ক। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি মেডিকেল কলেজে সাতটি পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তি, যার মধ্যে একটি ডেন্টাল শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রেখেছে। পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো তুলনামূলকভাবে কম খরচে উচ্চ মানের মেডিকেল শিক্ষা প্রদান করছে।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আমিনাথ শিরনা বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যৌথভাবে আরও কার্যক্রম আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ–মালদ্বীপের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে এক্সপোর মূল কার্যক্রম শুরু হয়। অংশগ্রহণকারী ১৫টি মেডিকেল কলেজ তাদের এমবিবিএস প্রোগ্রাম, সুযোগ–সুবিধা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে।
এক্সপোয় মালদ্বীপের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনকারী মালদ্বীপের একাধিক চিকিৎসকও উপস্থিত থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণে আস্থা আরও বাড়িয়ে তোলে। বিজ্ঞপ্তি