আর আপনারা অবাক হচ্ছেন সিলেটের সাদাপাথর গায়েব হলো কীভাবে
ঘটনাটা এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা...
যুক্তরাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্যে এক বাঙাল থাকতে এসেছে। এসে রেস্তোরাঁয় চাকরি নিয়েছে। মাঝেমধ্যে পার্কে বেড়াতে যায়। পার্কে রাজহাঁস ঘুরে বেড়ায়। দুনিয়ার অন্য দেশের দর্শনার্থীরা হাঁস দেখে মুগ্ধ হয়, ছবি তোলে। বাঙালের মনে প্রশ্ন আসে, ‘একটি যদি ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলি, সমস্যা কী? কেউ তো দেখছে না। আর দেখলেই–বা কী? এগুলো তো কারও বাড়ির পোষা হাঁস নয়। সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল!’
একদিন বাঙাল সুযোগ বুঝে আস্ত একটা রাজহাঁস ধরে বাড়িতে নিয়ে এল। দোয়া পড়ে জবাই করল। বিদেশে এসে ‘হারাম’ খেলে ধর্মভ্রষ্ট হয়ে যাবে। চুরির মাল? ইয়ে, এত গভীরে চিন্তা করবেন না তো! ঘটনায় মনোযোগ দিন।
ধুয়েমুছে বেশি বেশি মসলা দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কষিয়ে রান্না করে তৃপ্তিসহকারে কয়েক দিন খেল।
হাঁসের মাংস খাওয়া শেষ হলে আরেকটা ধরে আনল। পার্কে সাপ্লাইয়ের অভাব নেই। ফ্রিতে রাজহাঁস খেতে কার না ভালো লাগে? বাইরে থেকে কিনতে গেলে এক শ ডলার তো মিনিমাম যাবেই। এভাবে কিছুদিন নিজে খেল।
তারপর একদিন সে যে রেস্তোরাঁয় কাজ করত, ওর সহকর্মীদের বলল, রাজহাঁস খাবে কি না।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
ভুনা রাজহাঁসের মাংস কোনো বাঙালি না করবে? ওরাও খেল।
কয়েক দিন এভাবে খাওয়ার পরে মাথায় এল ব্যবসায়িক চিন্তা। দেশের সবাই উদ্যোক্তা হয়ে যাচ্ছে, আমি মার্কিন মুলুকে এসে কত দিন রেস্তোরাঁয় ডেকচি পাতিল মাজব? রাজহাঁসের মাংস বিক্রি করব। তা থেকে যা টাকা আসবে, তা জমিয়ে আমি নিজের রেস্তোরাঁ খুলব। তারপর সেই রেস্টুরেন্টের লাভের টাকায় আরেকটা রেস্তোরাঁ, তারপর আরেকটা। এভাবে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ছাড়িয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে যাবে আমার রাজহাঁসের রেস্তোরাঁ। কেএফসির বুড়ার মতো আমার ছবিও বিলবোর্ডের শোভা বাড়াবে। হলিউডের সেলিব্রিটি তরুণীরা গাড়ির কাচ নামিয়ে সেই বিলবোর্ডের ছবি দেখে বলবে ‘ওয়াও! কত হ্যান্ডসাম এই যুবক! এ যদি আমার জীবনে চলে আসত, তাহলে লাইফে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না।’
ওদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওদের আত্মীয়-ঘটকেরা ওর মোবাইল ফোনে কল করবে, কিন্তু সে ব্যস্ততার কারণে ধরবে না।
রেস্তোরাঁয় কাস্টমার আসে, ওদের বলে ‘ভুনা রাজহাঁস খাবেন?’
কাস্টমার জিবে জল এনে বলে ‘মেনুতে তো দেখছি না।’
‘ওটা ইস্পিশাল আইটেম। খাইলে বলেন, এনে দিব। দাম এত।’
কাস্টমার ভুনা রাজহাঁস খায়।
ব্যবসা চলতে থাকে। স্বপ্নের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকে সে।
এদিকে পার্ক রেঞ্জার লক্ষ করে রাজহাঁসের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ওরা তদন্তে নামে এবং আস্ত চক্রকে গ্রেপ্তার করে।
সেদিনই সেই বাঙালের মন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে সব বিশ্বাস, ভালোবাসা, ভক্তি গায়েব হয়ে যায়। কিসের স্বপ্নের দেশ? কিসের দুনিয়ার সেরা অর্থনীতি? সামান্য রাজহাঁস খাওয়ার জন্য যে সরকার এত ঝামেলা করে, এর চেয়ে ছোটলোক দুনিয়ায় আর কেউ আছে?
আর আপনারা অবাক হচ্ছেন সিলেটের সাদাপাথর গায়েব হলো কীভাবে?