জেদ্দার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নিয়ে কিছু কথা

সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল জেদ্দাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত। স্কুলের দুটি শাখার একটিতে বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। আরেকটিতে ইংরেজি মাধ্যমের। শাখা দুটি পৃথক পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্লাস নাইনের পরীক্ষায় ভালো ফল না করায় তাদের ওই স্কুল থেকে ২০২৪ সালের ও লেবেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তখন স্কুলের কর্তাব্যক্তিরা যুক্তি দিয়েছিলেন, ওই শিক্ষার্থীদের ও লেভেল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এ কারণে ওই সব শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম) থেকে ও লেবেল পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, ওই শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে সফলতার সঙ্গে ও লেবেল পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে।

এ ঘটনা এখন অভিভাবকদের মধ্যে বেশ আলোচিত হচ্ছে। তাঁদের অভিমত, যদি এই শিক্ষার্থীরা স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করে পরীক্ষা দিতে পারত, তাহলে হয়তো ফল আরও ভালো হতে পারত। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঠিক তেমনি স্কুলের সুনামের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষকদের কর্তব্য কি কেবল শিক্ষাদান, নাকি সেই সব শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা, যারা পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকে, যাতে তারা উন্নতি করতে পারে?

এ ছাড়া অভিভাবকেরা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি তাদের সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করত এবং সঠিক উপদেশ ও সমর্থন দিত, তাহলে হয়তো পরীক্ষার ফল খারাপ হতো না। শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পরীক্ষার ফলাফলে সীমাবদ্ধ নয়; তাদের ভূমিকা একজন পরামর্শদাতা, দিশারি ও সহায়ক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সমর্থন ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন দুর্বল শিক্ষার্থীকে কীভাবে ভালো ও দক্ষ করা যায়, এটি শিক্ষকের একান্ত দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শুধু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা নয়, বরং তাদের শিখনপ্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং তাদের মনোভাব ও দক্ষতা উন্নয়নেও সহায়ক হওয়া।

জেদ্দার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের (ইংরেজি মাধ্যম) এ ঘটনার পর সবার মনে বড় প্রশ্ন, শিক্ষার্থীদের প্রতি এই অবিচার আমরা মেনে নেব, নাকি প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে?

অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের সন্তানদের পড়ানোর জন্য বিকল্প থাকা সত্ত্বেও নিজের দেশের পতাকাবাহী স্কুলে তাঁদের সন্তাদের ভর্তি করেন। দেখা গেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে ঠেলে দেয়।

সৌদি আরবে বিদেশি বাচ্চাদের বয়স ১৮ হলে তাদের নিজের দেশে বা অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে হয়, বিশেষ করে ছেলেদের। তাই শিক্ষার্থীদের একটি বছর যাতে কোনো অবস্থাতেই নষ্ট না হয়, সে চেষ্টা স্কুল কর্তৃপক্ষের থাকা উচিত।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটর মাধ্যমে। কনস্যুলেটের প্রতি অভিভাবকদের একটাই দাবি, স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচন করা, যাতে স্কুল সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।