এক কাপ চা
বলা হয় যে ইংল্যান্ডে আপনি জনসমক্ষে ব্র্যান্ডি বা অনুরূপ পানীয় পান করে আপনার সামাজিক খ্যাতির একটি ভালো অংশ ঝুঁকিতে নিতে পারেন। ঠিক আছে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব রীতিনীতি আছে। গত রাতে আমি বেশ খারাপ মেজাজে চলে গিয়েছিলাম, কারণ আমি একটি ক্যাফেতে এক কাপ চা পান করতে চেয়েছিলাম...হ্যাঁ, ক্যাফেটি কোন ধরনের ছিল, তাতে কিছু যায় আসে না।
ব্যাপারটা হলো, আমি বর্তমানে একটি দুই খণ্ডের উপন্যাসের সমাপ্তি ছোঁয়ায় ব্যস্ত রয়েছি, যেখানে আমি সব আধুনিক সামাজিক জীবনের অহমিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছি। শুধু শেষ অধ্যায়টি লেখা হয়নি এবং আমি গতকাল এটি লিখতে চেয়েছিলাম। তাই আমি সকাল আটটায় উঠলাম, ডেস্কে বসলাম, আমার ভেতরে কবিজ্বরে জ্বলে উঠলাম এবং শুরু করলাম, ‘অক্টোবরের সন্ধ্যা আরও ঘন হয়ে শহরে ছড়িয়ে পড়ে যখন শরতের বৃষ্টি ...’ আমার আর লেখা হলো না, ফোন বেজে উঠল। তিনি আমার বন্ধুদের মধ্যে একজন, যিনি টাকা ধার করতে চেয়েছেন—তুচ্ছ, কয়েক শ ক্রোনার—কিন্তু তার এখনই টাকার প্রয়োজন। স্বভাবতই, আমি না বলতে পারনি এবং এই মুহূর্তে তার কাছে পাঠানোর মতো কেউ না থাকায় আমাকে নিজেই যেতে হলো। তাই আমি গেলাম এবং বাড়ি ফেরার পথে গেটের ঠিক বাইরে আরেক বন্ধুর সাথে দেখা হলো, যে ট্যাক্সি নিয়ে ক্লাবে যাচ্ছিল ও একটি কোম্পানি গঠনবিষয়ক আলোচনায় ব্যস্ত ছিল এবং সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি ক্যাশিয়ারের পদটি নিতে চাই কি না!
২.
আমি হাতছাড়া করতে চাইনি।
বন্ধুত্বহীনতা দেখাতে চাইনি, তাই তার সাথে প্রাতরাশ করতে রাজি হয়েছিলাম বিষয়টি সম্পর্কে আরও যুক্তি দেওয়ার জন্য। প্রথমে আমরা প্রাতরাশ করলাম এবং তারপর আমরা যুক্তি শুরু করি। বেলা দুইটা বাজে এবং আমরা একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম, তখন আমার কাজের মেয়ে, যে কিনা কোনো উপায়ে আমার অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছিল, ছুটে এসে বলল যে আমার শাশুড়ি মৃত্যুশয্যায়। শাশুড়ি কুংশোলমেনে থাকেন; তাই আমি একটি ক্যাব নিয়ে সেখানে ছুটে চললাম। সত্যিই, আমার শাশুড়ি মারা যাচ্ছিল; কিন্তু ছয়টা পর্যন্ত সে মারা যায়নি। অবশেষে আমি বাড়িতে এসে আমার উপন্যাস লেখা শেষ করতে চেয়েছি...কিন্তু দেখুন; পাশের বাজারে আমি একটি নতুন ধরনের গ্লাভস দেখার জন্য এক দোকানের বাইরে যথারীতি থেমেছিলাম এবং যখন আমি বাড়ির পথে, তখন তৃতীয় বন্ধুর মুখোমুখি হলাম, যিনি কোম্পানি গঠনবিষয়ক আলোচনায় ক্লান্ত এবং ক্লান্তি দূর করতে দাবা খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাই তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি হুইস্কি পান করতে এবং দাবা খেলতে চাই কি না।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
এর জন্য তাকে ধন্যবাদ, আমি কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই উত্তর দিয়েছিলাম, কারণ আমি আমার উপন্যাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলাম এবং পরের মুহূর্তে যখন আমি আবার মনে করি ইতিমধ্যেইে আমি হ্যাঁ বলেছিলাম এবং আমার মন পরর্বিতন করতে পারিনি, কারণ এটি আমার চরিত্রে ছাপ তৈরি করতে পারে। তাই তার বাসায় গিয়ে হুইস্কি পান করলাম এবং ১১টা পর্যন্ত দাবা খেললাম। তারপর শুভরাত্রি জানিয়ে আমার উপন্যাস লেখা শেষ করার অটুট দৃঢ়সংকল্প নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম এবং এখানেই গল্পের শুরু।
৩.
এখন শুনুন
আমার বাসায় যেতে প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে। আমি যখন অর্ধেক হাঁটাপথে তখন লক্ষ করলাম আমি ক্লান্ত এবং ঘুম আসছে এবং অনচ্ছিাকৃতভাবে উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে আমি যদি বাড়ি গিয়ে ডেস্কে বসে থাকি তবু ভালো লিখতে পারব না।
-ডান দিকে একটি সুন্দর ক্যাফে-রেস্তোরাঁ, আমি নিজেকে বললাম। আমি যদি সেখানে যাই এবং একটি বড় কাপে কড়া চা পান করি এবং তারপর বাড়িতে গিয়ে লিখি আমার উপন্যাসের শেষ অধ্যায়টি দুর্দান্ত হবে।
তাই ভেতরে গেলাম।
ক্যাফেতে সুইডশিরা যথারীতি বসে ছোট ছোট গ্লাসে মদ পান করছিল।
একটি ছোট টেবিল খালি এবং টেবিলটি হলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। সেখানেই থিতু হলাম।
- আমি কি এক কাপ চা পেতে পারি, একজন পরিচারিকাকে বললাম।
একেবারে নিস্তব্ধ হলঘর। চারপাশে মোটা পেট এবং গোলাপি গাল নিয়ে সুইডিশরা বসে ছিল, মদ পান করছিল এবং নিয়মিত বিরতিতে হাতের গ্লাস একসাথে ঠেকিয়ে বলছিল: এখন আমাদের নিচের জিব অসাড়!
কিন্তু যখন আমি এক কাপ চা চাইলাম, তখন রুমে সম্পূর্ণ নীরবতা নেমে এল।
- এক কাপ চা?
পরিচারিকা অনিশ্চিত স্বরে জিঞ্জেস করলেন।
- হ্যাঁ, আমি উত্তর দিলাম, এক কাপ চা!
- শুধু চা? স্যান্ডউইচ কিংবা রুটি নয়? ব্র্যান্ডি কিংবা বিয়ার?
- না ধন্যবাদ, আমি উত্তর দিলাম। আমি শুধু এক কাপ চা চাই।
-চা হবে, পরিচারিকার উত্তর
সবাই চারদিক থেকে আমার দিকে তাকিয়ে। পুরো এক মিনিট কোনো শব্দ নেই।
চারপাশে কথা চলছিল এবং যা বলা হলো তার কিছু অংশ আমি শুনলাম।
- ওটা একটা পাগল বিদেশি, একজন বলল
- ধুর,/////// আজকাল এত ভণ্ডামি আর ন্যাকামি, আরেকজন বলল।
- ও মাতাল এবং শান্ত হতে চায়, তৃতীয় জন বলল।
- আপনি কীভাবে শান্ত হতে চান, যখন আপনি মাতাল, চতুর্থ জন বলেন।
৪.
পরিচারিকা আমার চা নিয়ে এল। আমি দ্রুত মূল্য পরিশোধ করে তাকে টিপ হিসাবে একটি ক্রোনার দিলাম, যাতে সে ভাবতে না পারে যে আমি চা পান করছি, কারণ আমার মদ পান করার সামর্থ্য নেই।
কিন্তু সেই চা পান করার সুযোগ কখনো পাইনি। আমি শান্তভাবে এবং শান্তভাবে বসে ছিলাম এবং আমার সব আচরণের মাধ্যমে সবার কাছে এটি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলাম যে আমি তাদের কোনো ক্ষতি করতে চাই না—তখন এক পুরোনো বন্ধু, যাকে আমি বিগত পনেরো বছর দেখিনি, সামনে দাঁড়াল এবং আমার এবং আমার চা কাপের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল।
- একি সত্যিই তুমি? সে বিরক্ত হয়ে বলল, আর তুমি এই অখাদ্য পান করতে যাচ্ছ?
- হ্যাঁ, আমি লজ্জায় উত্তর দিলাম।
- ঠিক আছে, শেষ যেখানে তোমার সঙ্গে গিয়েছিলাম, সেটা খুবই ভয়ানক ছিল!
আমি ভাবলাম সে মজা করছে এবং একই সুরে কিছু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে।
- আমি মনে করি তুমি স্মার্ট হতে চেষ্টা করছ, পুরোনো বন্ধুর উত্তর
লক্ষ করলাম, সে বিড়ালের মতো মাতাল।
কোনো বাধা ছাড়াই সে তখন আমাকে আশ্বস্ত করল যে আমাদের পরিচয়ের প্রথম মুহূর্ত থেকেই সে আমাকে সহ্য করতে পারেনি। সে বুঝতে পেরেছিল যে আমি একজন আহাম্মক। যদি আমি চাই সে নিজেকে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে চায়। সে সব সময় আমাকে বলার উপযুক্ত সুযোগের আকাঙ্ক্ষায় ছিল এবং এখন বলল!
আমার পুরোনো বন্ধু আরও বেশি কথা বলতে চেয়েছিল; অবশেষে সে চিৎকার করলে পুরো হল শুনতে পায়। সবাই আনন্দের সাথে শুনল এবং মোটা রক্তলাল চেহারার বেজমেন্ট বিধায়ক দরজায় এসে দাঁড়ালেন।
- ব্যাপার কী, তার কণ্ঠে হুমকি এবং হলের চারপাশে তাকালেন।
সবাই আমার দিকে ইশারা করে একজোট হয়ে বলল:
-ওই যে ভদ্রলোক বসে আছে, সে এক অসভ্য!
পর মুহূর্তেই আমি রাস্তায় এবং উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি আজই শেষ করতে হবে।
হলমার সোডারবার্গ (১৮৬৯-১৯৪১), সুইডিশ লেখক। তিনি সুইডেনের অন্যতম ছোটগল্প ও উপন্যাস লেখক। এই লেখকের গল্পের অনুবাদ।