ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসায় বিলম্ব, সমাধানে বার্লিনে প্রবাসীদের মানববন্ধন
ঢাকায় জার্মান দূতাবাসে ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলার কারণে ভিসা আবেদনকারীদের এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারও কারও ১৮ মাস অপেক্ষার পরও দূতাবাস কোনো নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে না। এ ভিসা জটিলতা নিরসনে জার্মানির বার্লিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ১৩ নভেম্বর বেলা ১১টায় একটি মানববন্ধন করেছেন ভিসা আবেদনকারীরা। ফ্যামিলি রি–ইউনিয়ন ভিসার আবেদনকারীদের জার্মানিতে বসবাসরত স্পাউসরা ভিসা জটিলতা নিরসনে এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জার্মানপ্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নিয়ে সমস্যা নিরসনের দাবি জানান। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন ঢাকায় জার্মান দূতাবাস ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলার কারণে অসংখ্য ভিসা আবেদনকারী এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষমাণ রয়েছেন। ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসা আবেদনকারীদের অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে। কিন্তু কারও কারও ১৮ মাস অপেক্ষার পরও দূতাবাস কোনো নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে না। ২০২২ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনকারীদের কাউকেই দূতাবাস নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়নি। আনুমানিক ৪০০ আবেদনকারী গত দেড় বছর যাবৎ অপেক্ষমাণ। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সঠিক কোনো জবাব দেয় না। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে অনেক পরিবার তীব্র মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসরত ও কর্মরত যেকোনো অভিবাসীদের নিজ দেশ থেকে তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের জার্মানিতে আনার আইনগত অধিকার রয়েছে। কিন্তু ঢাকায় জার্মান দূতাবাস ফ্যামিলি রি–ইউনিয়ন ভিসা প্রার্থীদের দীর্ঘদিন অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশি প্রবাসী ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসায় বিলম্ব ও জটিলতা নিরসনে জার্মান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসা আবেদনকারীদের কেউ স্বামী কেউবা স্ত্রী। আমরা বৈধভাবে জার্মানিতে চাকরি এবং বসবাস করছি। আমরা আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের এখানে নিয়ে আসার অধিকার রাখি। আমাদের স্বামী বা স্ত্রী জার্মানিতে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। দূতাবাসের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি ছিল, পাঁচ থেকে ছয় মাস অপেক্ষা করার। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের পরিবারের সদস্যরা কখন তাঁদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবেন, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য ছাড়াই দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের পরও কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায় না, যা আমাদের অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর আগে একবার বার্লিনের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে ১৬ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ভিসা কার্যক্রম চালু করা হবে। এতৎসত্ত্বেও জার্মান দূতাবাস নতুন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দেওয়ার বিভিন্ন টালবাহানার আশ্রয় নেয়। এ দীর্ঘ অনিশ্চিত সময় অপেক্ষা করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক, যা গুরুতর মানসিক চাপ ও বিষণ্নতার দিকে পরিচালিত করছে আমাদের। পাশাপাশি আমাদের পেশাদার জীবনে ফোকাস করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
জার্মান মৌলিক আইনের অনুচ্ছেদ ৬–এর ১ ধারাতে পারিবারিক পুনর্মিলন বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, এটা হতাশাজনক যে দূতাবাস এই পারিবারিক আইনের প্রতি উদাসীন, যা মানসিক ও আর্থিক উভয় দিক থেকে অত্যধিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তাই তাঁরা জরুরিভাবে জার্মান দূতাবাসের কাছে এবং জার্মানি পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে তিনটি দাবি জানান—
১. ঢাকা জার্মান দূতাবাসে পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসাপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে আর পুরো প্রক্রিয়াটি ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হবে।
২. আবেদনকারীদের অগ্রগতি ও পদ্ধতিগত বিষয়ে স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ যোগাযোগের মাধ্যম রাখতে হবে।
৩. প্রাথমিক আইনে বর্ণিত পারিবারিক মূল্যবোধের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যতের বিলম্ব রোধ করতে ঢাকা জার্মান দূতাবাসে প্রক্রিয়াগুলোর একটি ব্যাপক পর্যালোচনা এবং অপ্টিমাইজেশন পরিচালনা করার দাবি জানান।