মাতৃত্বের দ্বিতীয় যাত্রা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

শরীরের ভেতর এক অরণ্য—

যেখানে প্রতি ঋতুতে জন্ম নেয় বীজ,

আলো এসে ফিসফিস করে বলে যায়,

“তুমি-ই মাটি, তুমি-ই ভবিষ্যৎ।”

প্রথমে ছিল মিলন—যেন বজ্রপাতের মুহূর্ত,

আগুনের দৌড়, রক্তে ঝড়,

তীব্র পাশবিক সুখের উন্মাদনা।

কিন্তু মিলনের পর—অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুলে ওঠে,

মাটির ভেতর যেমন ফাটে অঙ্কুর,

শরীর তখন হয়ে ওঠে ভারী পৃথিবী।

ঘুম ভাঙে রাতের গভীরে,

নিশ্বাস কষ্টে আটকে যায়,

অদৃশ্য বোঝা টেনে বেড়ায় নারী—তবু সে জানে,

এই অসুবিধাই হলো বীজের প্রথম গান।

আর প্রসবের মুহূর্ত? রীতিমতো অগ্নিকুণ্ডে নির্ঘাত মৃত্যুর আশঙ্কা—

রক্ত, কান্না, যন্ত্রণায় ভেঙে যায় সমস্ত দেহের সীমারেখা।

নারী সেখানে মৃত্তিকা—

যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবনকে ঠেলে দেয় পৃথিবীর মুখে।

প্রশ্ন জাগে—কেন আবার, কেন দ্বিতীয়বার?

কেন আরেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি?

কারণ নারী জানে—যন্ত্রণার পরে যে কান্না শোনা যায়,

সেটাই আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন, পবিত্র ও মধুর সংগীত।

এই মাতৃত্ব একবারে শেষ হয় না—

প্রকৃতি যেমন বারবার বৃষ্টি আনে,

বারবার ফুল ফোটায়, বারবার নদী ভরে তোলে—

নারীও তেমনি নিজের শরীরের ভেতর

ভবিষ্যৎকে আহ্বান করে—বারবার।

সে জানে, তার যন্ত্রণা বৃথা নয়।

তার অস্বস্তি, তার রক্ত, তার মৃত্যু-ছায়া

সবকিছু ছোট্ট মুখের একটিমাত্র হাসিতেই ধুয়ে যায়।

তাই নারী আবারও সম্মতি দেয়,

আবারও আত্মসমর্পণ করে বেদনার কাছে।

কারণ সে-ই তো প্রকৃতি,

সে-ই চক্র,

সে-ই মাটি—

যার ভেতর দিয়ে পৃথিবী নিরন্তর

বাঁচিয়ে রাখছে মানবসভ্যতাকে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]