জাপান বনাম বাংলাদেশ: পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনব্যবস্থা–২

লেখকের পাঠানো

বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নতি: ব্যয় ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। দেশের পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত করার পাশাপাশি সঠিক প্রযুক্তি ও কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে পানির সুষম সরবরাহ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও কৃষির উন্নতি সাধন করা সম্ভব। তবে এই কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, যা সরকারি ও বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আয়োজিত হবে। নিচে কিছু মূল ব্যয়ের খাত ও এর সম্ভাব্য প্রভাব আলোচনা করা হলো।

ব্যয় নির্ধারণ

বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে কয়েকটি প্রধান খাতে ব্যাপক অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে কিছু প্রধান ব্যয় নিম্নরূপ—

১. পানি পরিশোধন ও নিষ্কাশন

বাংলাদেশে পানির শুদ্ধতা ও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের জলাশয় ও নদীগুলোর পানি পরিশোধনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করা উচিত। এই খাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এটি সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে বাস্তবায়িত হতে পারে।

২. বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও ব্যবহারের উন্নয়ন

বাংলাদেশে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও ব্যবহারের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির পানি শুদ্ধীকরণ এবং কৃষি ও পানীয় হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

৩. সেচ ব্যবস্থাপনা ও কৃষি উন্নয়ন

কৃষির জন্য সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং পানির অপচয় কমাবে। এই খাতে প্রায় ৩০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

৪. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের পানির উৎসের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নদী, জলাশয় ও উপকূলীয় এলাকার পানির স্তর কমে যাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এই খাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

৫. শিক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচি

জনগণের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা ও পানির সঠিক ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে জনগণকে নিয়মিত পানি সাশ্রয় ও পানির সঠিক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

‘দূর পরবাস’–এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

৬. গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন

পানি ব্যবস্থাপনা–সম্পর্কিত গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন। নতুন উদ্ভাবন ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এই খাতে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।

উন্নতির সম্ভাবনা

১. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পানি ব্যবস্থাপনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পানিসংকট মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় কমাবে।

২. স্বাস্থ্য রক্ষা

পানি পরিশোধনের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, যেমন ডায়রিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি কমবে, যা জনসংখ্যার সুস্থতা বাড়াবে। ফলে চিকিৎসা খাতে খরচও কমবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন

পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য খাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাবে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, আর শিল্প ক্ষেত্রে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। এর ফলে বাংলাদেশ আরও আত্মনির্ভরশীল ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে।

উপসংহার

এখনই পদক্ষেপ নিন, নয়তো দেরি হয়ে যাবে। জাপানের পানি ব্যবস্থাপনায় সাফল্য আমাদের জন্য এক বড় শিক্ষা। এটি প্রমাণ করেছে, সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব আনা সম্ভব। বাংলাদেশ যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে ভয়াবহ সংকট অনিবার্য।

প্রিয় বাংলাদেশবাসী, সময় ফুরিয়ে আসছে। পানি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে না পারলে দেশ টিকবে না! যেমন জাপান জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সংরক্ষণে সফল হয়েছে, আমাদেরও সেই পথেই হাঁটতে হবে।

১৮ কোটি মানুষের শক্তি এক হলে অসম্ভব কিছু নেই। কিন্তু যদি আমরা চুপ থাকি, সরকারের কার্যকর নীতি না থাকে, বেসরকারি খাত এগিয়ে না আসে, তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় আসবেই। ভয়ংকর ভবিষ্যৎ আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে!

এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়! আমাদের সন্তানেরা একদিন প্রশ্ন করবে—কেন আমরা পানি শুদ্ধীকরণ ও নিষ্কাশনের জন্য কিছুই করিনি? কেন আমরা বসে দেখেছি পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যেতে?

বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণ, সরকার ও বেসরকারি সংস্থা যদি একযোগে কাজ করে, তবে পানি শুদ্ধীকরণ ও সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আর যদি এখনো আমরা উদাসীন থাকি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না!

এগিয়ে আসুন, একতাবদ্ধ হোন—পানি রক্ষা করুন, দেশ বাঁচান, জীবন বাঁচান!...শেষ

লেখক: হক মো. ইমদাদুল, জাপান, গবেষক