হোপ
বাংলাদেশি আমেরিকান হয়ে গেলাম।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটি ছিল প্রথম তিন বছর সার্ভিস ভিসা, এর মধ্যে গ্রিন কার্ড অ্যাপ্রুভড, এরপর প্রতীক্ষা ৫ বছর।
নাগরিকত্বের আবেদন। তীব্র মানসিক চাপের ৮টি বছর...!
প্রথম ট্রিপ লেক্স থেকে সিয়াটল, ডেলটা এয়ারে প্রায় তিন ঘণ্টা, অক্টোবর মাস।
লেক্সের মিষ্টি ঠান্ডা, সিয়াটল এয়ারপোর্টে নামি ৪টার দিকে। কী প্রচণ্ড ঠান্ডা, ভ্যাঙ্কুভার থেকে সমস্ত ঠান্ডা এসে আমাকে সুস্বাগত জানাচ্ছে আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। লিকলিকে শরীর, ঠান্ডা মোটেও যায় না।
যিনি নিতে আসছেন, আটকে গেছেন রেড ট্রাফিক লেনে। দুই ঘণ্টা লাগবে পৌঁছতে।
জবুথবু হয়ে এক কোনায় বসি। আমার চেহারা যে দেখবে, মনে হবেই এক বিধ্বস্ত জীবন আমার, মানে লুজার!
সামনে দিয়ে আসা–যাওয়া করছে মানুষ। খুব ব্যস্ত এয়ারপোর্ট।
সামনে দিয়ে আসছে সবুজ জামা পরা শ্যামলী আফ্রিকান তরুণী, মনে হলো ৪০–এর মতো বয়স।
আমার পাশের চেয়ারে বসার আগে জিজ্ঞেস করল বসবে কি না! কী দারুণ ভদ্রতা!
কথা শুরু করল। সবিস্তার জেনে নিল আমার, অথচ সব বলিনি।
জিজ্ঞেস করল, জোহাভা সম্পর্কে জানি কি না। দ্রুত উত্তর দিলাম, নাহ, এটা কি আফ্রিকাবিষয়ক, কারণ ৫০ পেরিয়ে যাওয়া জীবনে এই প্রথম শোনা শব্দটি।
মুঠোফোনে দেখাল আমায়। বাংলা গদ্য, পদ্য, দুর্গাপূজা...লক্ষ্মীপূজা...কালীপূজা... কুরুক্ষেত্র, রাম...সীতা...ভরত, মহাবীর...বুদ্ধ...রামকৃষ্ণ...নবী...মিলাদুন্নবী...সিরাতুন্নবী...৩৩ বছরের যিশু...ইদানীং রাব্বি...তোরা...ফ্রয়েড...কার্ল…হরিপদ ডাক্তার আমি, অথচ শব্দটা কোনো দিন শুনিনি।
বুঝে নিলাম করুণাময় চিত্তে উদ্ধার করতে এসেছেন অসহায় আমাকে।
ভালো লাগল।
এরপর অনেকক্ষণ কথা হলো।
বুঝে নিল মানসিকভাবে শক্ত আছি।
বলল, মানুষেরা খুব বৈষয়িক হয়ে গেছে, ধর্মের পথে চলতে চায় না, ধর্মকথা শুনতে চায় না।
খুব হতাশ সুরে কথাগুলো বলল।
বললাম, ঈশ্বর আপনাকে পাঠিয়েছে এই সংঘাতময় পৃথিবীতে, ঠিক যেমন পাঠিয়েছে মাদার তেরেসাকে।
আপনার অন্তর্গত অসীম করুণাগুণে আমরা সবাই বেঁচে আছি। আপনি নীরবে ছড়াচ্ছেন, ছুয়ে দিচ্ছেন ঈশ্বরের, ধর্মের সুগুণ। সে আলো জ্বলবে আরো অনেকের মাঝে অসীম আলো হয়ে। আপনি চলতে থাকুন অবিচল।
খুব খুশি হলো।
শুভকামনা আর ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন করুণাপ্রাণ ধর্মপ্রাণ যিশুভক্ত নারীটি।
*লেখক: রতন জ্যোতি, ক্যালিফোর্নিয়া
দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]