মিউনিখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী

জার্মানির মিউনিখ শহরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরাছবি: লেখকের পাঠানো

দুরত্ব প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার, কোথায় সেই বাংলাদেশের সিলেট আর কোথায় জার্মানির মিউনিক। এত দুরত্বের দূরদেশ থেকে এসেও পরবাসে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধন শিথিল হয়নি। বরং বন্ধন হয়েছে, ক্যাম্পাসের স্মৃতিমাখা অনুভূতিতে ভরা আরও আবেগময়।

রবি ঠাকুরের কবিতার কথার মতো, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।/ ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।’ তাই তো জার্মানিতে বসবাস করা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেলেই একে অন্যের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার আকুলতা প্রকাশ করেন। এ চাওয়াকে সামনে রেখে ২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জার্মানিতে বসবাসরত শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী।

২ আগস্ট মিউনিখে জড়ো হয়েছিলেন জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা শাবিপ্রবির অ্যালামনাইরা। সবাইকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে শুরু হয় মূল পুর্নিমিলনীর অনুষ্ঠান। এই পর্বে মঞ্চে কথা বলেন সংগঠনের বর্তমান কার্যকরী সভাপতি মামুন রশীদ, এবারের পুর্নিমিলনী অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. মাহাদী হাসান এবং গতবারের পুর্নিমিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সভাপতি গোলাম হাফিজ খান।

এরপর শাবিপ্রবি ও এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘এক কিলো’র আবেগপ্রবণ স্মৃতিচারণা করেন শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবিতে কাটানো তাঁদের সোনালি অতীত ফিরে পেতে চাওয়ার ব্যাকুলতার পাশাপাশি উঠে আসে নানা চমকপ্রদ ঘটনা। নানা ঘটনার স্মৃতিচারণায় হাসি-কান্না আর আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন অংশগ্রহণকারীরা। এই পর্বের পর ড. নিধু লাল বণিক শাবিপ্রবি অ্যালামনাই সমিতির জন্য প্রস্তুত করা নতুন ওয়েবসাইট এবং সংবিধান উপস্থাপন করেন। এ উপলক্ষে তিনি এ দুটি প্রজেক্টের মাধ্যমে শাবিপ্রবি অ্যালামনাইদের সুসংগঠিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

সংক্ষিপ্ত চা–বিরতির পর অনুষ্ঠান পুনরায় শুরু হয়। শুরুতেই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন অ্যাডভাইজারি ও এক্সিকিউটিভ কমিটির ঘোষণা দেন ড. নিধু লাল বণিক। ১১ সদস্যের অ্যাডভাইজারি কমিটিতে নবীন–প্রবীণের সম্মিলন ঘটে। আর এক্সিকিউটিভ কমিটির জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল ভোটে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নাদেরা সুলতানা তানি সভাপতি এবং আদনান আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নতুন কমিটির সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে বরণ করে নেন পুরোনো কমিটির সদস্যরা। এর পরপরই শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা। এতে বড়দের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করে শাবিপ্রবি অ্যালামনাইদের শিশুসন্তানেরাও।

সবার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে মুহূর্তেই অনুষ্ঠানস্থল আনন্দের এক মহামিলনস্থলে পরিণত হয়। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সমবেত অতিথিদের মধ্য থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে কিছু অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নির্ধারিত কিছু করে দেখাতে। অতিথিদের পারফরম্যান্স সবাইকে নির্মল বিনোদন দেয়, যার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে দর্শকের ভোটে দুজন অতিথিকে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। সবশেষে সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত গান পরিবেশনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হয়।

এরপর পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ভেন্যু হিসেবে এসেন শহরকে নির্বাচন করা হয়। সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই বছরের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আবার ২০২৭ সালে মিলিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে সব অংশগ্রহণকারী নিজ নিজ ঠিকানায় ঘরে ফিরে যান।