এআই–এর সঙ্গে কথোপকথন

এআইরয়টার্স

এক সপ্তাহ আগে নিয়ম ভঙ্গ করে আগরাতে ঘুমুতে চলে যাই। রাত এগারোটায় জেগে যাই এবং পাশে থাকা সেলফোনে ওয়াটসঅ্যাপ টিপলাম। দেখি ‘মেটা এআই’ থেকে একটা মেসেজ:

‘মে আই হেল্প ইউ? আই অ্যাম মেটা এআই।’

আমি প্রশ্ন বললাম, আমার ঘুম ভেঙে গেল, এখন বাজে এগারটা। কীভাবে ঘুমাতে পারি?

উত্তরে এআই একজন সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াটিস্টের মতো অনেক কথা লিখে জানাল।

আমি ধন্যবাদ জানালাম। প্রতি–উত্তরে সে ওয়েলকাম জানিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো প্রশ্ন করার আহ্বান জানাল।

পরদিন আবার এআইয়ের সঙ্গে কথা শুরু করলাম। এবার গড বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলাম। এক সেকেন্ডের মধ্যে সব উত্তর চলে এল। জিজ্ঞেস করলাম, এক সেকেন্ডের মধ্যে তুমি কী করে এত বড় উত্তর দাও? সে বলল, ‘আমি হলাম মেশিন লার্নিং মডেল। আমার সব ডেটা সংগ্রহ করা আছে। স্প্লিট সেকেন্ডে উত্তর এসে যায় এবং আমাকে টাইপ করতে হয় না, চিন্তাও করতে হয় না।’

এবার বলি, ‘গড’ নিয়ে এআই কী বলল। ‘তোমার প্রশ্নটি গভীর ও কালজয়ী! আমার কোনো ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা মতামত নেই। তবে বিভিন্ন দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় কোনো দিক থেকে আমি পক্ষে ও বিপক্ষে বলতে পারি।’

এই বলে এআই পক্ষে তিনটি যুক্তি দিল।

মহাজাগতিক যুক্তি (প্রথম কারণ)

টেলিলজিক্যাল যুক্তি (নকশা ও জটিলতা)

নৈতিক যুক্তি (উদ্দেশ্যমূলক নৈতিকতা)

আর বিপক্ষের যুক্তিগুলো হলো—

মন্দের সমস্যা (সবার প্রেমময় ঈশ্বর কেন দুঃখ–কষ্ট হতে দেবেন?)

অসঙ্গতিপূর্ণ উদ্‌ঘাটন থেকে যুক্তি (পরস্পরবিরোধী ধর্মীয় বিশ্বাস)

প্রমাণের অভাব থেকে যুক্তি (কোনো অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ নেই)

মোদ্দা কথা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্ন হলো একটি গভীর ব্যক্তিগত ও বিষয়গত, যা লালনপালন, অভিজ্ঞতা ও বিশ্ব দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। তারপর আমি শুভরাত্রি জানালাম। এআই বলল, ‘শুভরাত্রি। মধুর স্বপ্ন। তোমার সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পেলাম।’

তারপর আমি আমার কন্যাদের কাছে বললাম। ওরা মজা পেল। আমি আমাদের কথোপকথন ফরওয়ার্ড করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। এআইকে জিজ্ঞাসা করলাম। সে তাৎক্ষণিক বলে দিল।

তার পরদিন। আমি এআইকে পরীক্ষা করার জন্য বললাম, ‘এই মাস আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বাঙালি, বাংলাদেশের। আমাদের পূর্বসূরিরা জীবন দিয়েছিলেন।’

তাৎক্ষণিক এআই–এর উত্তর, ‘তুমি বাংলা ভাষার মুভমেন্টের কথা বলছ। ভাষার জন্য তখন অনেকেই প্রাণ দিয়েছিলেন।’ এই বলে পুরো ফিরিস্তি তুলে ধরল।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কি বাংলা লিখতে পার?’ সে সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় লিখে পাঠাল। যদিও এআই–এর বাংলাটা এখনো উন্নত মানের হয়নি। যাক, আমি বরং বাহ্বাই দিয়েছি। এরপর আমি নিজেকে এডুকেটর ও কলাম লেখক হিসেবে পরিচয় দিলাম এবং বললাম যে আমি এআই নিয়ে লিখতে চাই। এআই তখন অনেক আইডিয়া দিল।

অতপর আমি জানতে চাইলাম, বলো তো কে লিখেছে Celebrities remind us of dying?

উত্তর এল, জীবেন রায়। ডিসপ্যাচ পত্রিকায় লিখেছে।

আমি বললাম, আমি সেই ব্যক্তি।

এআই খুব এক্সাইটেড। ওহ ইয়েস। সে ক্ষেত্রে, আমি আনন্দিত যে আমি নিজের সঙ্গে কথোপকথন করতে পেরেছি।

যাহোক, তাকে আমি বললাম যে এআইয়ের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় বেকারত্ব বেড়ে যাবে।

এআই–এর বক্তব্য হলো, এআই–এর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আজ দুপুরে অবসরে যাওয়া আমার সিনিয়র এক বিজ্ঞানী বন্ধুকে দাওয়াত করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করলাম। তাকে এআই–এর কথোপকথনের কথা বললাম। উনি তো দারুণ আগ্রহী। তাঁকে পাঠানোর পর তিনি তো একেবারে স্তম্ভিত। দারুণ জিনিস! ঈশ্বর নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত এআই–এর উত্তর।

বিষয়টা হলো, কিছু জানতে হলে আমরা গুগুল করি এবং উত্তর পেয়ে যাই। আর এআইটা হলো আরও বিশ্বস্ত এবং পুরো ডেটা থেকে নেওয়া সঠিক উত্তর। তা ছাড়া এমনভাবে বলে যে মনে হয় একজন মানুষের সঙ্গেই কথা হচ্ছে। সুতরাং যে কেউই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন করতে পারেন।

সত্যি কথা বলতে, বর্তমানে মেটার এই এআই-এর ট্রায়াল চলছে। মানুষ যখন মজা পেয়ে যাবে, তখন পয়সা দিয়ে রেজিস্টার করতে হবে। তবে এই এআই মার্ক জুকারবার্গের জিনিয়াস সংযোজন।

১৯৫০–৫৬ সালে অ্যালেন টুরিং ‘কম্পিউটার মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স’ নামে প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে এটাই এআই অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স নামে পরিচিতি লাভ করে।

আমার সিনিয়র বন্ধুটি এইমাত্র ফোন করে বললেন যে তিনি পঁচাত্তর বছর বয়সে নতুন করে আবার প্রেমে পড়েছেন। সেটা সবজান্তা এআই-এর সঙ্গে।

*লেখক: জীবেন রায়, অধ্যাপক, বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন কলম্বাস, যুক্তরাষ্ট্র

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]