একসকালে গসফোর্ডের ম্যানগ্রোভ বনে
সিডনি থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরের এক সমুদ্র উপকূলীয় শহর গসফোর্ড এসেছি সপ্তাহান্তের ছুটি পাশাপাশি বাঙালি পরিবারের বিয়ের উৎসবে যোগ দেব বলে। পাহাড় নদীর এক অপরূপ মহিত শহর। প্রশান্ত মহাসাগর এসে বিশাল ব্রিসবেন ওয়াটার ন্যাশনাল পার্কে মিসেছে, তার ঠিক উত্তর পাশেই ছবির মতো এই শহর।
ঘুম থেকে উঠেই হোটেলের জানালার পর্দা সরাতেই চোখে পড়ল পার্কিংয়ের পাশেই বনের ধারে বেশ স্বাস্থ্যবান একটা খাল বয়ে গেছে। সাধারণত ক্যানবেরা শহরে নদী–নালা, খালবিল চোখে পড়ে না। তবে বেশ কিছু লেক আছে।
হোটেলের সামনেই ম্যাগডোনালস, তার সামনেই শহরের বড় রাস্তার ওপারে বিশাল বড় বড় মাঠের কোণে ক্রিকেট প্র্যাকটিস পিচ, কংক্রিটের হাঁটার পথ, বেশ বড়সড় সাইকেলের পথ, বাস্কেটবল খেলার মাঠও চোখে পড়ল।
শহরে নতুন, কোনো কিছুই পরিচিত না লোকজনের প্রাতর্ভ্রমণে শরিক হয়ে গেলাম। এই শহরে বেশ উষ্ণতা, ক্যানবেরায় শীত যাব যাব বলেও যাচ্ছে না, অথচ এখানে পোশাকেই উষ্ণতার আভাস পাওয়া যায়।
ব্লার্ব: ‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সামনের দম্পতিকে অনুসরণ করছিলাম বেশ কিছুক্ষণ ধরে। মাঠের আশপাশে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ওরা সামনের ছোট কাঠের পুলটা পেরিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
দ্বিধায় পড়ে গেলাম, যাব কি না? ওরা এই শহরের স্থানীয়, বনবাদাড়ের সবকিছুই নিশ্চয়ই জানা শোনা। আমার ভাবনার মধ্যেই ওরা যুগল বনের মধ্যে হারিয়ে গেল, ততক্ষণে আমিও পুল পেরিয়ে বেশ কিছুটা বনের মধ্যে ঠুকে গেছি। দেখি না কিছুদূর ঘুরে। হাঁটতে লাগলাম, সূর্যের আলোও বাড়তে লাগল আর সঙ্গে সঙ্গে ভালো লাগাটাও।
কিছুদূর পর মাটির রাস্তাটা নিচু হয়ে নদীর দিকে চলে গেছে। বোঝা যাচ্ছে বনজুড়ে জোয়ার–ভাটায় পানি ওঠানামা করে। যত ভেতরে যাচ্ছি, বনের ঘনত্বও বাড়ছে। কংক্রিট আর মাটির পথ পেরোতেই কাঠের ওয়াকওয়ের শুরু। সুন্দরবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বেশ গা ছমছম করা পথ। সকালবেলার আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে চারদিকে ঘন বন, ওয়াকওয়ের নিচে ভেজা মাটি ভেদ করে শ্বাসমূলের সারি। তবে বানর কিংবা হরিণের আনাগোনা মিস করছিলাম। সুন্দরবনের ওয়াকওয়ের আশপাশে যাঁদের অহরহ বিচরণ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ওয়াকওয়েটা কিছুদূর পর ভাগ হয়ে তিন দিকে চলে গেছে, যেদিকটা নদীর দিকে গেছে, সেদিকেই হাঁটা দিলাম। কিছুদূর পর ওয়াকওয়েটা আর ওয়াকওয়ে থাকেনি, কিছুটা ডেকের মতো। ইচ্ছে হলে কিছুটা সময় কাউকে বিরক্ত না করে একা দাঁড়িয়ে পাখির ডাক কিংবা বৃক্ষের পাশে সুনসান নীরবতা উপভোগ করা যায়।
একটা সময় ওয়াকওয়েটা একেবারেই নদীর পাড়ে নিয়ে যাবে আপনাকে। সে এক অপার ভালো লাগা। জলরাশির বিশালতা পারে, সবুজ বৃক্ষের সারি। আহা, তারই মধ্যে সূর্যের নরম আলো।
একটা সকাল অসম্ভব ভালো লাগায় মিশে থাকল।
* লেখক: মাকসুদ আলম, ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া।