বাংলা ও প্রকৃতি
মাথায় ঝুঁটি দোলে বালিকার। শাড়ি জড়ানো মেয়েটি পুকুরঘাটে যায়। কলসিতে জল ভরে ওপরে দাঁড়ায়। আরও দুটি কিশোরী আসে। খেলতে মন চায় ওদের। ওরা কিট কিট খেলে। বাংলা প্রকৃতির ছবিটি জীবন্ত হয়ে ওঠে।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাজতে থাকে। জন্ম জন্মান্তরে বাংলাকে ছাড়তে চায় না এর সন্তান।
জীবনানন্দের প্রতিটি লাইনই তাৎপর্যপূর্ণ। আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এ বাংলায়। দরাজ–ভরাট কণ্ঠে পড়ে যাচ্ছিলেন পলাশ দে ।
ভারতীয় দূতাবাসের বাঙালির সাম্প্রতিক এ আয়োজনে আমরা অতিথি ছিলাম।
কিশোর–কিশোরীদের নাচে যেন আনন্দে জেগে ওঠার প্রেরণা মেলে। শুভ্র সুন্দর ভালোবাসাময় জীবনে এ এক আশার সংগীত। পুষ্পের ঘ্রাণ ভাসে বাতাসে আজ। রবীন্দ্রনাথের আরও আরও গান। বর্ষা আসে শ্যামল সুন্দর রূপে। তাপ শুষ্ক পৃথিবীকে সুধায় ভরিয়ে দেওয়ার জন্য। যেখানে বিরহী হৃদয়ে চাতক পাখি আকুল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আকাশে। বিছিয়ে দিয়েছে তার ব্যথিত মন। তমাল কুঞ্জপথে সজল ছায়াতে। নয়নে করুণ রাগ-রাগিনী জাগিয়ে। বকুল ফুলের মালা গেঁথে নিয়ে আগন্তুক বসে আছে। কখন মিলনের বাঁশি বাজবে তার জন্য। চঞ্চল নৃত্যে সে তা–ই প্রকাশ করে যাচ্ছে।
প্রকৃতি, প্রকৃতিই উপজীব্য। ফাগুন হাওয়া বয়ে যায়। পলাশ ফুল ফোটে। ঝাউ ডালে দোলা লাগে। বাঁধন হারা গান, বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ উদাসী হয়ে যায়। অসংখ্য রঙ লাগে মনে-প্রাণে। কী এক সুখের নাগালে নানা স্বপ্ন দেখায়।
মুক্তির গানে সঁপে দিলো তারা। নৃত্যের তালে স্বাধীনতার দাবিতে হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে...নাচল ছয় জনে। ঘন শ্রাবণ ধারার মতো উত্তাল তারা। বনের পাখি মনের আনন্দে উদ্যাপন করে জীবন, এও তাই। কারও সাধ্যি নেই তাকে ধরে রাখার। ঝড়ের মেঘে বজ্র হানে। তারই অট্টহাস্যে দূর হয় তাবৎ বাধা–বিপত্তি। ওরাও তাই। ওরা কারও তোয়াক্কা করে না।
পল্লি সংস্কৃতি যুক্ত ছিল। বাঙালির আচার–আচরণ কিংবা চর্চার বিষয় সে–তো মনের সঙ্গে গাঁথা। হোক না তা আসামের কিংবা অন্য কোনো অঞ্চলের।
রঙিলা রঙিলারে মন। হারিয়ে যাব দূরে। পাহাড়ি আসরে কখনো। প্রেমের কথা বলার অনুরোধ প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি। পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে অবদমিত থাকে না।
বাঁশি আজ আপন ভোলা। মন যমুনার জল তাদের উজ্জীবিত করে। হাতে হাত রেখে যাবে সুজন বন্ধু তারা।
গ্রাম বাংলার গানের ঢেউয়ে কোমর দুলালো কিশোরীরা। আসলে গানের তাল ছন্দটা এমন যে ওরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। হেইহো পিয়ালিরে/আশ্বিন ফাগুন মাসে/পরান ঘাসে নতুন বিয়ের ফুল ফুটিছে।
পল্লিসংগীতের কোরিওগ্রাফার অবন্তি সেনগুপ্ত। অন্যদিকে চার রবীন্দ্রসংগীতের ওপর কোরিওগ্রাফ করেছেন ঝুমা বিশ্বাস। গোটা অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও করেছেন এই দুই তরুণী।
বাংলা ও প্রকৃতি মনে দাগ কাটে। আমি তোমায় ভালোবাসি… বাজতে থাকে মনে।
নৃত্যের তালে উঠে আসে সেই প্রকৃতি। বাংলার হেমন্তের ধান উড়ছে কুলাতে। ঝুড়িতে সে ধান যাবে গোলায়।
এরপরই আসে পুজোর আবহ। মাটিতে আলপনা। প্রদীপ জ্বেলে ঘণ্টা বাজিয়ে দেবীকে আবাহন। তারপর আরতি। কেউ শঙ্খধ্বনি করে ঊর্ধ্বমুখে।
প্রজ্ঞা পারমিতা এলেন মাইক্রোফোনে হাতে। পরিচয় করিয়ে দিলেন কলাকুশলীদের। শেষ হলো এ পর্বের। দর্শক শ্রোতার মুখে তখন একরাশ মুগ্ধতা।
ঝুমা বিশ্বাস বললেন, চৌদ্দটি কিশোর-কিশোরী অংশ নিয়েছে নৃত্য আর অভিনয়ে। অনেকবার পোশাক বদল করতে হয়েছে। বিকেল থেকেই সাজসজ্জায় মনোযোগ দিতে হচ্ছিল। আরও বলেন, মায়েরা এ জন্য ছিলেন ভীষণ ব্যস্ত।