জাপানে উৎসবমুখর পরিবেশে ৩০তম শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপন
জাপানে বসবাসরত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সার্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ৩০তম শারদীয় দুর্গোৎসব। গত রোববার (৫ অক্টোবর ২০২৫), সাইতামা সিভিক হল, ইওয়াতসুকিতে উৎসবমুখর ও ধর্মীয় গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে এই দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে অংশ নেন জাপানে অবস্থানরত বাংলাদেশি, ভারতীয়, নেপালি, ও অন্যান্য দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয় জাপানি নাগরিকেরা। সবাই মিলেমিশে এক আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হয় দিনটি।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পুরোহিত মহাশয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূজা আরম্ভের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। বিপুলসংখ্যক ভক্তের উপস্থিতিতে একাধিক পর্বে অঞ্জলি প্রদান, দেবী আরাধনা ও বিশ্বশান্তির প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে উপস্থিত সবার মধ্যে মহাপ্রসাদ ও ভোগ বিতরণ করা হয়। ভক্তদের উচ্ছ্বাস আর মিলনমেলার আবহে পুরো অনুষ্ঠানস্থল ভরে ওঠে এক অপূর্ব উৎসবের আনন্দে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী, বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোরারজি দেশাই বর্মণ, (কমার্শিয়াল কাউন্সেলর, বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও), স্বামী দিব্যনাথ আনন্দ (বেদান্ত সোসাইটি অব জাপান), অধ্যাপক রাজীব শ (কেইও ইউনিভার্সিটি, জাপান), চিকামুরাকামি, (প্রযোজক, বহুভাষিক মিডিয়া বিভাগ, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড বিভাগ, জাপান)।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, ‘প্রবাসে থেকে ধারাবাহিকভাবে ৩০ বছর ধরে দুর্গোৎসব আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি প্রবাসে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে জীবিত রাখছে। রাষ্ট্রদূত এ সময় পূজা স্মরণিকা ‘শারদীয়া ২০২৫’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন সার্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান-এর সভাপতি বিপ্লব মল্লিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস। দুর্গাপূজার মাহাত্ম্য নিয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা সুখেন ব্রহ্ম। জাপানে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার চলমান অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন উপদেষ্টা বিজন কুমার মিত্র। সংগঠনের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দেবকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়, যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার রায়।
দুর্গোৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভক্তিমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনায় দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হন। উত্তরণ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রাণবন্ত ও নান্দনিক পরিবেশনা অনুষ্ঠানে এনে দেয় অন্য রকম আবহ।
সন্ধ্যা আরতি, সিঁদুর খেলা ও বিজয়ার মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে সারা দিনব্যাপী এই মহোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। ‘আসছে বছর আবার হবে’—এই প্রত্যাশা ও আনন্দঘন আবেশে ভক্তরা বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে।