সিঙ্গাপুরপ্রবাসী কবি মুকুল হোসাইন: প্রবাসের মাটিতে স্বপ্নবাজ কবি ও শিল্পী

প্রবাসের জীবন মানেই হাজারো ত্যাগ, সীমাহীন পরিশ্রম আর একাকিত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার এক নিরন্তর চেষ্টা। কিন্তু এই কঠোর বাস্তবতার মধ্যেও কেউ কেউ হার মানেন না। বরং জীবনকে নতুন রঙে সাজিয়ে তোলেন। এমনই একজন স্বপ্নবাজ শিল্পী হলেন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী কবি ও সংগীতশিল্পী মুকুল হোসাইন।

শৈশব ও কৈশোর: এক প্রতিভার উন্মেষ
মুকুল হোসাইন বেড়ে উঠেছেন বাংলাদেশের এক পল্লিগ্রামে। যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে তাঁর শৈশব কেটেছে খেলাধুলা, গান, কবিতা আর সৃজনশীলতায় মুখর হয়ে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত। বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা লেখা ও গানের আসরে অংশগ্রহণ ছিল তাঁর প্রিয় ব্যস্ততা।

প্রবাস জীবনের চ্যালেঞ্জ ও নতুন শুরু

শৈশব ও কৈশোরের আলো ছাপিয়ে জীবিকার প্রয়োজনে একদিন তাঁকে পাড়ি জমাতে হয় সিঙ্গাপুরে। পরিবারের সান্নিধ্য হারিয়ে একাকিত্বের কষ্টের মধ্যে তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন নতুন এক সৃষ্টিশীল অধ্যায়। শ্রমজীবী জীবন যেমন ছিল কঠিন, তেমনই তার মাঝে লুকিয়ে ছিল এক শিল্পীর আত্মপ্রকাশের গল্প।

প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি তিনি কখনো লেখনীকে ছাড়েননি। তাঁর অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতার বই ‘মি মাইগ্রেন্ট’ ও ‘ব্রেভিং লাইফ’। দুটি বই–ই সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা ইথোস বুকস থেকে প্রকাশিত হয়, যা তাঁর সাহিত্যজগতে প্রবেশের এক মাইলফলক। বলে রাখা ভালো, সিঙ্গাপুরপ্রবাসী কবি মুকুল হোসাইনের বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘অপূর্ণ বাসনা’, ‘দুঃখের সীমানায় সুখ’, ‘সিঙ্গাপুরের দিনগুলো’ তাঁর জীবনের এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছিল।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া এই কবিকে বিভিন্নভাবে কাভারেজ করেছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য স্টেট টাইন সিঙ্গাপুর, বিবিসি লন্ডন, দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ছুটির দিনে, সমকাল, চ্যানেল নিউজ এশিয়া সিঙ্গাপুর, চ্যানেল ফাইভ সুরিয়া, মিডিয়া কপ, বাংলাদেশের এটিএন নিউজ ইয়াং নাইটসহ অনেক পত্রপত্রিকা। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী কবি মুকুল হোসাইনকে নিয়ে দুটি লাইভ ডকুমেন্টারি তৈরি করে সিঙ্গাপুরের উল্লেখযোগ্য টিভি চ্যানেল `চ্যানেল নিউজ এশিয়া' ও ‘মিডিয়া কপ চ্যানেল ফাইভ’।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

গানের ভুবনে আত্মপ্রকাশ

লেখালেখির পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তাঁর মনে ছিল গানের প্রতি অগাধ টান। প্রবাসে কাজের ফাঁকে গুন গুন করে গাওয়া গান ধীরে ধীরে পরিণত হয় সত্যিকারের সংগীতে। নিজের লেখা গান নিজেই সুর করেন এবং গাওয়ার মধ্যে দিয়ে আবিষ্কার করেন সৃজনশীলতার এক নতুন রূপ। এটা ছিল তাঁর দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফসল।

প্রকাশিত গান ও সাফল্য

তাঁর সংগীতযাত্রার প্রথম ধাপ শুরু হয় নিজের লেখা ও সুর করা প্রথম গান ‘প্রবাসীর ভালোবাসা’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। গানটি ছিল তাঁর হৃদয়ের আবেগমাখা কাহিনি। এরপর তিনি আরও কয়েকটি গানের কাজ শুরু করেন, যার মধ্যে অন্যতম ‘জানো না প্রিয়’। সুর করেছেন ভারতের সংগীত পরিচালক আকাশ সেন ও মিউজিক কম্পোজ করেছেন রাশেদ।

দেশ ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা

প্রবাসে থেকে শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি নিজের দেশ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। তাঁর তৃতীয় গান ‘ও সিঙ্গাপুর’ তিনি সিঙ্গাপুরকে ডেডিকেট করে লিখেছেন, সুর করেছেন ও গেয়েছেন। এই গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি হয়েছে জুলাইয়ে। জমকালো আয়োজনে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট গানটির মোড়ক উন্মোচন করবেন বলে তিনি আশা করছেন। তাঁর চতুর্থ গান ‘ও বাংলাদেশ’, যা তিনি নিজেই লিখেছেন, সুর করেছেন ও গেয়েছেন। দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে তিনি এ গান সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর শিকড়ের প্রতি অটুট টানকে প্রতিফলিত করে।

আগামী দিনের স্বপ্ন

মুকুল হোসাইন থেমে থাকতে চান না। সাহিত্য, গান ও সংস্কৃতির মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে নিজের সৃজনশীলতা উপহার দিতে চান। তাঁর লক্ষ্য, বাংলা গান ও কবিতাকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়া এবং প্রবাসীদের মনে দেশপ্রেমের সুর জাগিয়ে তোলা।
একজন সাধারণ শ্রমজীবী থেকে কবি ও সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠার পথ সহজ ছিল না, কিন্তু মুকুল হোসাইন কখনো হাল ছাড়েননি। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা, প্রতিভা ও মানুষের ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিচ্ছে স্বপ্নের পথে। প্রবাসে থেকেও দেশের সংস্কৃতির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বাংলা ভাষা, কবিতা ও গানের সমৃদ্ধি ঘটাতে চাইছেন। তাঁর এই যাত্রা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা!