কানাডায় বন্ধ পিজিপি প্রোগ্রাম, বিপাকে পড়বেন কারা
প্রতিবছর গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ লোক কানাডায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। কানাডার মোট নাগরিকদের ২৭ ভাগ দুনিয়ার অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করেছে। আর ১৭ ভাগ কানাডিয়ানের জন্ম কানাডায় হলেও তাঁদের মা–বাবার জন্ম দেশটির বাইরে।
অর্থাৎ এই দুই প্রজন্মের ৪৪ ভাগ কানাডিয়ান সব সময়ই তাঁদের ফেলে আসা দেশের কথা মাথায় রেখে, তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কথা চিন্তা করে, কানাডায় দিন কাটান বছরের পর বছর। তাঁদের কথা মাথায় রেখে কানাডা একটি ইমিগ্রেশনের সুযোগ করে রেখেছিল ‘প্যারেন্টস–গ্র্যান্ড প্যারেন্টস প্রোগ্রাম (পিজিপি)’ নামে। এই ইমিগ্রেশন স্ট্রিমে কানাডায় বসবাসরত যেকোনো নাগরিক কিংবা পিয়ার কার্ড হোল্ডার অন্য দেশে বসবাসরত তাঁদের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানিকে কানাডায় স্থায়ীভাবে নিয়ে আসার জন্য আবেদন করতে পারতেন। তবে বেশ কিছু শর্ত তাঁদের পূরণ করতে হতো।
অ্যাপ্লিকেশন করার আগের তিন বছর তাঁদের কানাডিয়ান আয় উঁচু পর্যায়ে থাকতে হতো। প্রতিবছর এ প্রোগ্রামে যে পরিমাণ আবেদন জমা পরত, তার চেয়ে লোক অনেক কম অনত কানাডা। বেশি আবেদন পড়ার ফলে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হতো সৌভাগ্যবানদের। আবার কোভিড–পরবর্তী সময়ে প্রোগ্রামটি বছর দুয়েক বন্ধ রেখেছিল কানাডা। তারপরও মানুষ আশান্বিত ছিল, তাঁরা একদিন এই প্রোগ্রামে তাঁদের বাবা-মাকে নিয়ে আসবেন। আবার অনেকে এই প্রোগ্রামের বদৌলতে মা–বাবার সঙ্গে একসঙ্গে কানাডায় বসবাস করছেন।
২০২৫ সালে এ প্রোগ্রামে ২৪ হাজার ৫০০ প্যারেন্টস, গ্র্যান্ড–প্যারেন্টস আনার পরিকল্পনা কানাডা তাদের ইমিগ্রেশন প্ল্যানে রেখেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের ৩ জানুয়ারি কানাডার অভিবাসন ও রিফিউজি মিনিস্টার মার্ক মিলার ঘোষণা দেন, প্রোগ্রামটি আপাতত স্থগিত করা হলো। মন্ত্রীর ঘোষণার কারণে কানাডায় বসবাসরত নিউ ইমেগ্র্যান্টদের মধ্যে একটি হতাশা নেমে এসেছে। কারণ, যাঁরা মা–বাবাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে চান, গভর্মেন্টের যে ইনকামের সিলিংয়ের কথা বলা হয়েছে, তা পূরণ করতে কয়েক বছর লেগে যায়। সিলিং পূরণ করার পর যখন মানুষ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এলিজিবল হন, তখন এ ঘোষণা রীতিমতো তাঁদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড বাংলাদেশিদের জন্য এটি একটি স্তব্ধকর খবর।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি কানাডিয়ান আমিরুল আজিম জানান, দীর্ঘ ১১ বছর কানাডায় বসবাস করার পর মা–বাবাকে এর যে ইনকাম সিলিং প্রয়োজন, সেই ইনকাম করা শুরু করেছেন। এখন এই স্ট্রিম বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, ‘যা আয় করি, তার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগই ট্যাক্স দিয়ে দিই, তারপরও যদি বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে না থাকতে পারি, এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।’ অন্যদিকে কানাডার বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের ফেসবুক পেজগুলোয় এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, তা হলো, সুপার ভিসা বা সাধারণ ভিজিট ভিসায় এসে বাবা-মায়েরা সন্তানদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় থাকতে পারেন, কিন্তু সুপার ভিসা বা ভিজিট ভিসায় এসে মা–বাবা থাকলে তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ফ্রি নয়। বিদেশি নাগরিকদের জন্য চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে মধ্যবিত্ত কানাডিয়ানদের হাজার হাজার ডলারের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা ব্যয়ভার গ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব। উল্লেখ্য, কানাডায় কানাডিয়ান নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবা ফ্রি।