সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের আয়োজনে ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে প্রবাসীদের ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আল হারামাইন পারফিউমসের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সরকারের করণীয় ও রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, রেমিট্যান্স প্রবাহ, ব্যবহার ও বৃদ্ধির উপায় এবং বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কামরুল হাসান।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি শিবলী আল সাদিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জনির পরিচালনায় মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দ্য ডেইলি স্টার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, এনআরবি ব্যাংক ও আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান সিআইপি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দুবাইয়ের রিজিওনাল ম্যানেজার সাকিয়া সুলতানা, জনতা ব্যাংক দুবাই শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মালেক, জনতা ব্যাংক শারজাহ শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আকবর ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাইয়ের সিনিয়রসহ সভাপতি আইয়ুব আলী বাবুল, কমিউনিটি নেতা নওশের আলী, আমাদের সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার গোলাম সাত্তার রনি, সিনিয়র রিপোর্টার আরিফুজ্জামান মামুন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জামান।
বক্তারা দীর্ঘ আলোচনায় রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিমানের সেবা অন্যান্য সংস্থার সেবার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা তৈরি করতে বিভিন্ন প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সরাসরি বৈধ পথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়াতে ব্যাংক চার্জ মওকুফ, মোবাইল অ্যাপ তৈরি, চলমান রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৪ শতাংশে উন্নীতকরণ, বন্ডের লভ্যাংশ বৃদ্ধি করা, বিদেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেওয়া, শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা প্রদান, প্রশিক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমিকদের বিদেশে প্রেরণ, দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য পুনঃরপ্তানির সুযোগ তৈরি করা, হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, দেশের বাইরের জনতা ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের ঋণ পরিশোধ, প্রবাসীদের জন্য পেনশনব্যবস্থা চালু ও ক্যাপিটাল মার্কেট তৈরির বিষয়ে সুপারিশ প্রস্তাব করেন বক্তারা।
বি এম জামাল হোসেন বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এই গোলটেবিল আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। বৈশ্বিক সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখন যে সংকটে আছে, এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ সংকটের প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবী এখন শঙ্কিত। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বিশ্লেষণ আসছে। এতে দেখা গেছে, দুটি দেশ অত্যন্ত লাভবান হচ্ছে। তারা হলো আমেরিকা ও রাশিয়া।
সৈয়দ আশফাকুল হক বলেন, ‘রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার চাবিকাঠি, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। রেমিট্যান্স নিয়ে কিছু কথা আসছে। আমি বলব, সমস্যা থাকবেই, সমাধান হয় না বলেই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যুগের পরিবর্তন হচ্ছে, যুগের সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে ছিটকে পড়তে হবে। প্রবাসে নিযুক্ত মিশন তথা দূতাবাসগুলোতে যাঁরা কর্মরত আছেন, তাঁদেরও অনেক নিয়মকানুন আর সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবুও আপনাদেরও ছোট্ট একটি উদ্যোগ দেশের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।’
মাহতাবুর রহমান নাসির বলেন, দেশের নানা সংকটে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অনেকগুলো দাবির মধ্যে অন্যতম রেমিট্যান্স প্রণোদনার পরিমাণ ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে যেন ৪ শতাংশ করা হয়। যেখানে সরকার পণ্য রপ্তানি, কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে শিল্প খাতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে কত অনিয়ম দুর্নীতি হয়, তা বলে শেষ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বৈধ অর্থ প্রেরণে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ প্রণোদনা চাওয়া যৌক্তিক দাবি বলে মনে করি, যা বাস্তবায়ন করা হলে অচিরেই হুন্ডির পিঠে কশাঘাত করা সম্ভব হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আইটি ম্যানেজার মফিজুল রহমান পিংকু, প্রকৌশলী এস এ মোরশেদ, প্রকৌশলী নেসার রেজা খান, ব্যবসায়ী নাদিয়া নিপা খান, এ কে আজাদ, সংগঠক কাজী মোহাম্মদ আলী, আনসারুল হক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, যুগ্ম সম্পাদক মোদাচ্ছের শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল শাহীন, প্রচার সম্পাদক শাহজাহান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইসতিয়াক আসিফ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রেসক্লাবের সদস্য ওসমান চৌধুরী, নওশের আলম সুমন, জাসেদুল ইসলাম, এস এম শাফায়েত ও মোহাম্মদ নিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, সংযুক্ত আরব আমিরাত