নিউইয়র্কে সাস্ট অ্যালামনাইয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
নিউইয়র্কে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সাস্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনক’-এর উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন।
নিউইয়র্কের কুইন্সের এস্টোরিয়ায় অবস্থিত জালালাবাদ ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি স্টেটের বিভিন্ন পেশায় কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রায় অর্ধশতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ নেন। দুপুর থেকেই নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকা থেকে অংশগ্রহণকারীরা জালালাবাদ ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণাসহ সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র ও অতিথি শিক্ষকদের আলাপচারিতায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশন করা হয় বিকেলের নাশতা। এরপর শুরু হয় মূল পর্ব। এ পর্বে ছিল পরিচিতি পর্ব, সাধারণ সভা। সাধারণ সভায় উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন বোর্ড গঠিত হয়। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এ সিলেকশন বোর্ড একটি ২১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী ও ৭ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠনে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম বেলায়েত হোসেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাডেমিক সিলেবাস তৈরি করা হয় এবং বিশ্বমানের লেখকদের বইগুলো পাঠ্যবই হিসেবে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পাশাপাশি দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক দ্বারা একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত শিক্ষাকে পেশাগত জীবনে শতভাগ কাজে লাগাতে সক্ষম। যার প্রতিফলন শিক্ষার্থীরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত বিশ্বে গড়ে তুলছেন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার।’
এ ছাড়া আরও বক্তব্যে দেন বিশ্ববিদ্যালয় তথা অর্থনীতি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাস্টিয়ানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, সাস্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউ এস এ একটি রোল মডেল হিসেবে দেখতে চাই। কারণ, সাস্ট আমাদের ভালোবাসা, আবেগ ও অনুভূতি জুড়ে।
এদিকে বর্তমানে এনওয়াইপিডির ক্রিমিনাল জাস্টিস ব্যুরোতে কর্মরত ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিমার সায়েন্সের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রোলিয়ার মতো উন্নত দেশে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ লাভের পাশাপাশি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ, আইবিএম, গুগল, অ্যামাজনের মতো বিশ্বের নামকরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় বেশ এগিয়ে।
একই ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুদ আলম বলেন, ‘সাস্টিয়ানদের মিলনমেলায় আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আশা করি ভবিষ্যতে এ ধরনের মিলনমেলা অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া বিশেষ অতিথিদের আমেরিকায় অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতি শাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনুদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তাঁরা বক্তব্যে ক্যাম্পাসের স্মৃতিচারণার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বেলায়েত চৌধুরী, মো. ফখরুল ইসলাম, সায়েদ জাবেদুর মুনির, আহমেদুর রহমান রণি, অসীম কুমার সরকার, আলমগীর হোসেন, মাহবুব আহমেদ মাসুম, আজহার আহমেদ, মো. মইনুল হোসেন বাবু, কাজী লিমন, মিসকাত জাহান, ফারহানা ইসলাম, দীপঙ্কর দাস দীপন, শাকির হোসেন, তাসফীক রহমান, মৌসুমী কাপালী, মো. জাবেদুল হক, মো. শফিকুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, রাজেশ মাহা, ওবাইদুর রহমান, রিয়াদুল ইসলাম, শোয়েব চৌধুরী, আতাউল গণি আসাদ, মো. সাদিকুর রহমান সুফিয়ান, টিপু, আহমেদ ফাহাদ ও প্রদীপ্তা রায় প্রমুখ।
রসায়ন বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী বেলায়েত চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ও জুনিয়র, ব্যাচমেটসহ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে সাস্টিয়ান বন্ধনকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ফরিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বেলায়েত চৌধুরী। সভা শেষে আহ্বায়ক ফরিদুল আলম অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি অদূরভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনে সাস্টিয়ানদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
*লেখক: এস এম হক, সাবেক শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি, সিলেট