কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচালকছবি: সংগৃহীত

কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া যেন গ্রামবাংলার সংগ্রামী জীবনের সত্য চিত্রায়ণ।
‘ভাতের কুড়কুড়ি কি যৌবনের কুড়কুড়ি’। দাদির মুখে সবচেয়ে বেশিবার শোনা শ্লোক এটা। কুষ্টিয়া বা এতদঞ্চলে বহুল পরিচিত এ শ্লোক। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় আপনার পেটে ভাত থাকলে সবই ভালো লাগবে আর পেটে ভাত না থাকলে সবই বিরস লাগবে। আরও সহজ করে বললে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে ক্ষুধা। ক্ষুধার অন্ন নিবারণ করতে পারাটা তাই মানবজীবনের মূল লক্ষ্য। মানুষের মৌলিক অধিকারের তালিকাতেও তাই সবার আগে ‘খাদ্য’কেই স্থান দেওয়া হয়েছে।

শহুরে জীবনযাপনে মানুষের পেটে ভাত থাকে, তাই তাদের অন্যান্য বিনোদনের দরকার হয়। যেহেতু তাদের পেটভর্তি ভাত থাকে, তাই তখন তাদের মনকে রাঙানোর জন্য নানান উপকরণের দরকার পড়ে। তাদের পড়াশোনা করতে হয়। নিজেদের শিক্ষিত করতে হয়। সমাজসভ্যতার খবর রাখতে হয়। বেড়াতে যেতে হয়। তাদের সিনেমা–নাটক দেখতে হয়। তাদের নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। তাদের ব্যায়াম করতে হয়। এমন হাজারো নিয়মের বেড়াজালে তখন তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। তাই তারা পেট ভরে ভাত খেয়েও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না।

শহুরে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের ভবিষ্যৎও তারা নিশ্চিন্ত করার চেষ্টায় অহোরাত্রি পরিশ্রম করে চলে। জীবনের সবিছুই তারা পরিচালিত করে তাদের স্বরচিত সিলেবাস অনুযায়ী। সিলেবাসের একটু এদিক–ওদিক হলেই তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তাদের এই অলীক দুঃখ–কষ্ট দেখলে অবাকই হতে হয়। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তারা বাচ্চাদের বাইরে খেলতে পাঠায় না। আবার সেই বাচ্চাই যখন খেতে চায় না, তখন আবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু গ্রামের একজন বাচ্চা তিন বেলার পরিবর্তে হয়তোবা এক বেলা একমুঠোও অন্ন পায় না। সারা দিন বালু নিয়ে খেলাধুলা শেষে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ে।  

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেও এখনো অনেক গ্রামে মানুষের তিন বেলা অন্নের জন্য গলদঘর্ম হতে হয়, বিশেষ করে নদীর পাড়ের বা হাওরাঞ্চলের মানুষের। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি নদীভাঙন রাতারাতি একজন মানুষকে পথের ফকির করে দিতে পারে। ঠিক একই অবস্থা হাওরাঞ্চলের মানুষদেরও। তাদের প্রধান এবং একমাত্র জীবিকা হচ্ছে কৃষিকাজ। কৃষিকাজের মাধ্যমেই অন্নের সংস্থান হয়। নিজের খেতের ধান থেকে চাল বানিয়ে বছরব্যাপী ভাতের ক্ষুধা মেটানো। তার সঙ্গে হয়তোবা নিজের আঙিনায় চাষ করা সবজি অথবা গৃহপালিত পশুপাখির মাংস জোটে কখনো। তবে বেশির ভাগ সময় ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে থাকে এক চিমটি লবণ। তাই যেন অমৃত। আসলে পেটে ক্ষুধা থাকলে যেকোনো খাবারই সুস্বাদু লাগে।

নদীভাঙন যেমন নদীর পাড়ের মানুষকে রাতারাতি পথে বসিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি হাওরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বেড়িবাঁধের ভাঙন রাতারাতি হাওরের মানুষকে নিরন্ন করে দেয়। ধান তলিয়ে গেলে সারা বছর কী খেয়ে বাঁচবে, সেই চিন্তাই তখন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। হাওরের পানি বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ সীমান্তের ওপারের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল। পাহাড় থেকে নেমে আসে বলে ঢলের এ পানির গতি থাকে অনেক দ্রুত। এর ফলে মাটির বাঁধ একসময় ভেঙে যায়। আর এ ঢলের মূল কারণ মুষলধারে বৃষ্টিপাত। শহরের মানুষ যখন বৃষ্টি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গরম করে ফেলে খিচুড়ি আর গরুর মাংসের ছবি দিয়ে, তখন হাওরের মানুষ রাত–দিন এক করে ফসল রক্ষায় ব্যস্ত। শহরের মানুষের এত সুখ্যাতি করার কারণটা লেখার শেষে উল্লেখ করব।

হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকানির্ভর ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের প্রথম চলচ্চিত্র, হয়তোবা শেষ চলচ্চিত্রও? কারণ, এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য তিনি কোনো হল পাচ্ছিলেন না। গত ২৯ অক্টোবর এর প্রিমিয়ার শো হলেও এর ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে শঙ্কা থেকে এরপর কোনো প্রেক্ষাগৃহ আগ্রহী হচ্ছিল না প্রদর্শনে। অবশেষে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স ১১৭ মিনিটের এ সিনেমা প্রদর্শনে রাজি হয় ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে। চলে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। তারা প্রতিদিন বেলা ১১টা এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় দুটো শো। অনেক ঘুরেও সিনেমাটি মুক্তির জন্য হল পাচ্ছিলেন না জানিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহরের সিনেমা হলমালিকদের সাথেও কথা বলেছি। তাঁরা কেউ সিনেমাটি প্রদর্শনে আগ্রহী নন। অনুরোধ করেই স্টার সিনেপ্লেক্সকে রাজি করানো হয়েছে।’

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

সিনেমাটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে বৈষম্য-বঞ্চনার মাঝে টিকে থাকা প্রান্তিক মানুষের সম্মিলিত লড়াইয়ের গল্প নিয়ে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি বানানো হয়েছে। হাওরের জল ও কাদায় মেশা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উঠে এসেছে কাহিনিতে।’ কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘কোনো ডাবিং করা হয়নি, সম্পূর্ণ সংলাপ লোকেশনে রেকর্ড করা। বাণিজ্যিক ফর্মুলার বাইরে শিল্পমানসম্মত সিনেমা নির্মাণের প্রচেষ্টা। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করেছি আমরা, যা কেবল সিনেমার জন্যই লেখা।’ ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবীশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমী ইসলাম, সামিয়া আকতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ সিনেমায় তেমন বড় তারকা বা তথাকথিত স্টার নেই। কিন্তু যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা থিয়েটারে অভিনয় শিখেছেন এবং তাঁদের অভিনয় পরীক্ষিত।

কুড়া পক্ষীকে আমাদের এলাকায় বলে ডাহুক পাখি। এ পাখি জলাশয়ের কাছাকাছি থাকে। ডাহুক পাখির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, শেওলা, ধান ইত্যাদি। পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়। অনেক সময় খাবারের খোঁজে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। বাসা বাঁধে জলার ধারে ঝোপে কিংবা বাঁশঝাড়ে, তবে পানি এদের প্রধান আশ্রয়। ডাহুক পাখি যেন হাওরের মানুষের প্রতিছব্বি। তাই কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া সিনেমাটার নামকরণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

জলাশয়ের কাছাকাছি থাকলেও খাবারের সন্ধানে একসময় ডাহুক পাখিকে যেমন শূন্যে উড়াল দিতে হয়, তেমনি হাওরের মানুষকেও সর্বস্ব হারিয়ে একসময় অজানার পথে পাড়ি জমাতে হয়। তখন শহরে বাড়তে থাকে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানের পুঁজিবাদের দুনিয়ায় মানুষ সবকিছুই করছে লাভের আশায়। তাই সিনেমা হলমালিকেরা এ সিনেমা দেখতে রাজি হয়নি কারণ শহরের লোকজন এ সিনেমা দেখতে আসবে না। এ সিনেমায় চাকচিক্য নেই বরং আছে রূঢ় বাস্তবতার সত্য চিত্রায়ণ। আর নেই কোনো তথাকথিত ‘গ্ল্যামারাস’ অভিনেতা বা অভিনেত্রী। বর্তমানের শহুরে জীবনে আমরা শুধু চাকচিক্যকেই প্রাধান্য দিই। এর বাইরে আমরা যে প্রান্তিক মানুষের জন্য ভালোবাসা দেখাই, সেটা শুধু লোকদেখানোর জন্য এবং নিজেকে বিনোদিত করার জন্য। আর দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী যে কষ্টে আছে, তার তুলনায় তারা অনেক ভালো আছে। এ বোধটাও শহরের মানুষকে তাদের শত অলীক আক্ষেপের জীবনে কিছুটা হলেও সুখের সন্ধান দেয়। বাংলাদেশে হাজারো এনজিও কাজ করছে প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে। আমি শুধু ভাবি প্রতিটি এনজিও যদি মাত্র ১০০টা পরিবারের মানোন্নয়ন করত, তাহলে তো দারিদ্র্য কবেই দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আর সরকারি বাজেটের অংশ তো ব্যয় হয় শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর তাদের আত্মীয়স্বজনের মানোন্নয়নে। সেখানে প্রকৃত গরিব মানুষ জায়গা পায় না।

নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম অন্তরের তাগিদে এই সিনেমা বানিয়েছেন। হল না পেয়ে তাই আক্ষেপ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কেন এ রকম একটি বিকল্প “ফিল্ম সেন্টার” গড়ে উঠল না? যেখানে সব রকম সিনেমা প্রদর্শনের সুযোগ থাকবে। ভিন্ন গল্পের সিনেমা হলেই আমাদের হলমালিকরা নিতে চান না। সরকারও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করেনি। তাহলে ভিন্ন গল্পের নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা নির্মাণ করে লাভ কী? সব কি শুধু নাচ-গানে...সরকারের ভাবা উচিত।’ নির্মাতাকে কুড়ি বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে এই সিনেমা বানানোর জন্য। কারণ, তিনি কোনো প্রযোজক পাননি। ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবীশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমী ইসলাম, সামিয়া আকতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

শহরের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের এমন আকাশ–পাতাল তফাত বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আছে কি না, আমার জানা নেই। বাংলাদেশের সমাজের এই শ্রেণিবৈষম্য আশু দূর হবে, এমনটাও আমি আশা করি না। কিন্তু অন্ততপক্ষে নদীমাতৃক দেশের বাসিন্দা হিসেবে ‘ভাটির দেশের মাটির ছবি’ আমরা দেখতে যেতেই পারি। প্রবাসী হওয়ার পর আমি একটা বিষয় হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি, সেটা হলো উন্নত দেশগুলোর জীবনযাপনে একটা বড় খুঁত আছে। সেটা হলো জীবনযাপনকে এরা সহজ করতে গিয়ে জীবন থেকে সব ধরনের ‘ঋণাত্মক’ উপকরণ প্রায় দূর করে দিয়েছে। ফলে তাদের জীবনযাপনে চোখে পড়ার মতো কোনো বৈচিত্র্য নেই। তাদের জীবন মোটামুটি একঘেয়ে। তাই হয়তোবা উন্নত দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের শহুরে জনগোষ্ঠীর নিজেদের জীবনযাপনের বাইরে গিয়ে অভাব–অনটনের মতো বিষয়গুলো চাক্ষুষ দেখার সুযোগ আছে। ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটা তাদের আরও একবার সেই সুযোগ করে দিয়েছে।

বাংলা চলচ্চিত্রে এখন সুবাতাস বইছে। ‘হাওয়া’, ‘পরান’–এর পর ‘দামাল’–এর মতো চমৎকার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেগুলো কাজের গুণে বা প্রচারের গুণে আবার কখনো অভিনীত অভিনেতা–অভিনেত্রীদের গ্ল্যামারের গুণে উতরে যাচ্ছে। হল পাচ্ছে। দিনের পর দিন শো চলছে। এমনকি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শো চলছে, যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। তারই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়াতেও ‘হাওয়া’ এবং ‘পরান’ মুক্তি পেয়েছিল এবং দর্শকদের চাপের কারণে নির্দিষ্ট শোর বাইরেও শোর ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। দামালের জন্যও হল বুকিং করা হয়েছে। আশা করেছিলাম ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটাও মুক্তি পাবে। কিন্তু এখানেও দেশের মতোই অবস্থা। দর্শক পাবে না বলে শোর ব্যবস্থা হবে না।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

শিকড় ছাড়া যেমন একটা গাছের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি মানুষের তার পূর্বপুরুষ বা জন্মভূমির সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া সে ভাসমান উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। প্রবাসে আসার পর দেখেছি এরা কীভাবে নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাখে। তারা উত্তরাধিকারসূত্রে পারিবারিকভাবেই এই শিক্ষাটা পায়। তাই এখানে শহুরে এবং গ্রামীণ জীবনযাপনে তেমন একটা তফাত চোখে পড়ে না। কিন্তু আমাদের শহুরে স্বার্থপর জনগোষ্ঠী দিন দিন আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভালোর জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। কিন্তু সেই একই দেশের অনেক মানুষ এক বেলা একমুঠো অন্নের আশায় কতই না সংগ্রাম করছে। এভাবে নিজেদের তারা কত দিন ভালো রাখতে পারবে, আমার জানা নেই। কিন্তু আমি একটা বিষয় জানি, ‘যমালয় পুড়লে দেবালয়ও বাদ পড়বে না’।  

তাই আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আপনি যে দেশেই থাকেন না কেন, এটা খুব সহজেই করতে পারেন। দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকেন, ছুটির সময়টা আপনি গ্রামে বেড়াতে যেতে পারেন। একসময় তো গরমের ছুটি দেওয়া হতো গ্রামে যাওয়ার জন্য এবং ফলফলাদি খাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। কিন্তু ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার মতো চলচ্চিত্রগুলো আমাদের শহরে থেকেই গ্রামের সঙ্গে শিকড়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের তাই এই সিনেমাকে উৎসাহিত করা উচিত এবং সপরিবার দেখা উচিত। তাহলেই হয়তোবা হলমালিকেরা সেটা চালাতে আগ্রহী হবেন।
আমরা শান্তির খোঁজে দেশ–বিদেশ ঘুরে বেড়াই, কিন্তু দুপা ফেলে গ্রামের স্নিগ্ধতার পরশ নিই না। প্রবাসীরা দেশের দুরবস্থা নিয়ে নিত্য হাপিত্যেশ করেন কিন্তু ছুটির সময় দেশে স্বজনদের কাছে ফিরে যান না। তার চেয়ে ঘুরতে যান আরও আরও উন্নত দেশে। তাঁদের এই ছুঁচোর দৌড়ের কোনো শেষ নেই। এমনকি দেশের মিডিয়া এবং চলচ্চিত্র নিয়েও প্রবাসীরা নিয়মিত চায়ের কাপে ঝড় তোলেন কিন্তু যখন বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়, তখন আবার দর্শক খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ইদানীং এ ধ্যানধারণায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। এটা খুবই ভালো খবর। আশা করি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রদর্শনীর সুযোগ পাবে অচিরেই। সেই সুদিনের আশায় রইলাম।