স্যামসাং দুর্গে এক দিন

স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশন্সের সদর দপ্তরে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাংকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার তেমন কিছু নেই। বর্তমানে স্যামসাং করপোরেটের আয়ের ৭০ শতাংশ স্যামসাং ইলেকট্রনিকস থেকে এলেও এই শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবসার পত্তন হয়েছিল শুকনা মাছের কারবার দিয়ে। যদিও আমাদের বাঙালি সমাজে মাছ ব্যবসায়ী কিংবা মৎস্যজীবীদের খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না। আর শুঁটকি ব্যবসায়ী হলে তো কথাই নেই।

স্যামসাং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লি বিয়ং চল পরবর্তীকালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বন্দরনগরী বুসানে চিনি শোধনাগার স্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে দেগুতে গড়ে তোলেন পশমি সুতার কারখানা, যা এখন পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপের বৃহত্তম।

কোরিয়ান ভাষায় স্যামসাং অর্থ তিন তারা—থ্রিস্টার্স। আরেকটু কথা বাড়াই—কোরিয়ান ভাষাতত্ত্বে তিনের অন্তর্নিহিত অর্থ আছে। তিন হচ্ছে শক্তিমত্তা ও বৃহতের প্রতীক।

স্যামসাং টেলিযোগাযোগ শিল্পে প্রবেশ করে ১৯৮০ সালে। তখন তাদের প্রধান পণ্য ছিল সুইচবোর্ড। পরবর্তীকালে উৎপাদনধারায় যুক্ত হয় টেলিফোন ফ্যাক্স ও মুঠোফোন। স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনস এ পর্যন্ত ৮০০ মিলিয়নের অধিক মুঠোফোন উৎপাদন করেছে, যা এ গ্রহের বর্তমান জনসংখ্যার এক-দশমাংশ।

স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনসের সদর দপ্তর সিউলের নিকটবর্তী সুওন শহরে অবস্থিত। সুওন দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র প্রাচীন দুর্গনগরী ও গিওনগি প্রদেশের রাজধানী।

ত্রিশের দশকের প্রথম টেলিভিশন এখনো সচল
ছবি: সংগৃহীত

স্যামসাংয়ের এই সদর দপ্তর যেন দুর্গের ভেতর আরেক দুর্গ। নিরাপত্তা যে কত স্তরের, তা বলাই বাহুল্য। তবে কোরিয়ায় কাইস্টের বিদ্যার্থীরা একটু বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, তাই আমার স্যামসাং সদর দপ্তর এবং গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্র পরিদর্শনে তেমন বেগ পেতে হয়নি। এ ছাড়া কাইস্টের সঙ্গে স্যামসাংয়ের সরাসরি কর্মযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ছেলেদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-ধনী-গরিবনির্বিশেষে ১৮ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। তবে কাইস্টের শিক্ষার্থীরা এ প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকে।

সুওন, দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র প্রাচীন দুর্গনগরী
ছবি: সংগৃহীত

স্যামসাংয়ের গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্রে একটি ইনোভেশন জাদুঘর আছে। সেখানে বিভিন্ন প্রযুক্তির উৎকর্ষের ধাপগুলো বাস্তবিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ত্রিশের দশকের প্রথম টেলিভিশন সেখানে এখনো সচল রয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় আমি পৃথিবীর প্রথম মুঠোফোন দিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সম্ভাব্য প্রযুক্তিগুলোও অবলোকন করার সুযোগ আছে এই প্রদর্শনীতে। সেখানে যাওয়ার পর কয়েক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম এক ভিনগ্রহে,যেখানে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত হয় চোখের ইশারায়।

*লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পরিচালক, বার্ড; বর্তমানে প্রেষণে দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষারত