টোকিওতে সরস্বতী পূজা উদ্‌যাপিত

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে টোকিওতে উদ্‌যাপিত হয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। ২ ফেব্রুয়ারি টোকিও শহরের কাৎসুশিকা ওয়ার্ডের শিনকোইওয়া ডিস্ট্রিক্ট সেন্টারে স্থাপিত অস্থায়ী মণ্ডপে এ পূজার আয়োজন করা হয়। জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুদের সংগঠন সর্বজনীন পূজা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে টোকিওতে এ পূজার আয়োজন করে আসছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততা ও ব্যয়বহুল দেশ জাপানে স্থায়ী মন্দিরের অভাবে পূজা কমিটি প্রতিবছর সাধারণত পূজার সন্নিকটে কোনো এক রবিবারে টোকিও শহরে পাবলিক কোনো হল ভাড়া করে দুর্গাপূজা ও সরস্বতী পূজার আয়োজন করে থাকে।

সকালে মণ্ডপে এসে পূজার প্রস্তুতি শুরু করেন পুরোহিত মানিক চক্রবর্তী। এর পর একে একে মণ্ডপে আসতে শুরু করেন পূজারি ও অতিথিরা। কনকনে শীতের মধ্যেও দূর-দূরান্ত থেকে দেড় শতাধিক পূজারি জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতী মায়ের বাণী অর্চনা ও অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছুটে আসেন। পূজার এ অনুষ্ঠানে কয়েকজন ছোট শিশুর হাতেখড়ি দেওয়া হয়। আবহমান বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানে হিন্দুধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের কিছুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও কিছু জাপানিও উপস্থিত ছিলেন।

পূজার অঞ্জলি শেষে উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। প্রতিবছর পূজা কমিটি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রসাদ তৈরি করে থাকে। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই প্রসাদের জন্য। এরপর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা পর্বে শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ, সাংগঠনিক সম্পাদক তপন ঘোষ ও কোষাধ্যক্ষ ড. অতনু সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টোকিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোরারজী দেশাই বর্মণ। প্রধান অতিথি মোরারজী দেশাই বর্মণ পূজা কমিটিকে রাষ্ট্রদূত দাউদ আলীর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং এই প্রবাসে প্রতিবছর সরস্বতী পূজা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। পরিশেষে, পূজা কমিটির উপদেষ্টা বিপ্লব সাহা পূজায় আগত ভক্তদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আলোচনা পর্বের পরিসমাপ্তি টানেন।

এরপর অনুষ্ঠানে আগত স্থানীয় শিল্পীরা ও ছোট ছোট প্রবাসী শিশুরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এ অনুষ্ঠানে ভাগ্যশ্রী পাল, তুষ্টি বণিক, মৃন্ময়ী পাল শ্রেয়া, আরিশা সাহা, শ্রেয়সী বাড়ৈ, তিয়াশা বণিক, তানিশা বৈদ্য, আরিয়ানা সাহা নাচ পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। এর বাইরে শেতাক্ষী সমাদ্দার দেবী সরস্বতীর মন্ত্রপাঠ, আংকা বণিক ও তনুতা ঘোষ বাংলা গান, রিংকা বণিক ছড়া আবৃত্তি করে। তারপর বড়দের অনুষ্ঠানে পপি ঘোষ, পলি সরকার, অনামিকা দাশ ও তাঁদের দল ভক্তিমূলক গান ও কীর্তন পরিবেশন করেন। এরপর সন্ধ্যা-আরতি ও মিষ্টিমুখের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের পূজার সব আয়োজন।

প্রচণ্ড ব্যয়বহুল ও ব্যস্ততার এ শহরে প্রতিবছর সুন্দরভাবে পূজার এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য পূজার কর্মকর্তা ও একদল স্বেচ্ছাসেবক প্রচুর পরিশ্রম করে থাকেন। পূজা কমিটির প্রচেষ্টাকে ও সুন্দর-সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিরা পূজা কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।