কানাডীয় যেভাবে ঈদ

ঈদের নামাজ শেষে পরিবারের সঙ্গে লেখক

ঈদ মানেই যেন পরিবার–পরিজন নিয়ে মেতে ওঠার আনন্দ। আমাদের প্রবাসের ঈদগুলো একদম অন্য রকম। বাংলাদেশে অথবা আরব বিশ্বে রোজা আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে উৎসবের একটা আমেজ থাকে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাতে উৎসবের‍ আমেজ একদম অন‍্য ধাঁচের। আসুন, আপনাদের সঙ্গে আজ শেয়ার করি, কানাডাতে আমরা কীভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করি।

ঈদের দিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে তৈরি হয়ে আমরা ঈদের জামাতে চলে যাই। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন। প্রবাসে ঈদের এই নামাজে ঈদের পরিপূর্ণ আমেজ পাওয়া যায়। আমার শহরের নাম সাসকাটুন। এখানে প্রতিবছর দুই-তিন হাজার মুসলিম ঈদের নামাজ আদায় করেন পেরিল‍্যানড পার্কে। এত ভিড় হয় যে গাড়ির পার্কিং পাওয়া দায়। সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি পার্কিং এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রচুর পুলিশ থাকে। এই দিনে ঈদের জামাত সারা বিশ্বের মুসলিমদের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। ঈদের নামাজ শেষে বাংলাদেশিরা একে অন‍্যের সঙ্গে কোলাকুলিতে মেতে ওঠেন। ছোট ছোট বাচ্চারা ক‍্যানডি ব‍্যাগ পায় মসজিদ কমিটি থেকে।

নামাজ শেষে শুরু হয় দাওয়াতের পালা। এখানকার ঈদের দাওয়াতটাও একটু ভিন্ন রকমের। সবাই একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে দেন দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করার জন‍্য, যেমন আমি। আমার বাসায় রাতে ডিনারের দাওয়াত দিই, অন‍্য কোনো ভাবি অথবা আপু হয়তো দুপুরে দাওয়াত দেবেন। তাহলে হচ্ছে কি, সবাই সবার বাসায় বেড়ানোর সুযোগটা পায়।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ঈদের দাওয়াতে সব বাংলাদেশির বাসায় পোলাও–কোরমার সঙ্গে একটা আইটেম খুব কমন থাকবে, সেটা হচ্ছে হোম মেড বাংলাদেশি মিষ্টি দই। যাদের আত্মীয়স্বজন (ভাইবোন) আছে, তারা ঈদের সময় ছুটি নিয়ে ভাই বোনের কাছে চলে যায়। যাদের আত্মীয়স্বজন কাছে নেই, তাদের কাছে বন্ধুবান্ধবই আত্মীয়ের চেয়ে বেশি আপন হয়ে যায়।

আমাদের রোজা যদি গরমে (সামার) হয়, তাহলে রোজা হয় ১৮-২০ ঘণ্টা। এবার আমাদের রোজা পড়েছে শীতে (উইন্টার)। আমাদের রোজা হচ্ছে ১৪ ঘণ্টা। এসব দেশে ঈদের সময় ছুটি নেওয়াটা মাঝেমধ্যে কষ্টসাধ্য হয়ে যায় যদি ঈদ সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে হয়। এসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা মনেপ্রাণে চায়, শনি অথবা রোববারে ঈদ হোক। তাহলে ছুটি নিতে সুবিধা হয়। এখানে ঈদে সরকারি ছুটি থাকে না। সপ্তাহের মধ্যে ঈদ হলে বাচ্চাদের স্কুলেও আগে বলে অ্যাবসেনট দিতে হয়।

সামারে ঈদ হলে অনেক সময় ভ্যাকেশন নিয়ে বিভিন্ন প্রভিন্সে ঘুরতে চলে যায় অনেকে। ঈদ মানেই আমাদের এখানে বাংলাদেশিদের ছোট্ট একটা মিলনমেলা। আমাদের ঈদ উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিই আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি কালচার। সবার ঈদ হোক নিরাপদ। সবার জন‍্য ঈদের শুভেচ্ছা, শুভকামনা রইল।

*লেখক: তামান্না মহুয়া, প্রোগ্রাম অ্যাকসেস কো–অর্ডিনেটর, সাস্কাচুয়ান হেল্থ রিজিওন, সাস্কাটুন, কানাডা