আইরিন
শীত জেঁকে বসেছে।
প্রায় আড়াই মাস হতে চলল, ঠান্ডা কমার লক্ষণ নেই। রাস্তাঘাট বাড়ির আঙিনা সাদা তুষারে ছেয়ে গেছে। কোনো কোনো দিন সূর্য স্বল্প সময়ের জন্য দেখা দিলেও বাকিটা সময় ঘোলাটে আকাশ। স্নোরোলারগুলো রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়ে গেলেও পরক্ষণেই তুষারে সব ঢেকে যাচ্ছে। গাড়িঘোড়া রেল বাস কোনো কিছুই ঠিক ও সময় মতো চলছে না। তুষার ঝড় অনেক সময় পথচারিদেরও থামিয়ে দিচ্ছে। পিচ্ছিল বরফে পা পিছলে পরে যাচ্ছেন অনেকে, আবার কেউ কেউ পড়ে যেতে যেতে সামলে নিচ্ছেন। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গত ২০–২৫ বছরেও এমন ঠান্ডা জাকিয়ে বসেনি শহরটিতে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ১৭–১৮ এর নিচে নেমে গেছে।
এমন সময় হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকে আইরিন।
গরম জামা সুয়েটার শীতের ওভারকোট গায়ে থাকলেও শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হবারই কথা, বাসস্ট্যান্ড ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও বাস আসিনি। বরফের ভেতর কোথাও পিছলে গেছে। আজ চাকরির ইন্টারভিউ ছিল, যেতে পারেনি। ফিরে এসেছে। ওভারকোট ঝাঁকিয়ে স্নো ফেলে আইরিন। মাথার সোনালি চুল স্নোতে ছেয়ে গেছে। ঝাঁকি দিয়ে দুই পায়ের বুট থেকে স্নো ফেলে মাথার চুল ঝেড়ে নেয় আইরিন। পা দুটি ঠান্ডায় জমে গেছে, কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে বলে, ‘তুমি কি ঘরে?’ রান্না ঘরে বসে পিটার কার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে। ‘এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে?’ মোবাইল রেখে বলে পিটার। কিছু না বলে আইরিন চুলার ওপর কফির কেটলি চাপিয়ে দেয়। গরম কফি প্রয়োজন। আইরিন জানে কার সঙ্গে কথা বলছিলো পিটার। ইদানীং বিষয়টা বেড়ে গেছে। কোনো কোনো দিন রাতেও ফেরে না। ‘কী, কিছু বললে না?’ জানতে চায় পিটার। ‘ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারিনি, বাস কোথাও ঝড়ো হাওয়ায় পিছলে পরে গেছে, আসেনি। তাই ফিরে এসেছি।’
‘তোমার ভেতর কোনো চেষ্টাই নেই।’
পিটারের কথা শুনে আহত হয় আইরিন, কেটলির কফি ছিটকে পড়ে মেঝেয়। ভেবেছিলো পিটার হয়তো সমবেদনা জানাবে। ‘তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে’, বলে পিটার টয়লেটে যায়। ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে আইরিন। পিটারের চোখমুখে কঠিন বলিরেখা, কফিতে চুমুক দিতেও ভুলে যায় আইরিন। ‘আমার কেন জানি মনে হয়, আমরা দুজন দুই মেরুর’, টয়লেট থেকে ফিরে বলে পিটার। আইরিন চমকে উঠে, পিটারের ব্যাখ্যাটা শুনতে চায়। ইদানীং পিটারের ভেতর পরিবর্তন দেখতে পায়। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে উচ্চস্বরে কথা বলে। জুলিয়া নামের এক মেয়ের ভাবনায় বিভোর থাকে। ‘এভাবে চলে কি লাভ? তারচেয়ে ব্রেকাপ হয়ে যাওয়া ভালো।’ নিজের কান দুটোকে বিশ্বাস করতে পারে না আইরিন। ছোটখাট অমিল শুধরে নেওয়া যায়। তাই বলে ব্রেকআপ? কান্নায় ভেঙে পড়ে আইরিন।
দৌড়ে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ে।
কান্না বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসে। পিটার চলে গেলে কীভাবে চলবে? সে তো অনেকটুকু পিটারের ওপর নির্ভশীল। ভাবতে ভাবতে শিরিনকে টেলিফোন করে। আইরিনের বাল্যবন্ধু শিরিন, টেলিফোনের ওপার থেকে কান্নার শব্দ ছাড়া কিছু শুনতে না পেয়ে অপেক্ষা করে শিরিন। গলায় জমে থাকা দুঃখে কিছু বলতে পারে না। অবশেষে নিজেকে সামলে নিয়ে খুলে বলে আইরিন। টেলিফোনের ওপার থেকে বিষয়টা অনুধাবন করে শিরিন। বলে, ‘কান্না শেষ কর, পিটারের কাছে এর কোন মূল্য নেই। আমার চাচার বাল্টিক সাগরের তীরে ফোরো দ্বীপে একটি কটেজ আছে। কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিয়ে ওখানে চলে যাও। জানালা খুললেই সাগর, মন ভালো হয়ে যাবে। চাচাকে জানিয়ে আবার টেলিফোন দিচ্ছি। এর মধ্যে তৈরি হয়ে নাও।’
শিরিনের কথা শুনে আশ্বস্ত হয় আইরিন।
পিটার থেকে দূরে যাওয়াই ভালো। বিচ্ছেদ হয়ে যাবে ভাবেনি। আলমিরার পাশে থাকা বড় ব্যাগটা টেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে নেয়। নিজেকে শক্ত করে। বাকি জীবনটা একাই কাটিয়ে দেবে। টেলিফোন ব্যাক করে শিরিন, ‘কটেজ খালিই আছে। কোন অসুবিধে হবে না। কটেজের ডান দিকের দেয়ালে ছোট একটা কাঠের পাখির বাসা পেরেক দিয়ে লাগানো। বাসার ভেতরেই চাবি আছে।’ ব্যাগ গুছিয়ে কিচেনে আসে আইরিন। পিটার মোবাইলে ব্যস্ত। পিটারের সামনে যেয়ে দাড়াঁয়, ‘আমি চলে যাচ্ছি।’ অবাক হয় পিটার, ‘কোথায়?’ ‘সে তোমার জানার প্রয়োজন নেই।’ ব্যাগ আর গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় আইরিন। স্টার্ট দেওয়ামাত্রই মৃদু গর্জে ওঠে ইঞ্জিন, পেছন দিয়ে একরাশ ধোঁয়া বেড় হয়। ধোঁয়ায় ঢাকা পরে যায় পিটারের বিস্মিত দুটি চোখ।
সব কিছু যেন দ্রুতই ঘটে গেল।
পৃথিবীতে কিছু ঘটনা দ্রুত ঘটে, যার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। আইরিনও ভেবে পায় না এত দ্রুত তাকে পথে নামতে হবে। প্রথম চাকরির পয়সা জমিয়ে গাড়িটা কিনেছিল। তার চাকরির ইন্টারভিউ আছে জেনেও সকালে পিটার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়, তারপর তো বৈরী আবহাওয়ায় ইন্টারভিউয়ে যেতেই পারেনি। কটেজে যাওয়ার পথে ছোটখাটো বাজার করে নিতে হবে। সমুদ্রের ধারে কটেজ হলেও নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটার দোকান কটেজ হতে এক কিলোমিটার দূরে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। দ্বীপটি খুব ছোট, মাত্র পাঁচ শ লোকের বাস।
একটানা চার শ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে দ্বীপে পৌছায় আইরিন।
সন্ধ্যা নেমে এলেও সূর্যের শেষ আলো আকাশে। শীতের প্রকোপ বেশ কম, হয়তো সমুদ্রের ধারে বলেই। তবু হালকা সাদা স্নোতে ঢাকা রাস্তা। সূর্যের শেষ আলো স্নো ওপর প্রতিফলিত হয়ে চিক চিক করছে। আইরিন ধীরে ধীরে কটেজের পেছনে গাড়ি রেখে বাল্টিক সাগরের তীরে দাঁড়ায়। জল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা লাইমস্টোনের বড় বড় পাথরগুলো হালকা স্নোয় ঢেকে গেছে। জলের ওপর স্নোর প্রলেপ ঢেউয়ের তালে নাচছে। একা থাকার জায়গা, নিজেকে চেনার জায়গা। মনটা হালকা হলেই নতুন কোন চাকরি নিয়ে চলে যাবে অথবা এখানেই থেকে যাবে। জায়গাটা একদম ফাঁকা। সাগরের ঢেউ তীরে আছড়ে পরা ছাড়া কোনো শব্দ নেই। সাগরের তীর ধরে দিগন্ত বিস্তৃত পথ।
চাবি দিয়ে কটেজের দরজা খোলে আইরিন।
ভেতরটা বেশ গরম। আলো জ্বেলে দেয়। ছোট হলেও সাজানো–গোছোনো। দুটি ঘরে দুটি বেড। তবে কোনো চাদর–বালিশ নেই। যাঁরা আসেন, তাঁরা হয়তো ওগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন। একপাশে লম্বা কিচেন, পাশেই চেয়ার–টেবিল–সোফা পাতা। কফি আর স্যান্ডউইচ খেয়ে শুয়ে পড়ে।
একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙে।
ঘুম ভাঙে ঢেউয়ের শব্দে। ঘুমের ঘোরে মনে হয়েছিল ঘরে ভেতরেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জ্যাকেট গায়ে বেরিয়ে আসে আইরিন। বেশ আলো, তবে ঠান্ডা। দোকানে যেতে হবে, কয়েকটা জিনিস কিনতে হবে নিদেনপক্ষে বিছানার চাদর আর বালিশ। গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর লক্ষ করে রাস্তার বাঁ দিকে প্রশস্ত জায়গা নিয়ে এক গির্জা। দ্বীপের একমাত্র গির্জা। চারপাশে গাড়ি রাখার জায়গা। বেশ কয়েকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি পার্ক করে আইরিন। ছোটবেলায় মি–বাবার হাত ধরে র্গিজায় যাওয়া হতো। মা মারা যাবার পর বাবা চলে গেলেন স্পেন। আর ফিরে আসেননি। বাবার সঙ্গে কেমন করে যেন যোগাযোগটা হারিয়ে গেছে। নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়। গাড়ি থেকে নেমে আইরিন র্গিজার ভেতরে গেল না। র্গিজার চত্বরের বাইরে এক ছোট কফি শপ। ওখানেই বসে। ক্রিমরোল ও কফি দিয়ে নাস্তা সেরে নেয়। মোবাইল চেক করে, না কারও মেসেজ বা কল আসেনি।
কফি শপ থেকে বের হয়ে পেট্রলপাম্প থেকে গাড়িতে পেট্রল ভরে নেয়। দোকান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কিনে সমুদ্রের ধার দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে দেয়। পিচঢালা আঁকাবাঁকা কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রাস্তা। রাস্তার পাশে পাথরের বেঞ্চ, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা। দু–একটি গাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখা গেল না। এ সময় এই দিকটায় পর্যটক নেই বললেই চলে, তবে সামারের কথা আলাদা। সারা দিন দ্বীপে ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় কটেজে ফেরে আইরিন। দরজা খুলতেই চাঁদের আলো ঝাপিয়ে পরে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। শীতের চাঁদ একটু ঘোলাটে। ক্লান্ত শরীরে সোফাতেই ঘুমিয়ে পরে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে কে যেন চোখের উপর তীব্র আলো ফেললো। পরক্ষণেই সরে যায় আলো। কিছু একটা থামার শব্দ হয়। ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারে না। হয়তো কটেজের পেছনে পাইন গাছের শব্দ। কম্বলটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নেয়। দরজায় খট খট শব্দ। বাতাশের শব্দ কি? কিচেনের দরজায় শব্দ হয়। বাইরে থেকে কেউ যেন ডাকছে, ‘ভেতরে কেউ কি আছেন?’ উঠে দাঁড়ায় আইরিন। কে ডাকে? এত রাতে কারও আসার কথা নয়। ‘ভেতরে কেউ কি আছেন? কারো গলা শুনতে পায় আইরিন। চেনা পরিচিত স্বর নয়। কেউ কি বিপদে পড়েছে শীতের রাতে? দরজা খোলে আইরিন। দমকা ঠান্ডা হাওয়া ঘরে ঢোকে। বাইরে চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে একজন। আবছা আলোয় তেমন কিছু দেখা যায় না তবে ছেলেটির কাধে একটি ব্যাগ, কাঁপছে শীতে।
তুমি কে?
প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে ছেলেটি বলে, ‘একটু সর, শীতে জমে যাচ্ছি।’ ঘরে এসে কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে প্রশ্ন করে, ‘তুমি কে? তোমারতো এখানে থাকার কথা নয়?’ কটেজ ভাড়া নিয়েছি তিন দিনের জন্য, আসতে আসতেই একদিন পার হয়ে গেল। তুমি কোত্থেকে?’ অবাক হয় আইরিন, কটেজ ভাড়া নিয়েছে? কি করে হয়? ছেলেটি কটেজ বুকিং ও ভাড়া পরিশোধের কাগজপত্র দেখায়। কোনো ভুল নেই ভাড়া নিয়েছে কেয়ার টেকারের কাছ থেকে। তাহলে কি শিরিন কেয়ার টেকারকে জানায়নি? ‘তোমার কাগজপত্র ঠিকই আছে আর কোথাও একটা ভুল হয়েছে তবে এতো রাতে আমি কোথায় যাই?’ বলে আইরিন। আইরিনের সব কথা শুনে ছেলেটি বলে, ‘তোমার চাচা হয়তো কেয়ারটেকারের সঙ্গে যোগাযোগে ভুলে গেছেন। যাহোক এত রাতে তোমাকে কোথাও যেতে হবে না, যে ঘরটায় আছ, সেখানেই থাক, আমি পাশের টায় গুছিয়ে নিই। আছি আর দুটো দিন। তারপর তো তুমিই থাকবে।’ ঘরের দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরে আইরিন। ভয় পায়, কেবিনে অপরিচিত আগন্তুক আর পাশের প্রতিবেশী তিন কিলোমিটার দূরে।
ভোরে ঘুম ভাঙে।
রোদ উঠেছে, তবে হালকা পেজা তুলার মতো স্নো পড়ছে। বাতাশে স্নো উড়ে উড়ে এদিক ওদিক ছুটে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। ছেলেটির ঘরের দরজা বন্ধ। কোনো সাড়াশব্দ নেই শুধু নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া। কফি তৈরি করে আইরিন, তাক থেকে দুটি কাপ তুলে নেয়। পেয়ালার টুংটাং শব্দে উঠে ছেলেটি। দরজা খুলে অভিবাদন জানায়, ‘ঘুম ভেঙেছে?’ রাতে তো নামই জানা হয়নি, আমি অ্যালেক্স। ‘টেবিলের উপর দুই কাপ কফি নামিয়ে জানায়, আমি আইরিন। কফিতে চুমুক দেয় অ্যালেক্স, ‘চমৎকার হয়েছে, ধন্যবাদ। এক দিন দেরি হয়ে যাওয়ায় আজই কাজ শেষ করতে হবে। কাল সকালে চলে যাব। ‘কী কাজ?’ প্রশ্ন করে আইরিন। ‘এখান থেকে শুরু করে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সমুদ্রের ধারে যতগুলো লাইমস্টোনের ছোট বড় পাহাড় আছে, সবগুলো জরিপ করে স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করা। কোনো কোনো পাহাড় সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে, কোনটা তীরে বালির ওপর। আইরিন খুব মজা পায়, সেও দেখেছে অনেকগুলো ঢিবির মতো পাহাড় তীরে, অনেকগুলো জলের ভেতর।
‘স্টাডি রিপোর্ট আমার মার্স্টাস ফাইনাল থিথিসের একটি পার্ট’, বলে অ্যালেক্স।
‘ভালো কথা, তোমার তো ছুটি, চল সঙ্গে, সমুদ্রের ধারটাও জরিপ হবে, সময়ও কেটে যাবে।’ হাতে কোন কাজ নেই বলে দ্বিমত করে না আইরিন আর ওদিকটা দেখতে সে তো যেতোই। তিন কিলোমিটারজুড়ে ঢিবির মতো পাহাড়গুলো জরিপ করতে সারা দিন চলে যায়। সন্ধ্যায় কেবিনে ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরে ওঠে অ্যালেক্স। ফিরতে হবে। অনেকটা পথ।
আইরিনের রুমের দরজা লাগানো। আলতো করে টোকা দেয়। জানিয়ে যাওয়া দরকার। দরজা খুলে আইরিন, ‘তুমি তৈরি? একটু অপেক্ষা কর আসছি।’ তৈরি হয়ে বেড়িয়ে আসে আইরিন, ‘ব্রেকফাস্ট করেছ?’ মাথা নাড়ায় অ্যালেক্স। ‘করতে হবে না, একটু দূরে সিলভিস ডটার নামে একটি কফি ও কনফেকশনারির আছে। যাবার পথেই পড়বে। সদ্য তৈরি রুটি ও কফি পরিবেশন করে ওরা। ওখানেই ব্রেকফাস্ট করা যাবে।’ দুজনেই দুটি গাড়ি নিয়ে বের হয়। দোকানে প্রচুর ভিড়। ভিড় সব সময় লেগে থাকে। হয়তো এদের বিভিন্ন প্রকার রুটি ও কফি উপাদেয়। দুই কাপ কফি ও সদ্য তৈরি রুটির দুটি বড় স্যান্ডউইচ নেয় আইরিন, কার্ড দিয়ে দাম মিটিয়ে দেয়। জানালার ধারে টেবিলে বসে দুজন। কোনো কথা হয় না। খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়ায় অ্যালেক্স। যেতে হবে। অ্যালেক্স এগিয়ে গিয়ে হাগ করে আইরিনকে, ‘আবার দেখা হবে।’
‘হয়তো’ মৃদু হাসে আইরিন।
অ্যালেক্স সিঁড়ি দিয়ে নামে। স্নো পড়ছে। গাড়ি স্টার্ট নেয়। রাস্তার বাঁকে মিলিয়ে যায় অ্যালেক্স।
***সুইডিশ লেখিকা গাব্রিয়েলা উলবারের গল্পের ছায়া অবলম্বনে।