সুইডেনের লুমেলুন্ডা গুহা

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গুহাটির নাম ‘সানডং’।

সেনট্রাল ভিয়েতনামে অবস্থিত গুহাটি হঠাৎ করেই ১৯৯০ সালে আবিষ্কৃত হয়। স্থানীয় কাঠ ও গবাদিপশুর খাদ্য সংগ্রহকারী ‘হো খানহ’ বনজঙ্গলে ঘুরে কাঠ সংগ্রহ করার সময় প্রায় তিন মাইল লম্বা ও সাড়ে চার মিলিয়ন বছর পুরোনো গুহামুখ আবিষ্কার করেন। গুহাটি প্রশস্ত ও নদীসম জলধারা সমৃদ্ধ। ‘সানডং‘ গুহা আবিষ্কারের মতো হঠাৎ করে সুইডেনে আবিষ্কার হয় বৃহৎ লুমেলুন্ডা গুহা। ভিসবির উত্তরে লুমেলুন্ডা নামক স্থানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট লুমেলুন্ডা গুহাটি ‘সানডং‘ গুহার মতো বড় না হলেও এক দর্শনীয় স্থান। বছরে প্রায় এক লাখ পর্যটক গুহাটি পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গুহাটি প্রায় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার লম্বা। সুইডেনের দীর্ঘতম গুহাটি শেষ বরফ যুগের আগে তৈরি হয়েছিল।

লুমেলুন্ডা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে ছিল ১৭৩ হেক্টরজুড়ে এক জলাভূমি বা হ্রদ। মাটির গভীর পথ দিয়েই হ্রদের পানিনিষ্কাশন হয় এমন একটি আবছা ধারণা যুগ যুগ ধরেই ছিল, তবে পথটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। পথটি খুঁজে পেতে ১৯২৪ সালে এক অভিযান চালনা হলেও মেলেনি।

অবশেষে ১৯৪৮ সালে লারস ওলসন, হ্যাকানসন ও নিলসন নামে তিন কিশোর গুহার প্রবেশপথ খুঁজে পায়। গুহার সন্ধানেই তিন কিশোর পাহাড়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল, এমন সময় উঁচু থেকে একটি বড় পাথর গড়িয়ে পড়ে, উন্মোচন হয় গুহামুখ। এরপর দীর্ঘ সাত বছর ধরে তারা প্রতি রোববার ম্যাচ, মোমবাতি ও ছোট নৌকা ব্যবহার করে গুহার ভেতর ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। সৃষ্টি হয় এক ইতিহাস। হ্রদের পানিনিষ্কাশনের জন্য শেষ বরফ যুগে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হয় গুহাটি। গুহা দিয়ে হ্রদের পানি প্রবাহিত হয়ে বাল্টিক সাগরে মিলিত হয়।

গোতল্যান্ডের নিরেট প্রান্তর চুনাপাথরে গঠিত। চুনাপাথর গহ্বর গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। লুমেলুন্ডার গুহাটি এর একটি দুর্দান্ত নিদর্শন। কমপক্ষে ২০ হাজার বছর গুহার ভেতর দিয়ে পানিনিষ্কাশন ও স্থানে স্থানে পানি জমে থাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন কক্ষ।

গুহার ভেতরের তাপমাত্রার খুব একটা তারতম্য হয় না। সারা বছর প্রায় প্লাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তাই ভেতরে প্রবেশের জন্য হালকা সোয়েটার সঙ্গে থাকা ভালো। গুহার ভেতর কংক্রিটের ফ্লোরের ওপর দিয়ে হাঁটা যায়, ভেতরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরেও ওঠা যায়, তবে কোনো প্রকার ভারী বা হালকা যানবাহন ও পোষা প্রাণী সঙ্গে নেওয়া যায় না।

লুমেলুন্ডা গুহার পরিপূর্ণ ম্যাপ এখন তৈরি হয়নি, কারণ ভূতাত্ত্বিকবিদদের মতে, গুহায় এমনও কিছু স্থান আছে, যা এখনো আবিষ্কার হয়নি।

‘সানডং’ গুহা দেখা হবে কি না জানা নেই, তবে লুমেলুন্ডা গুহা দেখার উদ্দেশে যখন পৌঁছালাম তখন প্রায় দুপুর ১২টা বেজে গেছে। উঁচু পাহাড়ের মাথায় একটি কক্ষ, টিকিট কেটে দর্শনপ্রার্থীদের এখানেই অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের মতো অনেকেই অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ পর গাইড এলেন, সব বুঝিয়ে বলার পর গুহার দ্বারের সিঁড়িপথ দিয়ে আমরা গভীর নিচে নেমে এলাম। গুহায় বেশ কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়া যায়, আঁধারে আলোর ব্যবস্থা আছে। স্থানে স্থানে প্রশস্ত জায়গা। গাইড প্রশস্ত জায়গাগুলোয় দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পাশেই তরতর করে বয়ে চলেছে পানি। পানির তাপমাত্রাও আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। গুহার ওপর ঝুলে আছে হাজার শতাব্দীর পুরোনো পাথরে জমাট বাঁধা মূল্যবান পাথর, পাথরের ঘাম যার ওপর আলো ঠিকরে গুহাকে আলোকিত করছে।

গুহার শেষ মাথায় আরও একটি সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গটি পানিতে ভরা ছোট নালার মতো। ওই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করতে হলে রাবারের ডিঙি, বিশেষ পোশাক ও আলো সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। পানির ওপর বাঁধা দুটি রাবারের ডিঙি।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]